ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বদলে যেতে পারে ৫০ আসনের সীমানা

বদলে যেতে পারে ৫০ আসনের সীমানা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই ধারবাহিকতায় সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণের আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনে অর্ধশতর বেশি আসনে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছে ইসি সংশ্লিষ্টরা।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ উদ্যোগের চেয়ে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে জনসাধারণের আবেদনকে প্রাধান্য দেবে ইসি। এক্ষেত্রে আইন সংশোধনের পরেই কার্যক্রম শুরু করা হবে।

জানা যায়, গত ২০০৮ সাল থেকে ১৩০টি আসনের সীমানায় বিভিন্ন সময় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক সুবিধা, ভৌগোলিক অখণ্ডতাকেও আমলে নেয়া হয়নি। অনেক উপজেলার বাসিন্দা সংসদ সদস্য পেয়েছেন অন্য উপজেলায়। ফলে সংসদ সদস্যকে পেতে যেতে হয় এক উপজেলায়, আর প্রশাসনিক কাজে যেতে হয় আরেক উপজেলায়। এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখেই এবারের সীমানা নির্ধারণ কাজে হাত দেবে ইসি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আমাদের পরিকল্পনা বলতে, জনসাধারণ যে দরখাস্তগুলো করছে, সেগুলো একটা প্রসেসে নিষ্পত্তি করতে হবে। সেই প্রসেসে নিষ্পত্তি করতে গেলে আইন, বাস্তবতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রেখে এটাতে হাত দিতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান যে আইনটা আছ, সেটাতে সংশোধন আনতে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আইনের যে ক্লারিক্যাল মিস্টেক, সেটাতে একের জায়গায় দুই হয়ে গেছে। এটা সংশোধন হলে পরে বিষয়টি ওপেন হয়ে যাবে। এতে ডিলিমিটেশনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন এগুলো করার সুযোগ আসবে। সীমানা নির্ধারণ আইনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল বলেন, বিদ্যমান আইনে দুটি বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছে। মূলত জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। ইসি ভৌগোলিক আয়তন, অবস্থান, সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদন ইত্যাদির ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করতে চায়। দেশের জনসাধারণের শহরমুখী প্রবণতা রয়েছে। শুধু জনসংখ্যার ভিত্তিতে করলে শহরের দিকে আসনসংখ্যা বাড়বে, অন্য এলাকায় কমে যাবে। এতে সঠিক প্রতিনিধিত্ব হবে না বলে কমিশন মনে করে। এছাড়া বিদ্যমান আইনের একটি উপধারায় একটি ছাপার ভুল আছে। ইসি এটি সংশোধনের প্রস্তাব পাঠাবে।

এখন পর্যন্ত ৪১টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে ২৪৮টি আবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে আবুল ফজল বলেন, এসব নিষ্পত্তিতে সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে, তার অপেক্ষায় আছে ইসি। এ বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আছে। তাই ইসিকে অপেক্ষা করতে হবে।

সংস্কার কমিশনও সীমানা নির্ধারণ আইনের একটি খসড়া করেছে। ইসিও সংশোধন করছে। দুটির মধ্যে পার্থক্য থাকলে ইসি কোনটা গ্রহণ করবে এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল বলেন, এখানে কোনো পার্থক্য হওয়ার সুযোগ আছে বলে তারা মনে করেন না। কারণ, কতগুলো বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়।

আইন-বিধিগুলো পর্যালোচনা শেষে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, কমিশনে প্রতিবেদন আসার পর কমিশন যদি মনে করে তাহলে পাঠানো হবে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশের কারণে ইসির কাজ বিলম্বিত হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল বলেন, আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এটা ন্যাশনাল ডিমান্ড, সংস্কারটা। আমরা তো এর বাইরে নই। জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরকে সামনে রেখে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে চলছে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ। এছাড়া অন্যান্য প্রস্তুতিও এগিয়ে নিচ্ছে ইসি।

জাতীয় সংসদের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ৫০-এর বেশি আসনের সীমানা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। বিগত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ১০ আসনে পরিবর্তন আনা হলেও অধিকাংশ আসনে এখনো জটিলতা রয়েই গেছে। এর আগে ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে ড. এটিএম শামসুল হুদা কমিশন নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য শতাধিক আসনে সীমানা পরিবর্তন আনে। এর পর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল ২৫টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে গেজেট প্রকাশ করে।

এবার সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আগেই সংসদীয় আসনের সীমানা জটিলতা নিরসনে ৪১টি সংসদীয় আসন নিয়ে ২৪৮টি সীমানা সংক্রান্ত আবেদন জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। এর মধ্যে কুমিল্লা, গাইবান্ধা, পিরোজপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার কিছু আসন নিয়ে বেশি আবেদন এসেছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ভৌগোলিক আয়তন, অবস্থা ও অবস্থান এবং সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা হবে। আমরা জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন-২০২১ নিয়ে আলোচনা করেছি। জানতে পেরেছি বর্তমান আইনে দুটি বিষয় মূলত সমস্যা সৃষ্টি করছে। একটি হলো- জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা যেটা প্রস্তাব করতে চাচ্ছি, সেটি হলো ভৌগোলিক আয়তন, অবস্থা ও অবস্থান এবং সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণের ব্যবস্থা করা। তিনি আরও বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করব।

কুমিল্লা-৯ ও কুমিল্লা-১২ আসন পুনর্বহাল চেয়েছে কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চ। এ ক্ষেত্রে ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়ার দাবি জানিয়েছে সামাজিক সংগঠনটি। গাইবান্ধা-৩ আসন তথা সাদুল্যাপুর উপজেলা এলাকাকে একক আসন করার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। দোহার উপজেলা ঢাকা-১ ও নবাবগঞ্জ উপজেলা ঢাকা-২ আসন পুনর্বহাল করার দাবি এসেছে ইসিতে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অনেক জেলার আসনে জনসংখ্যার ভারসাম্য নেই। কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ জেলায় রয়েছে ১১টি করে সংসদীয় আসন। কুমিল্লার জনসংখ্যা ৫৩ লাখের বেশি। ময়মনসিংহের জনসংখ্যা ৫১ লাখের বেশি। ৩৬ লাখ জনসংখ্যার টাঙ্গাইলে আছে আটটি আসন। অন্যদিকে গাজীপুরে ৩৪ লাখের বেশি এবং নারায়ণগঞ্জে ২৯ লাখের বেশি জনসংখ্যা থাকলেও উভয় জেলায় সংসদীয় আসন পাঁচটি করে। একইভাবে চুয়াডাঙ্গায় ১১ লাখের বেশি জনসংখ্যায় আসন রয়েছে দুটি।

দেখা গেছে, পঞ্চগড়-১ আসনে ভোটার ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৩ জন। গাজীপুর-১ আসনে ভোটার ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫২ জন। গাজীপুর-২ আসনে ভোটার ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৬ জন। কুমিল্লা-২ আসনে ভোটার ২ লাখ ৮২ হাজার ৬২২ জন। কুমিল্লা-১০ আসনে ভোটার ৬ লাখ ২১ হাজার ৯২২ জন। কুমিল্লা-১১ আসনে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৫ জন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত