ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা, অভিযুক্ত ৩০

আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা, অভিযুক্ত ৩০

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, আবু সাঈদ হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন আমাদের কাছে জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত প্রতিবেদনে ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই তদন্ত প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই করে, আগামী রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) হিসেবে উপস্থাপন করা হবে বলে আশা করছি। এর আগে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই মামলার চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এরপর এই মামলার চার আসামির মধ্যে পুলিশের সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন ও সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়কে আগামী ১৮ জুন এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী আকাশকে ১৯ জুন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

এদিকে আবু সাইদ হত্যা মামলায় আগামী রোববার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করবে প্রসিকিউশন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলাটির অভিযোগ দাখিল করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মিজানুল ইসলাম বলেন, আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্রতিবেদন পেয়েছি। এ প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে আমরা আগামী রোববার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করব।

এর আগে আবু সাইদ হত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। তদন্ত প্রতিবেদনে আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে ৩০ জনের সম্পৃক্ততার বিষয় উঠে আসে।এর আগে শুনানিতে প্রসিকিউশন ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন সাবেক এসআই আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশসহ আরও অনেকে সহায়তা ও উসকানি দিয়েছেন। ওই চার আসামি অন্য মামলায় আগে থেকেই গ্রেপ্তার ছিলেন।

গত ৯ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল এই চার আসামিকে হাজির করার নির্দেশ দেন এবং ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন।

সেদিন আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে পুলিশের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে যান। তাকে গুলি করার ভিডিও সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলে ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। সেদিন থেকেই সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

পরদিন থেকে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করা হয়। এরপর একের পর এক মৃত্যু, সংঘর্ষ ও আগুনের মধ্যে ১৯ জুলাই কারফিউ দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি শেখ হাসিনা সরকার। তুমুল গণ-আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট পতন হয় টানা সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনার। পতনের পরপর শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।

সরকার পতনের আন্দোলনে সরকারি হিসাবে সাড়ে আটশর মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় পতিত সরকারের নেতৃত্বে থাকা সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্তা এবং মাঠ পর্যায়ে যাদের বিরুদ্ধে গুলি করার অভিযোগ আছে, তাদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যে ট্রাইব্যুনালটি মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারই গঠন করেছিল।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাইদ হত্যাকাণ্ডের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের দেওয়া চার্জশিট প্রত্যাখ্যান করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করেছেন, গণশুনানি কিংবা প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ছাড়াই এই চার্জশিট তৈরি করা হয়েছে, যা ভিত্তিহীন ও মনগড়া।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী অংশ নেন। অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল, জেদিম, রায়হান, সিনথিয়াসহ আরও অনেকে।

বক্তারা বলেন, ঢাকায় বসেই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা আবু সাইদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি পক্ষপাতদুষ্ট ও বিকৃত তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। তারা শহীদ আবু সাঈদের সহপাঠী, আন্দোলনের সহযোদ্ধা কিংবা প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নেননি। এমনকি কোনও গণশুনানিও হয়নি।

শিক্ষার্থীদের দাবি, সাবেক প্রক্টর শরীফুল ইসলামকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে, যদিও তিনি সেই সময় আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। মূল অপরাধীদের আড়াল করতেই এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।শিক্ষার্থীরা চার্জশিট প্রত্যাহার করে নতুন করে নিরপেক্ষ তদন্ত ও গণশুনানি আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রকৃত হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকত আলী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কী বলেছে, সে বিষয়ে আমি এখনও জানি না। তবে চার্জশিট দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলাটা জরুরি ছিল বলে আমি মনে করি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত