ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ষষ্ঠ দিনের মতো সড়কে ইশরাকের অনুসারীরা

* নগর ভবনের গেটে মঞ্চ করে ইশরাক অনুসারীদের গান ও জাদু প্রদর্শনী * আন্দোলনরত সমর্থকদের জরুরি বার্তা দিলেন ইশরাক * সরকার গায়ের জোরে ইশরাককে মেয়র হতে দিচ্ছে না : রিজভী * মেয়র পদের গেজেট নিয়ে আদেশ আজ
ষষ্ঠ দিনের মতো সড়কে ইশরাকের অনুসারীরা

আদালতের রায় অনুযায়ী ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করানোর দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তার অনুসারীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই নগর ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন তারা।

এদিন নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে একটি পিকআপ ভ্যানের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করেন আন্দোলনকারীরা। ওই মঞ্চে চলছে জাদু প্রদর্শনী, সঙ্গে রয়েছে গান-বাজনার আয়োজনও। বিভিন্ন শিল্পীরা মঞ্চে গান পরিবেশন করছেন, যা আন্দোলনকারীদের মধ্যে উৎসাহ যোগাচ্ছে।

ইশরাক অনুসারীদের দাবি, আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করানো হয়নি। তারা অবিলম্বে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার দাবি জানান। একইসঙ্গে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগেরও দাবি উঠেছে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে।

অবস্থানের কারণে গুলিস্তান-বঙ্গবাজার সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব আশপাশের রাস্তাগুলোতেও পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। নগর ভবনের মূল ফটক বন্ধ করে অবস্থান নেওয়ার ফলে নগর ভবনের ভেতরে সব ধরনের নাগরিক সেবা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ নাগরিকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

মেয়র হিসেবে শপথ পাঠ করানোর দাবিতে নগর ভবনে আন্দোলনরত সমর্থকদের জরুরি বার্তা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড পেইজে এক পোস্টে আন্দোলনে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অসম্মান করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেন।

নগর ভবনে এ নিয়ে টানা ছয় দিন বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তার সমর্থকরা। এতে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নিয়েছেন। আন্দোলনকারী সমর্থকদের জন্য উদ্দেশ্যে দেওয়া ফেসবুক পোস্টে ইশরাক হোসেন লিখেছেন, আমি আন্দোলনরত ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনগণ ও ভোটারদের বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি, ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের বাদে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার বিরুদ্ধে যত ক্ষোভ থাকুক না কেন, আমরা তাদের অসম্মান হয় এ রকম কিছু করা থেকে শতভাগ বিরত থাকি। আমরা সমালোচনা করি, রাজনৈতিক বক্তব্যর মধ্য দিয়ে তাদের সতর্ক করি, তাদের ভুল ধরিয়ে দিই; কিন্তু অবশ্যই ভাষাগত শিষ্টাচার মেনে।

তিনি লেখেন, অনেক তো দেখে আসছি, আর পেছনের দিকে দেশটাকে নিতে চাই না। অবশ্যই আমরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মোকাবিলা করব, দেশের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র রুখে দেব, নির্বাচনি স্পষ্ট রোডম্যাপ আদায়ের মাধ্যমে আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ নেব। এমনকি বর্তমানে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের পদত্যাগে কঠোর গণতান্ত্রিক আন্দোলনও করব। কিন্তু ভাষা ও ব্যবহারের জাতে শত্রুও সমালোচনা করতে না পারে।

গত সোমবার নগর ভবনের সামনে ব্লকেড কর্মসূচি থেকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাকের সমর্থকরা। এসময় আসিফ মাহমুদের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান অনেকে।

এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার গায়ের জোরে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হতে দিচ্ছে না বলেছেন। তিনি বলেন, আদালতের রায় ঘোষণার পরও ইশরাককে শপথ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। আদালতের রায়ে চট্টগ্রামে শাহাদাত হোসেন মেয়র হতে পারলে ইশরাক কী দোষ করেছেন। অর্থাৎ সরকার গায়ের জোরে ইশরাককে মেয়র হতে দিচ্ছে না।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী রাকিবুল হাসানকে দেখতে গিয়ে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন। বিএনপির এই নেতা অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বয়স অনেক কম। হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেয়ে গেছেন। এজন্য তার কথাবার্তায় ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। তিনি বলেন, ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের প্রকৃত অপরাধীদের এখনও বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার কাজের চেয়ে অকাজই বেশি করছে।

পুলিশের সাম্প্রতিক ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির নেতা রিজভী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন আবাসনের দাবিতে যমুনার সামনে যান, তখন তাদের অসম্মান করা হয়, পুলিশকে লেলিয়ে দেওয়া হয়। অথচ শেখ হাসিনাও পুলিশ দিয়ে নির্যাতন করতেন।

এর আগে রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রতিনিধিদল আহত রাকিবুল হাসানের খোঁজখবর নেয়। তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শুভেচ্ছা ও সহমর্মিতার বার্তা পৌঁছে দেয় এবং রাকিবুল হাসানের পাশে থাকার আশ্বাস দেয়।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট স্থগিত চেয়ে রিটের ওপর আদেশের জন্য আজ বুধবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ সময় নির্ধারণ করেন। এর আগে দুপুর ১টায় শুনানি শুরু হয়। চলে প্রায় ২টা পর্যন্ত। এরপর আদালতে বিকাল ৪টা ১০ মিনিট থেকে প্রায় সোয়া ৫টা পর্যন্ত শুনানি চলে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাক হোসেনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন ও খান জিয়াউর রহমান।

আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় থেকে কয়েকটি ‘ভুল’ আদালতে তুলে ধরে রুল জারির আর্জি জানান। আর আইনজীবী এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামালের মতে, নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে বিবাদী পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারে। তবে সেটা হতে হবে মামলার বিবাদী পক্ষ। যেমন ফজলে নূর তাপস। কিন্তু সেখানে আপিল না করে একজন আইনজীবী রিটকারী হয়ে হাইকোর্টে আসতে পারেন না। তাই এ রিট খারিজযোগ্য।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত