ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ইরানি হামলায় আট হাজার ইসরায়েলি বাস্তুহারা

* তেলআবিব ও হাইফার সামরিক শিল্প স্থাপনায় হামলা, আক্রান্ত মাইক্রোসফট * একদিনে ৫০ ইসরায়েলি নিহতের খবর * ভবন বা যানবাহন হারিয়েছে ৩০ হাজার ইসরায়েলি * ইরান নতুন প্রজন্মের সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র এখনও ব্যবহার করেনি * ক্লাস্টার বোমা নিয়ে ইসরায়েলে হামলা করেছে ইরান! * সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়ালে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে : ইরান * আইআরজিসির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেন খামেনি
ইরানি হামলায় আট হাজার ইসরায়েলি বাস্তুহারা

ইসরায়েলের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা এবং গতকাল শুক্রবার আবার বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে ইরান। এক বিবৃতিতে ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি বলেছে, ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক অভিযানের ১৫ ও ১৬তম পর্যায়ে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করেছেন তারা। আলজাজিরা জানিয়েছে, গতকাল ভোরে ইসরায়েলের বিয়েরশেবা শহরে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ক্ষেপণাস্ত্রের সরাসরি আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়েছে বিয়েরশেবা পৌরসভা। ঘটনাস্থল থেকে আগুন ও বিশাল ধোঁয়ার কুণ্ডলি উঠতে দেখা গেছে। হামলার কারণে ইসরায়েলি রেলসেবার বড় একটি অংশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উদ্ধারকারী দল মেগান ডেভিড অ্যাডম সামাজিকমাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছে।

ভিডিওতে দেখা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরের একটি রাস্তায় বেশ কয়েকটি স্থানে আগুন জ্বলছে। আগুন লাগার স্থানটি একটি প্রযুক্তি পার্কের কাছাকাছি, যেখানে একটি মাইক্রোসফট কার্যালয়ও রয়েছে। ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া মাইক্রোসফটের কার্যালয় হামলায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কিছু সংবাদমাধ্যম। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গতকাল ইরান থেকে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রের জেরে দক্ষিণ ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়। টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে গতকাল সকালে দক্ষিণ ইসরায়েলের বিয়েরশেভা শহর এবং পাশের এলাকাগুলোতে সাইরেন বেজে ওঠে এবং আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে যারা ছিলেন, তারা দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটতে থাকেন। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়। শহরের কয়েকটি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র প্রবল শক্তি নিয়ে আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক।

আলজাজিরার নূর ওদেহ জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড় কোনো ত্রুটি ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, আমরা বেয়ারশেবাতে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করতে দেখেছি।’ অনেক ভবনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি। অনেকে তাদের ঘরের জানালা ও আসবাবপত্রের ক্ষয়ক্ষতির ছবি পোস্ট করেছেন। এতে ৩৫ জনের মতো ইসরায়েলি আহত হন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। নূর ওদেহ জানান, আমরা মিডিয়াতে যে ছবি দেখতে পাচ্ছি, তা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সেন্সর দিয়ে পরিষ্কার করা; যে ছবি মিডিয়ায় আসছে, হামলার প্রভাব তার চেয়ে অনেক বেশি বলে জানান আলজাজিরার নূর ওদেহ।

তেলআবিব ও হাইফার সামরিক শিল্প স্থাপনায় হামলা : আইআরজিসি জানিয়েছে, তেলআবিব ও হাইফার সামরিক শিল্প কমপ্লেক্সের সঙ্গে সম্পর্কিত মিলিটারি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যাসিলিটিগুলো বৃহস্পতিবার রাতের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। এতে শতাধিক ধরনের কমব্যাট ও সুইসাইড ড্রোন ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে অ্যান্টি-মিসাইল ইন্টারসেপ্টারগুলোকে এই হামলায় টার্গেট করা হয়। মিলিটারি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল টার্গেটগুলোর বিরুদ্ধে আরও কার্যকর ক্ষেপণাস্ত্র অভিযান ইরানি সশস্ত্র বাহিনীর এজেন্ডায় রয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। অপারেশন ট্রু প্রোমিজ থ্রির সর্বশেষ এবং ১৫তম পর্যায়ের হামলাকে ‘সবচেয়ে বড় হামলা’ বলে বর্ণনা করেছে কিছু ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম। এই হামলায় ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থান ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও ইরানি অভিযানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছবি ও ভিডিও প্রকাশের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা প্রকাশ করছে না ইসরায়েলি মিডিয়া। হতাহতের সংখ্যাও গোপন রাখা হচ্ছে; এমনকি, ইরানি হামলার সরাসরি সম্প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

