ঢাকা শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি

* নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক : মঈন খান * নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ডা. জাহিদ * নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণই রাস্তায় নামবে : ফারুক
দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি

যতই দিন যাচ্ছে ততই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাকিতে সোচ্চার হচ্ছে বিএনপি। এরইমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ চেয়েছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার একাধিক কিছু প্রোগ্রামে বিএনপি নেতারা দ্রত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, সুষ্ঠু ও দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরা সম্ভব। জনগণের প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত হতে পারে একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্বাচনটি যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা গণতন্ত্রের উত্তরণ চাই। নির্বাচনের মাধ্যমেই একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যেতে পারি। গতকাল শুক্রবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কার্টার সেন্টারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত কি না- এমন প্রশ্নে মঈন খান বলেন, এটা বিএনপির সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় নয়। এটি নির্বাচন কমিশন, সরকার ও যারা নিষিদ্ধ করতে চায় তাদের ঐকমত্যের বিষয়। জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে, কারা নির্বাচন করবে বা কারা করবে না। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে ড. মঈন খান বলেন, তাদের জিজ্ঞাসা করতে হবে, তারা কি আদৌ নির্বাচনে আসবে? আওয়ামী লীগের একজনও কি গত ১৫ বছরে জনগণকে জিম্মি করার জন্য কোনো ক্ষমা চেয়েছে? এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। এর আগে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা দ্য কার্টার সেন্টারের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। বিএনপির পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন ড. আব্দুল মঈন খান, মোহাম্মদ ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং এ বি এম আব্দুস সাত্তার। দ্য কার্টার সেন্টারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ডেমোক্রেসি প্রোগ্রামের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর জোনাথন স্টোনস্ট্রিট। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর তারা শরিফ, ডেটা সায়েন্টিস্ট মাইকেল বালদাসারো, অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর সাইরাহ জাইদি, প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট ড্যানিয়েল রিচার্ডসন এবং স্থানীয় মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ কাজী শহীদুল ইসলাম। মঈন খান জানান, বৈঠকে মূলত দুটি বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রথমত, বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং দ্বিতীয়ত, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে (ইলেকশন মনিটরিং) কার্টার সেন্টারের সম্ভাব্য ভূমিকা। প্রতিনিধিদলটি জানতে চায়, নির্বাচন কখন ও কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং তাদের মনিটরিং প্রক্রিয়া এতে কীভাবে যুক্ত হতে পারে।

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ বলেছেন, যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিন। নির্বাচন প্রলম্বিত করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, দেশে বিশৃঙ্খলা দেখতে চাই না। জনগণ যাদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবে, তারাই দেশ পরিচালনা করবে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ডা. জাহিদ বলেন, জুলাই-আগস্টে দেশের মানুষের মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, তা ধরে রাখতে হবে। পার্শ্ববর্তী কোনো দেশের চাপে যেন ঐক্য নষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই এখনও শেষ হয়নি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হলে মুক্তি মিলবে না। বিএনপি চায়, প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হোক। এসময় তিনি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে প্রবাসীদের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হলে জনগণই রাস্তায় নামবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী যুব সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত হলে আমাদের কিছু বলার প্রয়োজন হবে না, জনগণই রাস্তায় নামবে। তিনি বলেন, বিএনপি দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে আসছে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে, অন্যথায় গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের মতো জোর করে ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা শুধু সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। জনগণ যেন তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পায়। সরকারের উদ্দেশে ফারুক বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে, তাদের জনগণ আর মেনে নেবে না। নির্বাচনের জন্য এখনই সংস্কার প্রয়োজন।

প্রতিবাদী যুব সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ, মাওলানা নেসারুল হক, কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ওবায়দুর রহমান টিপু প্রমুখ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত