রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরে থাকা একটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ফ্ল্যাটটির দলিলমূল্য ৫৭ লাখ টাকা বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জব্দের আবেদন সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব। এদিন দুদকের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম এ সম্পদ জব্দের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন আদালত।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অনুসন্ধানকালে তার এ স্থাবর সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যায়। তিনি যেন এটি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে না পারেন এজন্য তা জব্দের আদেশ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
এর আগে গত ৫ মার্চ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রতিষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশনের ১৪ ব্যাংক হিসাবে থাকা ৪৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। এছাড়াও কয়েক দফায় পুতুলসহ হাসিনা পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা অন্তত ১ হাজার ৬৫ কোটি ৭৮ লাখ ২২ হাজার ১১৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত। এদিকে ২৭ এপ্রিল প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলায় পুতুলের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিকে রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার স্বামীসহ তাদের মালিকানাধীন প্রচ্ছায়া লিমিটেডের ৮ পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দায়রা জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তরা হলেন শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক, শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ও শেখ রেহানার দেবর তারিক সিদ্দিকের স্ত্রী শাহিন সিদ্দিক, মেয়ে বুশরা সিদ্দিক ও নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক, সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান, তার স্ত্রী ফারজানা আনজুম, তাদের দুই মেয়ে শেহতাজ মুন্নাসী খান এবং পারিজা পাইনাজ খান।
দুদকের পক্ষে উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার এ আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম। আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজিব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়), তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার চেষ্টা করছেন বলে বিশ্বস্তসূত্রে তথ্য পাওয়ার কথা জানায় দুদক।
তাদের ভাষ্যে, অভিযুক্তরা দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া, সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ থাকায় অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চায় দুদক। ২০০৯ সালে টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা শেখ রেহানা ও তারিক আহমেদ সিদ্দিক প্রচ্ছায়া কোম্পানিটি চালু করেছিলেন বলে জানায় দুদক।
সম্প্রতি গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প নামক একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই কোম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থপাচার করতেন শেখ হাসিনা।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচলের প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের করা পৃথক দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ রাজউক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১২ মে দিন ধার্য করেছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালতে আসামিদের গ্রেপ্তার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল না করায় বিচারক নতুন এদিন ধার্য করেন।
এর আগে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্তে প্রাপ্ত আরও চারজনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। ১৫ এপ্রিল আদালত মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ চার্জশিটভুক্ত ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেপ্তার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত।
শেখ হাসিনা ছাড়া এ মামলায় অপর ১১ আসামি হলেন- জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য শফিউল হক, খুরশীদ আলম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, তদন্তপ্রাপ্ত জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
অপর মামলার সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এসএম রাশেদুল হাসান। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্তে প্রাপ্ত আরও দুইজনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক এসএম রাশেদুল হাসান।
শেখ হাসিনা-জয় ছাড়াও এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত অপর ১৫ আসামি হলেন- জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক কামরুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সদস্য মো. নুরুল ইসলাম, তদন্ত প্রাপ্তে আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।