একদিনে ৫০ ইসরায়েলি নিহতের খবর : এর আগে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অপারেশন ট্রু প্রোমিজের চতুর্দশ দফা হামলা চালায়। হামলায় এক গুচ্ছ কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করা হয়। এতে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের। ইসরায়েলের কয়েক স্তর-বিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিরভাগই তেলআবিবের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানে। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের আকাশে অন্তত ৫০টি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গেছে, যেগুলোর মধ্যে একাধিক প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র এই প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। ইসরায়েলি হতাহতের খবর প্রচার করার ওপর বিধিনিষেধ থাকলেও কোনো কোনো সূত্র শুধুমাত্র বৃহস্পতিবারের হামলায় ৫০ জনের বেশি ইহুদিবাদী নিহত হন বলে জানিয়েছে। হামলার বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, ইহুদিবাদীরা প্রাণভয়ে দিগি¦দিক ছুটে পালাচ্ছেন, কেউ ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছেন এবং কেউবা আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে না গিয়ে উল্টোদিকে দৌড় দিচ্ছেন। এ সময় ইহুদিবাদীদের আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে ভয়ঙ্কর শব্দের সাইরেন। এই হামলায় ইসরায়েল সরকারের বহু কৌশলগত স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে সামরিক ও গোয়েন্দা সদরদপ্তর। এসব স্থাপনায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র নিখুঁতভাবে আঘাত হানায় ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে।

৮ হাজার ইসরায়েলি বাস্তুহারা : ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার কারণে আট হাজারেরও বেশি ইসরায়েলি গৃহহীন হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিওথ আহরোনোথ। প্রপার্টি ট্যাক্স কম্পেনসেশন ফান্ডের বরাতে দৈনিকটি বলেছে, ভবন বা যানবাহনের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রায় ৩০ হাজার অনুরোধ তাদের কাছে জমা পড়েছে।

ইসরায়েলে হামলায় বিশ্ববাসী আনন্দিত- খামেনি : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইসরায়েলের ওপর চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বিশ্বের বহু সম্মানিত ও বিবেকবান মানুষকে আনন্দিত করেছে। তার এক্স অ্যাকাউন্টে শেয়ার করা একটি ভিডিওর ক্যাপশনে এমন মন্তব্য করা হয়। ভিডিওর শুরুতে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলার দৃশ্য এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চালানো সহিংসতা তুলে ধরা হয়। এরপর দেখা যায়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরায়েলে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ এবং সেখানকার জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্কের চিত্র। ভিডিওতে এ হামলার পর বিভিন্ন মুসলিম দেশে মানুষের উল্লাসও দেখানো হয়েছে। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিশ্বের সম্মানিতদের আনন্দিত করেছে।’ এই ভিডিওটি এমন এক সময় সামনে এলো, যখন ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাত নতুন মাত্রা পেয়েছে। একাধিক পাল্টাপাল্টি হামলার পর গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সরাসরি খামেনিকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘এমন একজনকে আর বাঁচিয়ে রাখা যায় না।’

তিনি বৃহস্পতিবার একটি হাসপাতালে ইরানি হামলায় আহতদের দেখতে গিয়ে এই মন্তব্য করেন। ইসরায়েলি সামরিক সূত্র জানায়, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি গুশ দান অঞ্চলকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছিল এবং এটি ছিল বহু ক্ষুদ্র সাব-ক্ষেপণাস্ত্রের সমন্বয়ে তৈরি। আঘাতের পর ক্ষেপণাস্ত্রটি বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে একাধিক স্থানে বিস্ফোরণ ঘটায়।

ইরান আরও কঠোর জবাব দেবে -পেজেশকিয়ান : ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইসরায়েলের আগ্রাসন নিঃশর্তভাবে বন্ধ করাই এ সংঘাত বন্ধের একমাত্র উপায়। গতকাল শুক্রবার এক্স-এ দেওয়া পোস্টে পেজেশকিয়ান লিখেছেন, ‘আমরা সব সময় শান্তি ও স্থিতিশীলতা চেয়েছি। চলমান চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের অবসানের একমাত্র পথ হলো শত্রুর আগ্রাসন নিঃশর্তভাবে বন্ধ করা এবং জায়নিস্ট সন্ত্রাসীদের দুঃসাহসিক তৎপরতা চিরতরে বন্ধের সুনির্দিষ্ট নিশ্চয়তা।’ আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ইরানের প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর আগ্রাসন যদি থামানো না হয়, তাহলে ইরান আরও কঠোর জবাব দেবে। সেই জবাব এমন হবে, যা আগ্রাসনকারীকে এ দেশের ওপর হামলার জন্য অনুতপ্ত করবে।

