ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

খালাস আজহার, মুক্তি আজ

খালাস আজহার, মুক্তি আজ

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পেয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। আজ কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন তিনি। মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিলে এই প্রথম কেউ খালাস পেলেন। জামায়াতের এই নেতার রায়ের পর সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে মিষ্টিমুখ ও শোকরানা নামাজ পড়েন জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আজহারুলের করা আপিল সর্বসম্মতিতে মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেন। বেঞ্চের অন্য ছয় বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি ইমদাদুল হক, বিচারপতি মো. আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি ফারাহ মাহবুব। অন্য কোনো মামলা না থাকলে আজহারুলকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে জামায়াত নেতা আজহারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক। তাদের সঙ্গে ছিলেন, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম উপস্থিত ছিলেন।

এই রায়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিসের অবসান হয়েছে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এমন মন্তব্য করে বলেন, এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সত্য বিজয়ী ও মিথ্যা পরাভূত হয়েছে। আশা করি আজ সকালে এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তি পাবেন।

রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, সুপ্রিমকোর্টের রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এটিএম আজহারুল ইসলামকে সব অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দিয়েছে। এখন থেকে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম একজন নির্দোষ ব্যক্তি। এই রায়ের মাধ্যমে আমরা মনে করি সত্য জয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে। এর আগে জামায়াতের এবং বিএনপির ছয়জন শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়া অন্ততপক্ষে পাঁচজন জেলে মৃত্যুবরণ করেছেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন নির্যাতনের শামিল।

শিশির মনির বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলাম সৌভাগ্যবান, তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল বলে। আমরা এটাও মনে করি এ রায়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিজের অবসান হয়েছে। আমরা এটাও মনে করি- এই রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আদালতের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।

তিনি বলেন, জামায়াত ও বিএনপির ছয়জন শীর্ষস্থানীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। অন্ততপক্ষে পাঁচজন কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেছেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন নির্যাতনের শামিল। শিশির মনির বলেন, ‘এটিএম আজহারুল ইসলাম সৌভাগ্যবান, তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আল্লাহতায়ালা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাই। আমরা এটাও মনে করি, এই রায়ের মাধ্যমে সিন্ডকেটেড ইনজাস্টিসের অবসান হয়েছে। আমরা এটাও মনে করি, এই রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আদালতের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।’

আদালত চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, ‘প্রথমটি বলেছেন অতীতের রায়ে বাংলাদেশসহ এই ভারতীয় উপমহাদেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার পদ্ধতি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছিল। এটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ মূল্যায়ন করা ছাড়াই আজহারুল ইসলামকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন যে, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি বিচারের নামে অবিচার। আরও বলেছেন, যেসব তথ্যপ্রমাণ আদালতে হাজির করা হয়েছিল, অতীতের আপিল বিভাগ তা সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলশ্রুতিতে আজকে এটিএম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে। এর মাধ্যমে আমরা মনে করি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সত্য বিজয়ী হয়েছে মিথ্যা পরাভূত হয়েছে।’

জামায়াত নেতা আজহারকে খালাসের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, রায়ে মিথ্যা পরাভূত, সত্যের বিজয় হয়েছে।

রায়ের খবরে মিষ্টিমুখ : এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায় শুনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন কারাগারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। এসময় তাকে মিষ্টিমুখও করানো হয়। এদিন তার হাতের দুই আঙ্গুল উচিয়ে বিজয় চিহ্নিত ছবিও ধারণ করা হয়।

কোর্ট চত্বরে শোকরানা নামাজ : জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়ের পর সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে শোকরানা নামাজ আদায় করেন দলের নেতাকর্মীরা। সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে এনেক্স ভবনের সামনে তারা দুই রাকায়াত শোকরানা নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর তারা সাংবাদিকদের কাছে শুকরিয়া জানান। এ সময়ে নেতাকর্মীরা বলেন, মজলুম জননেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায়ের পর আমাদের অনেক ভাই, মা-বোন রোজা রেখেছেন। তারা আল্লাহর শুকরিয়া করছেন। যে কোনো ভালো খবরের পর আল্লাহর শুকরিয়া জানাতে শোকরানা নামাজ আদায় করতে হয়। তারই অংশ হিসেবে আমরা নামাজ আদায় করলাম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত