ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নির্বাচনে প্রতি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চায় জামায়াত

আরাকানে মুসলিম রাজ্য চায় দলটি
নির্বাচনে প্রতি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চায় জামায়াত

আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চায় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। এজন্য বড় অর্থের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা চেয়েছে জামায়াত। গতকাল রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়।

সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। আগামী নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপনাদের অবস্থান জানতে চেয়েছে কি না, জানতে চাইলে কী জানিয়েছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রধান উপদেষ্টা যে টাইমলাইন দিয়েছেন তার ওপরই আস্থা রাখবে জামায়াত। সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে দেশে নির্বাচন পরিদর্শনের জন্য পরিদর্শক দল পাঠানোর কথা জানিয়েছি। তাহের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আমরা বলেছি বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে গার্মেন্টস পণ্য প্রচুর পরিমাণে যায়। আমরা তাদের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা নির্ধারণ করে দেব। সেখানে তারা আরও বেশি বিনিয়োগ করবে। তিনি বলেন, জামায়াত সবসময় নারীদের অধিকার, জঙ্গিবাদ দমনে জামায়াত কী করবে এ প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। আমরা এ বিষয়গুলোতে আশ্বস্ত করেছি। নারী সংস্কার কমিশনের পতিতাদের শ্রমিক স্বীকৃতির বিষয়ে বলেছি এটি নারীদের জন্য চরম অপমানজনক। এছাড়া নারীদের অংশগ্রহণ জামায়াতে ৪৩ শতাংশ। যা অন্য সবার চেয়ে বেশি।

আরাকানে মুসলিম রাজ্য চাইল জামায়াত : বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপন কোনো সমাধান নয়। এর সমাধান হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন। সেজন্য আরাকান কেন্দ্রিক স্বাধীন আরাকান মুসলিম রাজ্য চায় জামায়াতে ইসলামী। গতকাল রোববার বিকাল ৫টায় হোটেল ওয়েস্টিনে সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কাছে নতুন স্বাধীন আরাকান স্টেট গঠনের প্রস্তাবনা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। মতবিনিময় সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমাদের বেশ খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে চায়না সরকারের আমন্ত্রণে আমরা একটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়েছিলাম। ওই সফরটা অনেকটা সরকারি ছিল, তবে আজকে আমাদের যে বৈঠকটা হলো পার্টি টু পার্টি। তিনি বলেন, শুধু আমাদের এই অঞ্চলে নয়, পুরো বিশ্বে চীন একটি অ্যামার্জিং ফোর্স। চীনের রাজনীতি, অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে চীনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জামায়াতে ইসলামী যেহেতু ইনক্লুসিভ ডেমোক্রেটিক, লিবারেল পার্টি। আমাদের প্রধান পলিসি হচ্ছে, সবার সাথে সরকারি, বেসরকারি পর্যায়ে সুসম্পর্ক করা। সে হিসেবে আমরা আজকে চায়না কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। খোলামেলা আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কতিপয় বিষয়ে আলোচনা করেছি। তাহের বলেন, তারা আমাদের প্রধান উপদেষ্টাকে দাওয়াত দিয়েছেন। কতিপয় চুক্তি করেছেন, আশ্বাস দিয়েছেন, সেজন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। বাংলাদেশে এখন চীন হচ্ছে প্রধান বিনিয়োগকারী। সেটা আমরা আরও অনেক পরিসরে বাড়াতে অনুরোধ করেছি। তিস্তা ব্যারেজ ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে চীনে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তাহের বলেন, আমরা তিস্তা ব্যারেজ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট করে বলেছি। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর জন্য বিনিয়োগ করার কথা বলেছি। গভীর সমুদ্রে যে বন্দর হচ্ছে সেখানে অর্থায়ন করার কথা বলেছি। গভীর সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে আমাদের যে ব্লু ইকোনমি, সেটা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। তিনি বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে কথা হয়েছে। এই অঞ্চলে যাতে করে কেউ কারো প্রতি রক্তচক্ষু দেখাতে না পারে, ভারসাম্যমূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপারে আমরা তাদের সাথে আলোচনা করেছি এবং বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকভাবে ছাত্রদের স্কলারশিপ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। এসব বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছেন। তারা তাদের সরকারকে এ ব্যাপারে অবহিত করবেন এবং প্রয়োজনে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন। তাহের বলেন, চায়না কমিউনিস্ট পার্টি এবং সরকার বলতে একই সত্তা। সুতরাং আমরা আশা করি চীন সরকারের সঙ্গে গভর্মেন্ট টু গভর্মেন্ট, জামায়াতে ইসলামি টু চায়না গভর্মেন্ট, পিপলস টু পিপলস এবং পার্টি টু পার্টি সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। তারা তাদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে দাওয়াত দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরাও জামায়াতের পক্ষ থেকে চায়না কমিউনিস্ট পার্টির একটি প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশ সফর করার জন্য আমন্ত্রণ জানাব বলেছি, যেটার হোস্ট হবে জামায়াত। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর জন্য চায়না কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আজকের এই বৈঠক আমরা একটি সুযোগ বলে মনে করি। কারণ চায়না সরকার বা চায়না কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আমাদের খুব একটা ইন্টারেকশন ছিল না। কিন্তু এটি এখন অনেক ব্যাপকভাবে হচ্ছে। খুব দ্রুততার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বা ইন্টারেকশন বৃদ্ধি পেয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাংলাদেশের জন্য সমস্যা উল্লেখ করে সমাধানে একটি আলাদা স্বাধীন মুসলিম আরাকান স্টেট গঠনের প্রস্তাবনা তুলে ধরে তাহের বলেন, আমরা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছি, সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। ১১ বা ১২ লাখের রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে, তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা বলেছি, এভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবেতর অবস্থান কোনো সমাধান নয়। সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন করা। সেজন্য আমরা একটি প্রস্তাবও দিয়েছি, সেটি হচ্ছে আরাকান কেন্দ্রিক রোহিঙ্গা মেজরিটি যে এরিয়া আছে, সেই এরিয়াতে একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট আরাকান স্টেট করার। এখানে চীন অনেক বেশি বা বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। কারণ মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের খুবই ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তাহের বলেন, যদি ইন্টারন্যাশনাল একটি রিপ্যাট্রিয়েট কমিটি থাকে, তাহলে সকলে মিলে এখানে সমস্যা সমাধান করতে পারবে। আমরা বলেছি, সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে একটি মুসলিম আরাকান স্টেট গঠন করতে। এই প্রস্তাবে চায়না কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দল বলেছে, তারা এই প্রস্তাব চীন সরকারের কাছে উত্থাপন করবে এবং এ ব্যাপারে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করার চেষ্টা তারা চালাবে। চলমান সংস্কার প্রস্তাবনা ও নির্বাচন বিষয়েও চায়না কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর এ সিনিয়র নায়েবে আমির বলেন, সংস্কার নিয়ে তারা কথা বলেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত