ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

রংপুর অঞ্চলের আলু পচে নষ্ট হচ্ছে, লোকসানে কৃষক

রংপুর অঞ্চলের আলু পচে নষ্ট হচ্ছে, লোকসানে কৃষক

চলতি মৌসুমে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আলুর চাষ হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। তবে এবার দাম ভালো না পাওয়ায় লাভের পরিবর্তে লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।

অন্যদিকে আলু বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা না থাকায় ও আলু রাখার সংরক্ষণাগারের অভাবে কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ফলে রংপুর মহানগরীসহ জেলা ও এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় পচে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার মেট্রিক টন আলু। এতে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলোর মির্জাপুর ইউনিয়নের আলু ব্যবসায়ী মামুন আর রশিদ জানান চলতি বছর ৫ লাখ টাকার আলু কিনেছেন। তিনি হিমাগারে জায়গা না পাওয়ায় প্রায় আলুগুলো নষ্ট হয়েছে। পচেও গেছে। তিনি জানান নিজ গুদামে গরমের কারণে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। অতিগরমের কারণে, বিদ্যুতের সাপোর্ট না যাওয়ায় তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। রংপুর মহানগরীর তামপাট এলাকার মুসা মিয়া ও নুরুল ইসলামসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, এবার আলু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। না পারছি ফেলে দিতে, না পারছি সংরক্ষণ করতে। কী করব বুঝতে পারছি না। দামও নেই। সরকার যদি বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতো তাহলেও তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হতেন।

কৃষি বিভাগ বলছেন, চলতি বছর রংপুর অঞ্চলে ১ লাখ ১ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৬৮২ মেট্রিক টন। এ বিভাগের কর্মকর্তারা আলু প্রসঙ্গে আশার কথা শোনাতে না পারলেও জানান রপ্তানির চেষ্টা চলছে।

সরেজমিনে জানা যায়, এ বছর বাম্পার ফলন হওয়ায় আলু সংরক্ষণ করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রংপুরের কৃষকরা। হিমাগারে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কৃষকের বাড়িতেই আলু পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হিমাগারে জায়গা না পাওয়ায় অনেকে ঘরেই আলু সংরক্ষণ করেছেন। ফলে যথাযথ নিয়মে আলু রাখতে না পারায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কৃষকের বাড়ির গোয়াল ঘর, উঠান, পুকুর পাড় সর্বত্রই আলুর স্তূপ। আলু দীর্ঘদিন থেকে পড়ে থাকার কারণে পচন ধরে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

কৃষকরা জানান, টাকা খরচ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত আলু এখন গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। এর প্রতিকার কী? এমন অবস্থায় কৃষকদের কোনো আশার কথা শোনাতে না পারলেও বরাবরের মতো দায়সারা উত্তর কৃষি বিভাগের।

নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে কৃষি বিভাগের কয়েকজন বলেন, আমরা কৃষকদের এবার আলু আবাদে নিরুৎসাহিত করেছিলাম কিন্তু তাদের থামাতে পারি নাই। কারণ গত বছর আলুতে বেশি লাভ হওয়ায় এবার সবাই আলু চাষে মনোযোগ দিয়েছিল, তাই এখন সবাই এর ফল ভোগ করছে।

এ দিকে রংপুরে আলুর হিমাগার থেকে প্রায় ৭ হাজার কেজি মিষ্টি জব্দ করেছে যৌথবাহিনী। রংপুরে আলুর হিমাগারে অবৈধভাবে প্রতারণা করে পুষ্টির প্রায় ৭ হাজার কেজি মিষ্টি মজুদের ফলে সেনাবাহিনীর অভিযানে দুই লাখ টাকা জরিমানা ও জব্দ করা হয়েছে।

গত বুধবার রাতে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে রংপুর নগরীর ময়নাকুটির এগ্রো ইন্ড্রাস্টিজ লিমিটেডে পুষ্টি মিষ্টির প্রায়৭ হাজার দই, মিষ্টি মজুদ করে রাখায় সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে সেগুলো জব্দ করে ধ্বংস এবং পৃথকভাবে জরিমানা করা হয়।

এ সময় পুষ্টি মিষ্টির সত্ত্বাধিকারী মিঠু বলেন, ১২ মে মাস থেকে আমরা সংরক্ষণ করছি। ঈদ উপলক্ষে দই মিষ্টির চাহিদার কারণে আলুর হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এভাবে আলুর হিমাগারে দই মিষ্টি রাখা স্বাস্থ্যকর নয়, এটি অনেক বড় ভুল হয়েছে আগামীতে এধরনের ভুল আর হবেনা। পুষ্টি মিষ্টির পক্ষ থেকে দেশবাসীর সবার কাছে মাফ চাচ্ছি।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি বছর রংপুর অঞ্চলে ১ লাখ ১ হাজার ৫৭৬ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন হয়েছে ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৬৮২ মেট্রিক টন। সংরক্ষণাগারের অভাবে কৃষকরা কিছুটা বিপাকে পড়েছেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত