ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আগে হাসিনার বিচার, পরে ভোট

স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়ে এনসিপির সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু
আগে হাসিনার বিচার, পরে ভোট

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সম্প্রতি এই রাজনৈতিক দলটির আত্মপ্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকার রায়েরবাজারে অভ্যুত্থানের সময় শহিদ হওয়া ছাত্র-জনতার কবর জিয়ারত ও সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্র-জনতা হত্যার দায় হিসেবে খুব দ্রুতই শেখ হাসিনার দৃশ্যমান বিচার দেখতে চায় বলে জানিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। এদিকে, যত দিন না পর্যন্ত খুনি হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে দেখছি, তত দিন যেন কেউ ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপি মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।

নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে সংগঠিত গণহত্যা, শেখ হাসিনা সরকারের ফ্যাসিবাদী দমন-পীড়ন নেমেছিল ছাত্র-জনতার ওপর, পুরো পৃথিবী তার সাক্ষী। আমরা অবিলম্বে দ্রুত সময়ের মধ্যে তার (শেখ হাসিনা) বিচার কার্যক্রম দেখতে চাই, দৃশ্যমান বিচার চাই। এই বিচারের মধ্যদিয়ে যারা আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন, আত্মত্যাগ করেছেন, অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব। তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব বিচারের মধ্যদিয়ে। তিনি বলেন, যেই ফ্যাসিজম সংগঠিত হয়েছিল, স্বৈরাচার সংগঠিত হয়েছিল, এই বিচারের মধ্যদিয়ে নিশ্চিত করতে হবে সেটি যেন বাংলাদেশে ফিরতে না পারে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পুরো পৃথিবীতে যেন সংগঠিত হতে না পারে, এই বিচার পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে নিদর্শন হিসেবে থাকা উচিত। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন বিচার দৃশ্যমান হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই আন্দোলনে শহিদদের কবর জিয়ারত করেছি, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছি। আমরা সবাই জানি, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে স্বৈরাচারী-ফ্যাসিবাদীর বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল। সেখানে জীবন দিয়েছেন শত শত ছাত্র, তরুণ, শ্রমিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

নাহিদ আরও বলেন, যেই আকাঙ্ক্ষা থেকে আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিলাম, সেই আকাঙ্ক্ষা যেন সঠিকভাবে ধারণ করতে পারি, সেই জায়গা থেকে আমরা আমাদের কার্যক্রম শুরু করছি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘শখ হাসিনার বিচার হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের কথা যেন কেউ মুখেও না নেয়। খুনি হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে না দেখা পর্যন্ত এই বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা রাজপথে ছিলাম। আমার যে ভাইয়েরা রাজপথে জীবন দিয়েছে, যে মায়েদের চোখ দিয়ে এখনও কান্না ঝরছে, পানি পড়ছে আমরা যেন মরার আগে অন্তত খুনি হাসিনার বিচারটা দেখে মরতে পারি। আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মায়েদের পাশে থাকার সর্বোচ্চটুকু চেষ্টা করবো। খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে, সে বিচারের মঞ্চে দাঁড়াবে, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াবে।’ দলটির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সরকার ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর এসেছে। তাদের মনে রাখতে হবে বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে পুরো প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষভাবে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

কবর জিয়ারত ও দোয়ার সময় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদসহ নতুন দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। এরপর ২১৬ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে দলটি। কমিটিতে বাম ও ডানপন্থি সাবেক ছাত্রনেতাসহ বিভিন্ন মতাদর্শের ব্যক্তিরা স্থান পেয়েছেন। ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা মানুষ ও দলিত-হরিজন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও এ দলের কমিটিতে রয়েছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত