দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আরও সোচ্চার হচ্ছে বিএনপি ও মিত্ররা। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে তারা। আগামী মাসের শুরুতে ঢাকায় বড় একটি সমাবেশ করার পরিকল্পনা দলটির। এর মাধ্যমে সরকারকে বার্তা দিতে চায়, বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত এবং তারা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে বিএনপি নেতারা অভিমত দেন- এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের ফসল। সুতরাং সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো কর্মসূচি কিংবা বড় আন্দোলনে যাওয়া যাবে না। সে পরিস্থিতি এখনও আসেনি। একটি অবাধ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছেন তারা। সুতরাং তারা চান না এই সরকার ব্যর্থ হোক। সামগ্রিক বিবেচনায় তাই সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। দলটির নেতারা জানান, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও বিএনপি বসবে, কৌশলে বোঝাপড়া করবে। অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের দাবিতে জনমত তৈরি করার জন্য যুগপৎভাবে সভা-সমাবেশ কর্মসূচি পালনের বিষয়ে আলোচনা হবে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা দেশি-বিদেশিদের কাছে এমন বার্তা দিতে চায়- বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। বিএনপি চায় ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের পরামর্শ নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই নির্বাচনের দাবি আদায় করতে চায়। আর বিএনপির নিজস্ব কিছু কর্মসূচি পালনের বিষয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। দ্রুত রোডম্যাপ ও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবির সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা ইস্যুও যুক্ত করে বিক্ষোভ ও সমাবেশের কর্মসূচি নেয়া হতে পারে। ঢাকায় দুয়েকটি বড় সমাবেশ করারও পরিকল্পনায় রয়েছে। সামনে কোরবানির ঈদ ও বর্ষাকাল, তাই এর আগেই এসব কর্মসূচি পালন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচন ইস্যুতে সরকার আগামী দুয়েক মাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কী পদক্ষেপ নেয়, সেটা পর্যবেক্ষণ করবে বিএনপি। দলটির শঙ্কা-রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও চাওয়া উপেক্ষা করে সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে এবং দেশ অস্থিতিশীলও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়াতে প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচির দিকেও যেতে পারে বিএনপি।
বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ তো থাকতে হবে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রমজান ও মার্চে ঈদুল ফিতর, পরে কোরবানির ঈদ, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং পরে বর্ষকাল আছে। এগুলোর মধ্যে নির্বাচন হবে কীভাবে? সেজন্যই ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করার উপযুক্ত সময়। নির্বাচন যত দেরি হবে তত পানি ঘোলা হবে। তা হলে যারা পতিত শক্তি আছে তারা নানাভাবে খেলা শুরু করবে। ফ্যাসিবাদের দোসররা অনেকভাবে সুযোগ নিতে পারে। অগণতান্ত্রিক শক্তির উদয় হতে পারে। তাতে করে আমাদের গণঅভ্যুত্থানের আশা ও আকাঙ্ক্ষা জলাঞ্জলি যাবে। সেটি আমরা হতে দিতে চাই না।
দলটি মনে করে, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এর বেশি হলে তা হবে সময়ক্ষেপণ। এছাড়া নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দুয়েকজন উপদেষ্টা এবং দুয়েকটি দলের একেকরকম বক্তব্যে নির্বাচন প্রলম্বিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয় বিএনপিতে। দলটি আরও মনে করে, গুম, খুন ও গণহত্যায় জড়িতদের বিচার এবং সংস্কার কার্যক্রমও সেভাবে এগুচ্ছে না। একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যে ধরনের সংস্কার দরকার, সেগুলো গুছিয়ে আনছে না সরকার।
নেতাদের কাছে মনে হয়েছে, সরকার আগামী ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী জুনের কথা বললেও নির্বাচন নিয়ে তারা অনেকটাই উদাসীন। নির্বাচন নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো সিরিয়াসনেস নেই। উপদেষ্টাদের যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, তাতে মনে হয়েছে- নির্বাচন জুন পেরিয়ে আগামী বছরের ডিসেম্বরে চলে গেলেও তাদের কোনো সমস্যা নেই। অর্থাৎ নির্বাচন ইস্যুকে সরকার এখনও কার্যত আমলে নিচ্ছে না। এছাড়া সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামী আগামী রোজার আগেই নির্বাচন দাবি করেছে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জামায়াতের এমন অবস্থানকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে বিএনপি। যদিও সম্প্রতি জামায়াতের কিছু কিছু বক্তব্য বিএনপির মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে এ বৈঠক করছে বিএনপি। সম্প্রতি গুলশানে ১২ দলীয় জোট ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি। গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে ৪টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। বৈঠকে বিজেপির ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে এ বৈঠক চলবে।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেও নির্বাচনের রোডম্যাপ (রূপরেখা) পায়নি বিএনপি। বৈঠক নিয়ে দলটি একেবারেই সন্তুষ্ট হতে পারেনি। বিএনপির নির্বাচনের দিনক্ষণ চাওয়ার জবাবে প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ দেননি। ‘২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন’ বরাবরের মতো একই কথারই পুনরাবৃত্তি করেন সরকারপ্রধান। বৈঠকে অসন্তুষ্ট বিএনপি তাদের মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছিল।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সরকারপ্রধানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় কী ফলাফল এসেছে, বিএনপি মূলত সেটি জানানোর জন্যই শরিকদের সঙ্গে বসেছে। নির্বাচন এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে তাদের মতামত নিচ্ছে, যা পরে নিজস্ব ফোরামে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি।
এদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকারের মধ্যে ও সরকারের সমর্থক একটি গোষ্ঠী নির্বাচন বিলম্বিত করতে সক্রিয় হয়েছে। এজন্য ডিসেম্বরেই নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে সব দলকে এক জায়গায় আনতে কাজ শুরু করেছে বিএনপি।
যদিও বিএনপি নেতারা ঈদের আগে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করলে তারা শিগগিরই রাজপথের আন্দোলনে যাবেন। সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরালো করে নির্বাচন দিতে বাধ্য করবেন।
এদিকে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে সর্বদলীয় ঐক্য ও জনমত গঠন করতে চায় বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের ভিত্তিতে এই লক্ষ্যে দলটি ডান-বামণ্ডইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিএনপি অন্তত সাতটি দল ও জোটের সঙ্গে এরইমধ্যে বৈঠক সেরেছে। এসব বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় ধরনের ঐক্য গড়ে তুলতে চায় বিএনপি।’ সেলিমা রহমান বলেন, সরকারকে নির্বাচনের বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত। কেননা প্রত্যেক দলেরই কিছু পরিকল্পনা থাকে। রোডম্যাপ না পেলে কীভাবে আমরা নির্বাচনি পরিকল্পনা সাজাব? গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিএনপি তার কথা বলে যাবে। আমরা যুদ্ধ করতে যাব না।
তথ্য বলছে, ১৯ এপ্রিল ১২ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু করে দলটি। ওই দিনই এলডিপির সঙ্গেও আলাদা বৈঠক হয়। এতে বিএনপির নেতৃত্ব দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান। বিএনপি নেতারা ২০ এপ্রিল চা-চক্রে অংশ নেন সিপিবি, বাসদসহ বামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে। ওই দিনই গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গেও বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল। ২১ এপ্রিল সন্ধ্যায় লেবার পার্টির নেতাদের সঙ্গে, পরে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান। গত বুধবার বিকালে এনডিএম ও গণফোরামের সঙ্গে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলাদেশ জন অধিকার পার্টি, ওই দিনই পরে বাম গণতান্ত্রিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। এছাড়া গত মঙ্গলবার ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপি অনানুষ্ঠানিক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে করেছে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে আরও জানা গেছে, তারা সব রাজনৈতিক শক্তিকে এক ছাতার নিচে এনে সরকারের ওপর যৌক্তিক চাপ সৃষ্টি করতে চান। বিএনপি দীর্ঘদিন পর সিপিবি-বাসদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসেছে। ওই চা-চক্র থেকে আশাব্যঞ্জক সাড়াও মিলেছে। ফলে বামধারার সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার সম্ভাবনা আরও জোরদার হয়েছে। বিএনপি মনে করছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বক্তব্যে এখনও স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারের অবস্থান ও লক্ষ্য প্রশ্নে আস্থার ঘাটতি বাড়ছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সরাসরি সরকারের বিরোধিতা নয়, বরং একযোগে সব দলের সমন্বয়ে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করাই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। এ প্রেক্ষাপটে গত ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান উপদেষ্টার হাতে দেয়া চিঠিতে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়। যদিও প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে একটি সর্বোত্তম নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির কথা আবারও বলা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচন নিয়ে ধর্মশ্রয়ী দলগুলো অর্থাৎ জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন ইত্যাদির সঙ্গে নব্য দল এনসিপির অবস্থান ধোঁয়াটে। ‘সংস্কার ও বিচার’-এর আগে নির্বাচন না করার পক্ষে কড়া বক্তব্য উত্থাপনকারী দল জামায়াতে ইসলামীর আমির সম্প্রতি লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরও তাদের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার উত্তরবঙ্গে এক সভায় পুনরায় একই বক্তব্য রেখেছেন। তবু গণতন্ত্রের বৃহত্তম স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের অংশ হিসেবে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সেটি আনুষ্ঠানিক না অনানুষ্ঠানিক তা দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্তের পর জানা যাবে। ইসলামপন্থি ও তরিকতপন্থি কয়েকটি দলের সঙ্গেও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বলেছেন, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন। এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। এ দেশ চলবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে।
সংস্কার নিয়ে কালক্ষেপণ না করে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা এখন জনগণের দাবি উল্লেখ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেছেন, সেটাতে সরকারকে মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তিনি আরও বলেন, সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে যেসব বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে, সেগুলোতে সবাই একমত হবে, সেই চিন্তা করে তো নির্বাচন পিছিয়ে নিতে পারেন না। কিংবা ঘোলাটে পরিবেশ করতে পারেন না। সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, দেশে গত ১৬-১৭ বছর কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০১৪ সাল থেকে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। যেটা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ করেছিল। সেটা যেন এই বাংলাদেশে না থাকে, মানুষ যেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি মাধ্যমে তার সমস্যার সমাধান হবে সেটা আমরা উপলব্ধি করি। পার্থ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান সরকার আমাদের সরকার, আমাদের আন্দোলনের সরকার। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সরকার। তারা জনগণের সরকার হলেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তবে, আমরা তাদের পাশে ছিলাম, আগামীতেও থাকব।
পার্থের মতে, সংস্কারের নাম বলে নির্বাচনকে পেছানো কিংবা একটা দায়িত্বশীল সরকার যখন বলে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে- এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারে না। আমরা চাই না এই সরকার ব্যর্থ হোক। দেশের মানুষের মধ্যে আবার এই ধরনের চিন্তা না আসুক যে, আবার কবে নির্বাচন হবে।
লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা ভোট চাচ্ছি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে ভোট হবে। কার্যত আগামী রোজার পর নির্বাচন করা কঠিন হবে। কারণ রোজার ঈদের পর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আছে। কোরবানির ঈদ আছে। এরপর বর্ষাকাল। তখন নির্বাচন দিলে নানা সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে। এজন্যই আমরা চাচ্ছি- ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোট হোক। আমরা আশা করি, সরকারও ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। আর যদি সরকার নির্বাচন দিতে বেশি কালবিলম্ব করে তাহলে আমরা নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হবো।