দেশে গ্যাসের উৎপাদন নিয়মিত কমছে। চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ তেমন বাড়ছে না। ফলে গ্যাস সরবরাহের সংকট কাটছেই না। কিছু এলাকায় গ্যাস থাকলেও সরবরাহ সামান্য। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, তাদের তিতাসের লাইনে গ্যাস সরবরাহ প্রায় সারা দিন বন্ধ ছিল। সবচেয়ে বেশি ভুগছেন শনিরআখড়া, মাতুয়াইলম, বনশ্রী, শান্তিনগর ও আজিমপুরের বাসিন্দারা।
জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালীর গভীর সাগরে অবস্থিত টার্মিনাল থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। গত মঙ্গলবার থেকে এ সমস্যা শুরু হয়। এতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে বাসাবাড়ি ও শিল্পে ভোগান্তি চরম আকার নেয়। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত দুই এলএনজি টার্মিনাল থেকে ১১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক অন্তত ৪২০ কোটি ঘনফুট। বিপরীতে এলএনজিসহ বর্তমানে দিনে গড় সরবরাহ ২৮১ কোটি ঘনফুট। এলএনজির সরবরাহ কমায় মোট গ্যাস সরবরাহ কমে দাঁড়ায় ২০০ কোটি ঘনফুট। ফলে দেশজুড়ে সংকট বিরাট আকার ধারণ করে।
যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকার বাসিন্দা লাভলী আক্তার বলেন, আগে গভীর রাতে কিছুটা গ্যাস পাওয়া যেত, অনেকে রাত জেগে রান্না করতে পারতেন। এখন গ্যাস একেবারে উধাও। মাসে মাসে গ্যাসের বিল দিচ্ছি, আবার সিলিন্ডারও কিনছি। এভাবে চলতে থাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে।
আমদানি করা এলএনজি খালাসে বিঘ্ন ঘটায় তীব্র গ্যাস সংকটে পড়েছে মানুষ। গত মঙ্গলবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কল কারখানার চাকা বন্ধ হয়েছে, সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো হঠাৎ গ্যাস দিতে পারছে না, বাসাবাড়িতেও রান্নাবান্না বন্ধ হওয়ার উপক্রম। পেট্রোবাংলার অপারেশন অ্যান্ড মাইন বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর নাগাদ অনেক এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তবে সব জায়গায় সরবরাহ স্বাভাবিক হতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। সে কারণে একই সময়ে ঢাকার সব আবাসিক এলাকায় গ্যাস সংকট লাঘবের খবর মেলেনি।
রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় ভোজন বিলাস নামের একটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন শুক্রবার বলেন, গত দুই দিন ধরে বনশ্রী এলাকায় গ্যাস নেই। এখনও নেই। আমার হোটেলের রান্না ঘরে লাইনের গ্যাস আর সামনে রুটি পরটা ভাজার জন্য এলপি গ্যাস। গত দুই দিন এলপি গ্যাসের চুলা দিয়েই যতটা সম্ভব রান্না করতে হচ্ছে। একই পরিস্থিতি বাসাবাড়িতেও। গ্যাস নেই, তাই রান্নাও নেই। যাদের বিকল্প চুলা আছে তারা কিছুটা পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে পারলেও বাকিরা পড়ছেন বিড়ম্বনায়। খিলগাঁওয়ের একটি ছোট খাবার হোটেলের কর্মচারী শরীফ বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দেখলাম হোটেলে কাস্টমারের ভিড় অন্যদিনের চেয়ে বেশি। পরে শুনলাম গ্যাস সংকটের কারণে অনেকের বাসাবাড়িতে রান্না হয়নি।
গ্যাস সংকট: বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে ভাসমান গ্যাস টার্মিনালে এলএনজির জাহাজ বেড়ানো যাচ্ছিল না। ফলে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে থাকে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমে গিয়েছিল এই কারণে। সমস্যা দেখা দেওয়ার পর থেকে দৈনিক গ্যাস প্রতিবেদন প্রকাশ করা বন্ধ রেখেছে পেট্রোবাংলা। তবে সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ছিল ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি। সেই সরবরাহ দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের নিচে নামছে।
বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর বলেন, এলএনজি টার্মিনালে সমস্যা হওয়ার কারণে গত বুধবার থেকে দেশজুড়ে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো গ্যাস সংকট তৈরি হয়েছে।