ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হামাসের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের গোপন বৈঠক

হামাসের সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের গোপন বৈঠক

ইসরায়েলকে বাদ দিয়ে গাজা উপত্যকায় আটক মার্কিন বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি যুদ্ধের অবসানের জন্য একটি বৃহত্তর চুক্তির লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করছে। হোয়াইট হাউস স্বীকার করেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘বন্দিবিষয়ক দূত’ অ্যাডাম বোহেলার কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস বলেছে, হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই আলোচনা ‘অভূতপূর্ব’ ঘটনা। কারণ, দেশটি এর আগে কখনও হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসেনি। ১৯৯৭ সালে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী দলটিকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তকমা দিয়েছিল মার্কিন সরকার। খবরে বলা হয়, এই আলোচনার লক্ষ্য হলো হামাসের হাতে বন্দি মার্কিন নাগরিকদের মুক্ত করা।

তাছাড়া, দীর্ঘ যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে এক্সিওস। আলোচনার লক্ষ্য হলো- সব বন্দিকে মুক্ত করা এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র এক্সিওসকে জানিয়েছে, আলোচনা চললেও হামাস ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো ধরনের চুক্তি এখনও হয়নি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের মঙ্গলবার কাতারে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি তার সফর বাতিল করেছেন। এক্সিওস জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন গাজা নিয়ে যে পথে এগোচ্ছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এই পথে অগ্রসর হয়নি। তাছাড়া, ট্রাম্পের নিজের বক্তব্য থেকেও এটি আলাদা। কারণ, তিনি কয়েকদিন আগে হুমকি দিয়েছিলেন হামাসের জন্য ‘নরকের দরজা খুলে’ দেবেন এবং গাজা দখল করবেন। কিন্তু এখন তার প্রশাসন আড়ালে আলোচনা চালাচ্ছে। হামাসের কাছে এখনও ৫৯ বন্দি রয়েছেন। যার মধ্যে ৩৫ জনই মারা গেছেন বলে ধারণা ইসরায়েলের। এই ৫৯ বন্দির মধ্যে একমাত্র মার্কিন জীবিত বন্দি হলেন ২১ বছর বয়সী ইডান-আলেক্সান্ডার। তাকে মুক্ত করতেই মূলত আলোচনা চালাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধ করারও চেষ্টা চলছে। এদিকে, গত শনিবার হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ৪২ দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ওইদিন থেকেই গাজায় সব ধরনের খাদ্যপণ্য প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।

ট্রাম্পের লাস্ট ওয়ার্নিং : আড়ালে আলোচনা চললেও প্রকাশ্যে হামাসের উদ্দেশে ‘লাস্ট ওয়ার্নিং’ বা ‘শেষ সতর্কতা’ জারি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সতর্কবার্তায় তিনি হামাস নেতাদের গাজায় আটক থাকা সকল ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে এবং গাজা ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন। খবরে বলা হয়, মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে এই হুমকি এমন সময়ে এলো, যখন হোয়াইট হাউস ১৯৯৭ সালের পর প্রথমবারের মতো হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বুধবার সামাজিকমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘বন্দিদের মুক্তি না দিলে চড়া মূল্য দিতে হবে।’ পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘এটি আপনাদের জন্য শেষ সতর্কতা! হামাসের নেতৃত্বের জন্য এখন সময় এসেছে গাজা ত্যাগ করার। আপনাদের জন্য এখনও এই সুযোগটি রয়েছে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘এছাড়াও, গাজার জনগণের কাছে আমার বার্তা- আপনাদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে, কিন্তু আপনারা যদি বন্দিদের আটকে রাখেন তাহলে তেমনটি হবে না। যদি আপনারা তেমন কিছু করেন, তাহলে আপনি জীবিত নন! স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিন।’ প্রচণ্ড ধাক্কা খাবে ক্ষমতাসীন জোট : ইসরায়েলি টেলিভিশনের জরিপ বলছে, আজ নির্বাচন হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ব্যাপকভাবে বিজয়ী হবেন। নির্বাচনে নেতানিয়াহুর ক্ষমতাসীন জোট প্রচণ্ড ধাক্কা খাবে। বুধবার চ্যানেল টোয়েলভের খবরে বলা হয়, এখন নির্বাচন হলে লিকুদ পার্টি ২৪ আসন, বেনেটের দল ২৪, ইয়েশ আতিদ ১১, দ্য ডেমোক্র্যাটস ১০, ন্যাশনাল ইউনিটি ৯, শাস ৯, ইউনাইটেড তোরাহ জুদাইজম ৮, ইসরায়েল বেইতেনু ৮, ওজমা ইহুদিত ৭, হাদাশ-তাল ৫, রাম ৫ এবং ধর্মীয় ইহুদিবাদী পার্টি ৪ আসনে জিতবে। ১২০ সদস্যের নেসেটে নেতানিয়াহুপন্থি জোট মাত্র ৪৮ আসন পাবে। টেলিভিশন নেটওয়ার্কের আগের জরিপে বলা হয়েছিল, নির্বাচনে নেতানিয়াহুর জোট ৫১ আসন পাবে, কিন্তু এখন তা আরও নেমে গেছে। জরিপে নেতানিয়াহু এবং তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কে বেশি উপযুক্ত, তা নিয়ে জনমত নেওয়া হয়।

এতে দেখা যায়, বেনেটই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি প্রধানমন্ত্রীকে ছাড়িয়ে গেছেন। ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতা বেনেটকে সমর্থন করেছেন, অন্যদিকে নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ৩৪ শতাংশ মানুষ। জরিপ অনুযায়ী, ৬০ শতাংশ ইসরায়েলি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে নেতানিয়াহুর সরে যাওয়া উচিত, অন্যদিকে ৩১ শতাংশ তাকে সরকারপ্রধান হিসেবে দেখতে চান। নিজের জোটের ২৪ শতাংশ ভোটার বলেছে, নেতানিয়াহুর পদত্যাগ করা উচিত, অন্যদিকে বিরোধী জোটের ৯৪ শতাংশ তার পদত্যাগের পক্ষে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত