দুর্নীতি অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ফলে গত ৫ আগস্ট পর বড় আকারে চাপে পড়ল হাসিনা পরিবার। এ পরিবারের সবাই দেশের বাহিরে থাকলেও তাদের দুর্নীতি বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। দুর্নীতি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, তাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য এবং তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ১২৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ বা ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব অ্যাকাউন্টে ৫৭৭ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা জমা আছে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক, তাদের পরিবারের সদস্য বুশরা সিদ্দিক ও শাহীন সিদ্দিক।
তদন্ত দলের প্রধান দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম এই বিষয়ে একটি আবেদন জমা দেয়ার পর গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন এই আদেশ দেন।
আবেদনে দুদক জানায়, শেখ হাসিনা এবং অন্যরা যে কোনো সময় এই অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তাদের এটি করা থেকে বিরত রাখতে একটি আদেশ প্রয়োজন।
একই আদালত শেখ হাসিনা, রেহানা, জয়, পুতুল, রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নয়টি প্রকল্প থেকে হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মোট ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক তদন্ত শুরু করে। ২২ ডিসেম্বর কমিশন হাসিনা এবং জয়ের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে। সেইসঙ্গে পূর্বাচল নিউটাউন প্রকল্পের প্লট পেতে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে গত সোমবার শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং তাদের পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা ছয়টি মামলায় অভিযোগপত্র অনুমোদন করে দুদক।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশত্যাগ করে ভারতে অবস্থান করা শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাসভবন সুধা সদনসহ ও তার পরিবারের সদস্যদের জমি ও ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম এসব সম্পত্তি জব্দ চেয়ে আবেদন করেন।
জব্দের আদেশ হওয়া এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ১৬ কাঠা জমির সুধা সদন; যা শেখ হাসিনার ছেলে জয় ও মেয়ে পুতুলের নামে। গুলশান আবাসিক এলাকায় টিউলিপ সিদ্দিকের নামে ২৪৩৬ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট, শেখ রেহানার নামে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১০ শতাংশ জমি, সেগুনবাগিচায় একটি ফ্ল্যাট। এছাড়া রাদওয়ান মুজিবের নামে গুলশানের ছয়টি ফ্ল্যাট ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজিব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তার ছোট বোন শেখ রেহানা সিদ্দিক, রেহানার সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও টিউলিপ সিদ্দিক স্থাবর সম্পদগুলো অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন।
এমতাবস্থায়, অভিযোগটির সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অনুসন্ধান সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন স্থাবর সম্পদ বা সম্পত্তির মালিকানা পরিবর্তন বা স্থানান্তর বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করতে না পারেন এ মর্মে ক্রোক (অ্যাটাচমেন্ট) আদেশ হওয়া আবশ্যক।
এদিকে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন আদালত। নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অন্যান্যরা হলেন- তার ছেলে সজিব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তার ছোট বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানান। দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা লোপাট/আত্মসাতের একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা যায় যে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা দেশ ত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। তাই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্বার্থে তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।