আগ্রাসন চললে কারও সঙ্গে আলোচনা করবে না ইরান : ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, ইসরায়েল হামলা চালিয়ে গেলে তিনি কারও সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত নন। ইউরোপীয় দেশের নেতাদের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকে অংশ নিতে জেনেভা রওনা হওয়ার আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে এ কথা বলেছেন আরাকচি। আরাকচি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আমরা যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি, তারপর অন্যান্য দেশ নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখবে বলেই আমার মনে হয়।’ জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের শুক্রবার জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনা করার কথা।

সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়ালে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে -ইরান

ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়ালে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে। তিনি বলেছেন, ?‘এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ মানে পুরো অঞ্চলেই নরক নেমে আসা। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। খতিবজাদে বলেন, ‘এটি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ নয়। ট্রাম্প যদি এই যুদ্ধে নিজেকে জড়ান, তাহলে তিনি ইতিহাসে এমন এক প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিহ্নিত হবেন, যিনি এমন একটি যুদ্ধে নেমেছিলেন, যা তার নয়।’ তিনি বলেন, ‘ইরান-ইসরায়েল সংঘাত আগে থেকেই জটিল। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পৃক্ততার অর্থ হবে আগুনে ঘি ঢালা। তার মতে, এটি কেবল একটি যুদ্ধ নয়, বরং গোটা অঞ্চলের জন্য অশান্তি ও ধ্বংস ডেকে আনবে।’ খতিবজাদে সতর্ক করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ সংঘাতকে আরও গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী করে তুলবে। এর ফলে বর্বরতা বন্ধ হবে না, বরং আরও ছড়িয়ে পড়বে। নিরীহ মানুষ বেশি ভুক্তভোগী হবে।’

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ : ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচিকে হত্যার একটি ইসরায়েলি ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিয়েছে দেশটির গোয়েন্দারা। ইরান সরকারের এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তেহরানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচিকে হত্যায় ইসরায়েলের বড়সড় চক্রান্ত ভেস্তে দিতে সক্ষম হয়েছে। লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল-মায়াদিনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা মোহাম্মদ হোসেইন রাঙ্গবারান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা’ গ্রহণের মাধ্যমেই এই ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি এই হত্যাচেষ্টাকে ‘বড় চক্রান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করে জানান, দেশটির গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা এই গুরুতর আগ্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে সামনে এল, যখন আব্বাস আরাকচি জেনেভায় জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য নিয়ে গঠিত ইউরোপীয় ত্রয়ীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে, ইরান সতর্ক করে বলেছে, দেশটির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ছে। এ অবস্থায় উচ্চপদস্থ ইরানি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পারমাণবিক ইস্যুতে এক সময়কার শীর্ষ আলোচক আরাকচি এখন পশ্চিমা কূটনীতিতে অভিজ্ঞ এক মুখ, এবং ওয়াশিংটন ও তেলআবিবের চাপের মুখে ইরানের অবস্থান দৃঢ়ভাবে তুলে ধরার অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব তিনি।

ক্লাস্টার বোমা নিয়ে ইসরায়েলে হামলা করেছে ইরান : ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ক্লাস্টার বোমা নিয়ে ইসরায়েলে হামলা করেছে- এমনটাই দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তারা বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ইরান অন্তত একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছুড়েছে, যা আকাশে ফেটে গিয়ে ছোট ছোট বোমা ছড়িয়ে দিয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি বাড়ানো। সাত দিন ধরে চলা এই যুদ্ধে প্রথমবারের মতো ক্লাস্টার বোমা ব্যবহারের দাবি করল ইসরায়েল। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম অ্যারাব নিউজ ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেনি এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র ওয়ারহেড ইসরায়েলি আকাশে প্রায় চার মাইল উচ্চতায় গিয়ে ফেটে পড়ে এবং প্রায় পাঁচ মাইল এলাকাজুড়ে ২০টি ছোট বোমা ছড়িয়ে দেয়। ঘটনাটি ঘটে মধ্য ইসরায়েলের আকাশে। টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর মধ্যে একটি বোমা মধ্য ইসরায়েলের আজোর শহরের একটি বাড়িতে আঘাত হানে। ক্লাস্টার বোমা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর, কারণ এগুলো এলোমেলোভাবে বিস্ফোরক ছড়িয়ে দেয় এবং অনেক সময় সেগুলোর কিছু অংশ অবিস্ফোরিত অবস্থায় থেকে গিয়ে যুদ্ধ শেষ হওয়ার বহু দিন পরও মানুষ হত্যা বা আহত করতে পারে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি গ্রাফিক প্রকাশ করে জনগণকে অবিস্ফোরিত বোমার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

ইরান নতুন প্রজন্মের সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র এখনও ব্যবহার করেনি : ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর ওপর পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ‘জায়নবাদীদের’ কড়া বার্তা দিলেও সামরিক বিশ্লেষকদের ধারণা, তেহরান এখনও তার নতুন প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে নামায়নি। ১৩ জুন বিনা উসকানিতে ইরানের ওপর আগ্রাসী হামলা চালায় ইসরায়েল। পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকার ওপর চালানো এ হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিক। ইসরায়েলের এ কর্মকাণ্ডের জবাবে ইরানের সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিক পাল্টা হামলা শুরু করে। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অ্যারোস্পেস ফোর্স গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস থ্রি’র অংশ হিসেবে ১৬ দফায় ইসরায়েল লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের এ হামলাগুলোর বিশেষ ১০টি বৈশিষ্ট্য ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে একপ্রকার অকার্যকর করে দিয়েছে।

কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য ট্রাম্পের দুই সপ্তাহ সময় : হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হামলার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিএনএনের খবরে বলা হয়, বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন ল্যাভিট এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ওই ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব বলেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ‘সরাসরি যুক্ত’ হবে কিনা তা নিয়ে ‘নানা জল্পনা-কল্পনা’ চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে ইরানের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আলোচনা না-ও হতে পারে। এর ওপর ভিত্তি করে সংঘাতে যাব কি যাব না, সে বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব।’ হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির ক্ষেত্রে ‘ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ না করার বিষয়টি’ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগের অবস্থান পুনরায় তুলে ধরে বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সুযোগ দেওয়া যাবে না।

ইরানের পর পাকিস্তানে হামলার হুমকি ইসরায়েলের : ইরানের পরেই পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের সাবেক উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও লেবার পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মেয়ের মাসরি। সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ হুমকি দেন। আরবি ও উর্দু ভাষায় মাসরি লেখেন, ‘ইরানের অভিযান শেষ হওয়ার পর আমরা পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারি।’ তিনি আরও লেখেন, ‘পাকিস্তান ইরান থেকে খুব দূরে নয়। এটুকু বুঝলেই যথেষ্ট।’ মাসরি বর্তমানে কোনো সরকারি পদে নেই, তবে তিনি লেবার পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের অংশ হওয়ায় ইসরায়েলি রাজনৈতিক ও কৌশলগত মহলে তার প্রভাব রয়েছে। মাসরির এই পোস্টের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনেকে পাকিস্তানের পক্ষে একজোট হয়ে মাসরির মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

তেহরানে হাসপাতাল লক্ষ্য করে হামলা : তেহরানের একটি হাসপাতালে আবারও ইসরায়েলি বোমা হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগের প্রধানের বিবৃতির বরাত দিয়ে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা জানায়, হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এটা তৃতীয় হাসপাতাল, যা ইসরায়েলি হামলার শিকার হলো। এতে ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নির্মম হামলার শিকার হয়েছে। বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সাত দিনের কাপুরুষোচিত আগ্রাসনে ইসরায়েল ছয়টির বেশি আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

আইআরজিসির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন খামেনি : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসির সর্বোচ্চ পরিষদের কাছে যুদ্ধকালীন ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ইরান ইন্টারন্যাশনাল।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের লাভিজানের একটি গোপন বাঙ্কারে সপরিবারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে খামেনিকে। তার সঙ্গে তার প্রভাবশালী ছেলে মোজতবা খামেনিও রয়েছেন। সম্প্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেছেন, আমরা জানি তথাকথিত ‘সুপ্রিম লিডার’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি সহজ টার্গেট, তবে আপাতত তাকে হত্যা করা হবে না। কিন্তু আমাদের ধৈর্য ফুরিয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষমতা হস্তান্তরের এ পদক্ষেপ একটি সম্ভাব্য ‘প্রি-এম্পটিভ ট্রান্সফার অব অথরিটি’। যদি খামেনি নিহত হন, এর মাধ্যমে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কমান্ড কাঠামো অক্ষুণ্ণ রাখা যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত