অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা ডেমরা থানার মামলায় গ্রেপ্তার সংগীতশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জিয়া উদ্দিন আহমেদ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এর আগে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কারাগারে রাখার আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. জসিম জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে এ দিন নারী নির্যাতন মামলায় মাইনুল আহসান নোবেলকে ডেমরার সারুলিয়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত রাতে ইডেন মহিলা কলেজের এক শিক্ষার্থী ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফি ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে ওই ছাত্রী অভিযোগ করেছেন, নোবেল তাকে অপহরণ ও ধর্ষণ করেছেন। বর্তমানে মেয়েটি ঢাকা মেডিকেলের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রয়েছেন। ২০২৩ সালেও একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন নোবেল। সেবার প্রতারণার অভিযোগে এক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
কণ্ঠশিল্পী নোবেলকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশের ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান বলেছেন, তিনি (নোবেল) এক নারীকে সাত মাস একটি বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ ও নির্যাতন করছিলেন। জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে কল পেয়ে বাসাটি থেকে নারীকে উদ্ধার করা হয়। পরে নোবেলকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
ওসি মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছেন, গত নভেম্বরে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে গুলশানে দেখা করার কথা বলে ডেকে নেন নোবেল। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখান। পরে সাত মাস ডেমরার একটি বাসায় তাকে আটকে রাখেন তিনি। এই সময় তিনি ছাত্রীকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করেন। এসব ঘটনা নিজের মুঠোফোনে ধারণ করেন। এই ভিডিও দিয়ে ছাত্রীকে তিনি ‘ব্ল্যাকমেল’ করছিলেন।
সম্প্রতি নোবেল এক নারীকে সিঁড়ি দিয়ে টেনে নামাচ্ছেন, এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় বলে উল্লেখ করেন ওসি মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ভিডিওতে থাকা নারীই এই ভুক্তভোগী ছাত্রী। ভিডিওটি দেখে ছাত্রীর মা-বাবা টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসে বিস্তারিত জানতে পারেন। পরে তারা জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে ঘটনা জানান। গতকাল রাত ১০টার দিকে ডেমরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। তখন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নোবেল পালিয়ে যান।
পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে নোবেলকে ডেমরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান ওসি মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, নোবেল সীমান্ত দিয়ে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। এজন্য তিনি একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেছিলেন, তবে পালানোর আগেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে বলে জানান ওসি মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, এছাড়া ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ছাত্রীটিকে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগে নোবেলের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনেও মামলা হয়েছে।