ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গ্যাসের দাম বাড়ানোর শুনানি স্থগিতের দাবি ক্যাবের

গ্যাসের দাম বাড়ানোর শুনানি স্থগিতের দাবি ক্যাবের

শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আমলে নিয়ে আগামী বুধবার শুনানি ডেকেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। ওই শুনানি স্থগিত করার দাবি জানিয়ে গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। দাবি মানা না হলে সংগঠনটি থেকে শুনানিতে অংশ নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর কথাও বলা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ক্যাব বলেছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর এ উদ্যোগ জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির অপতৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়ে আরো বলা হয়, ‘বর্তমান বিইআরসি আগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে। এটা আগের সরকারের ধারাবাহিকতা। এটা উদ্বেগের। যারা দাম বাড়ানোর এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, তাদের সবার প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধেই আন্দোলন হয়েছে, রক্তদান হয়েছে, রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। এমন অবস্থায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বৈষম্যমূলক প্রস্তাব অনুমোদন করে জ্বালানি বিভাগ বিস্মিত করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আন্দোলনের সরকারের আচরণ যদি আগের সরকারের মতো হয় তাহলে আন্দোলন শুরুতেই ব্যর্থ মনে হবে। ৬ মাসে সরকারের দাম বাড়ানো, রপ্তানি শিল্পকে অস্থির করে তোলাটা অশনিসংকেত মনে হয়। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা দরকার, এটা ক্যাব বিশ্বাস করে না। নেপথ্যের কোনো শক্তি এটা করাচ্ছে।’ ক্যাব আরও বলছে, গত ১৫ বছরে প্রতিযোগিতা ছাড়া কাজ দেয়া হয়েছে। লুণ্ঠনমূলক ট্যারিফ নির্ধারণ করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের খরচ বাড়ানো হয়েছে। এগুলো এখন আদালতে প্রতিষ্ঠিত। মূল্যবৃদ্ধির আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অযৌক্তিক ব্যয়, লুণ্ঠনমূলক খরচের হিসাব বের করতে বিইআরসির কমিটি করা উচিত বলছে ক্যাব। সেটি করার পর তার ভিত্তিতে খরচ কমিয়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম কমানোর প্রস্তাব করতে পারে বিইআরসি। শেষ মুহূর্তে হলেও বিইআরসি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির শুনানি স্থগিত করবে বলেও আশা প্রকাশ করছেন ক্যাব নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, ‘বিইআরসি শুরুতেই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আবেদন খারিজ করে দিতে পারত। শুনানির আগে উন্মুক্ত সভা ডেকে যৌক্তিকতা বিচার করা যেত। এখন কোনো উন্মুক্ত সভা করা হয় না। এটি ভোক্তা স্বার্থের পরিপন্থী।’ যেগুলো প্রতিরোধ করা বিইআরসির দায়িত্ব, সেগুলোকে তারা সুরক্ষা দিচ্ছে বলেন এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, দাম বাড়ানোর দিকে গেলে বিইআরসি গণশত্রুতে পরিণত হবে। তারা গণশত্রু হতে চাইবে না বলেই বিশ্বাস করতে চায় ভোক্তারা। এদিন ক্যাবের লিখিত বক্তব্যে বিইআরসির চেয়ারম্যানের প্রতি তিনটি অনুরোধ করা হয়। এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিইআরসিতে চিঠি দিয়ে একই অনুরোধ করেছিল ক্যাব। তাতে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, এলএনজি, এলপিজি, সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ সরবরাহে অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় কতটা সমন্বয় হয়েছে তার পরিমাণ বিআইরসি কর্তৃক নির্ধারিত হতে হবে। লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও মুনাফা রোধ করে এবং সরকারের রাজস্ব কমিয়ে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির মূল্যহার এবং ভর্তুকি কী পরিমাণ কমানো সম্ভব; তা বিইআরসির হিসাব করতে হবে। জ্বালানি–সংক্রান্ত অপরাধীদের বিচারের জন্য বিইআরসি আইনের আওতায় ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। সম্মেলনে ক্যাব বিইআরসির প্রতি তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যহার কমিয়ে আনার এবং মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার আহ্বান জানায়। এদিন ক্যাবের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এম শামসুল আলম। লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিইআরসি গত ১৫ বছর শুধু মূল্যহার নির্ধারণের কাজ করেছে।

বর্তমানেও এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও মূল্যহার কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিইআরসি। এখন তারা গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করেছে। বিদ্যুতেরও শুরু করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির ভুইয়া। সঞ্চালনা করেন শুভ কিবরিয়া, তিনি পেশায় সাংবাদিক। ধন্যবাদ জানান ক্যাবের সদস্য শওকত আলী খান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত