ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইসরায়েলকে ‘ত্যাগ’ করার হুমকি ট্রাম্পের

* ইসরায়েলকে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্সের * যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স-কানাডার সমালোচনায় নেতানিয়াহুর পাল্টা জবাব
ইসরায়েলকে ‘ত্যাগ’ করার হুমকি ট্রাম্পের

গাজায় ‘সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ নিতে ইসরায়েলের হামলা জোরদার করার পর যুক্তরাষ্ট্রসহ তার ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলো ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করতে পারে বলে সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে এই দাবি অস্বীকার করেছেন একজন মার্কিন কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারকে সতর্ক করেছে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করতে ব্যর্থ হলে ওয়াশিংটন তেল আবিবকে আর সমর্থন দেবে না।

আলোচনার সঙ্গে পরিচিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, ট্রাম্পের প্রতিনিধিরা ইসরায়েলকে জানিয়েছেন, ‘যুদ্ধ শেষ না করলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে পরিত্যাগ করবে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট আরও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চান গাজায় যুদ্ধের অবসান হোক। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা না করা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের বিষয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরব দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে তার সফরের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন যে, গাজায় ‘অনেক মানুষ অনাহারে’ রয়েছে। এদিকে, গত সোমবার ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং কানাডার নেতারাও গাজায় ইসরায়েলের ‘জঘন্য কর্মকাণ্ডের’ নিন্দা জানিয়েছেন এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সামরিক আক্রমণ বন্ধ না করলে যৌথ পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের পাল্টা জবাব দিয়েছে। যেখানে একজন মার্কিন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে যিনি বলেছেন যে, উভয়পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু ‘আমরা ইসরায়েলকে পরিত্যাগ করব এই ধারনাটি হাস্যকর।

ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে ওয়াইনেট নিউজকে বলেন, তাদের প্রতিবেদন অর্থহীন। প্রেসিডেন্ট যা বলছেন তাদের তা শুনতে হবে। কিছু অজ্ঞাত উৎস থেকে নয়, যারা সবকিছু জানার ভান করে।

গাজায় নতুন করে শুরু করা সামরিক অভিযান বন্ধ না করলে এবং ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডটিতে ত্রাণ প্রবেশে বাধা সরিয়ে না নিলে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স।

গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। গত সোমবার এই তিন দেশের নেতাদের নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি সেই চাপ আরও বাড়াবে।

যদিও সব ধরনের চাপ উপেক্ষা করে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ। গত শুক্রবার আইডিএফ গাজায় নতুন করে স্থলাভিযান শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।

তিন দেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি আসার আগে সোমবার নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এরইমধ্যে গাজায় আসন্ন দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল সরকার (গাজার) বেসামরিক জনগণের জন্য অত্যাবশ্যক মানবিক সহায়তা দিতে অস্বীকার করছে, এটি অগ্রহণযোগ্য এবং এতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি রয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা পশ্চিম তীরে (ইহুদি) বসতি সম্প্রসারণের যে কোনো প্রচেষ্টারও বিরোধিতা করছি। প্রয়োজনে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবো না, যার মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সত্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপও অন্তর্ভুক্ত।

এর জবাবে নেতানিয়াহু বলেছেন, লন্ডন, অটোয়া ও প্যারিসের নেতারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর চালানো জাতিগত নিধনমূলক হামলার জন্য বিশাল পুরস্কারের প্রস্তাব দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে তারা ভবিষ্যতে এমন আরও নৃশংসতাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, ইসরায়েল ন্যায়সংগত উপায়ে আত্মরক্ষা করবে, যতক্ষণ না পূর্ণ বিজয় অর্জিত হয়। তিনি যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরায়েলের শর্তগুলোর কথা পুনরায় উল্লেখ করেন, যার মধ্যে বাকি জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণ রয়েছে।

এক যৌথ বিবৃতিতে তিন পশ্চিমা দেশের নেতারা বলেছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নাগরিকদের সুরক্ষায় ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে আমরা সব সময় সমর্থন করেছি। কিন্তু বর্তমান সহিংসতা সম্পূর্ণরূপে অসংগত।

নেতারা আরও বলেন, নেতানিয়াহু সরকারের এই জঘন্য কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া তারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে দেখে যেতে পারেন না।

ওই তিন দেশের নেতারা গাজায় এখনই একটি যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের নেতৃত্বে চলমান উদ্যোগগুলোর প্রতিও তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি তারা বলেছেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের অংশ হিসেবে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। হামাস তিন পশ্চিমা দেশের যৌথ বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে একে ‘সঠিক পথের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৫৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ ফিলিস্তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত