ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল ও সীমানা পুনর্নির্ধারণে সব দল একমত

তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল ও সীমানা পুনর্নির্ধারণে সব দল একমত

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিনের বৈঠক রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে অনুষ্ঠিত হয় গতকাল। ওই বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এবং নির্বাচনী এলাকার সীমানা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, আলোচনার সূচিতে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বিষয় ছিল। এরমধ্যে আমরা প্রথম দুটি বিষয় আলোচনা করতে পেরেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।

সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে যে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে তা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচনী আসন নির্ধারণ নিয়ে কাজ চলমান দেখতে পাচ্ছি। নির্বাচন সংস্কার কমিশন থেকে সুস্পষ্ট সুপারিশ ছিল। সেখানে বলা হয়েছে আশু ব্যবস্থা হিসেবে কী করা যেতে পারে। দ্বিতীয় বিষয় দীর্ঘমেয়াদে সাংবিধানিকভাবে কিছু করা। দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধানে যে ঐকমত্য হয়েছে তা হলো- প্রতি আদমশুমারি অনধিক ১০ বছর পরে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের দফা ১-এর(ঘ) শেষে আইনের দ্বারা একটি বিধান যুক্ত করা। এর অর্থ হচ্ছে সংসদীয় আসন নির্ধারণ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা।

‘এই কমিটির ক্ষেত্রে আরও বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা নির্ধারণের আইন ২০২১ যেটা ২০২৫ সালে সংশোধিত হয়েছে। আমরা সংবিধানে কিছু বিষয় যুক্ত করার কথা বলেছি। তার পাশাপাশি সেটি বাস্তবায়ন করতে আইনের মধ্য দিয়ে কমিটির পরিধি ও কার্যপরিধি গঠন নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন থাকার কথা বলেছি। দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী সমাধানের জন্য এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে।’ আলী রীয়াজ বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় যথাযথ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষায়িত কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। কমিটি গঠন হয়ে থাকলে পরিবর্তন সাধন করে সেই কমিটি দ্বারা সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করা। বর্তমান যে কমিটি সেটি যেন পরিবর্তন করে রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের প্রতিফলন ঘটে। আমরা এ বিষয়টি সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের জন্য অভিন্ন মত পোষণ করেছে। সুনির্দিষ্ট ঐকমত্য আছে। এর গঠন এবং কাঠামোগত বিষয় ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার কতদিন থাকবে তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আলোচনায় বিভিন্ন রকম মতামত এসেছে। এ বিষয়ে দুটি সুপারিশ ছিল—সংবিধান সংস্কার কমিশন থেকে ৯০ দিনের আর নির্বাচন কমিশন থেকে সুপারিশ ছিল ১২০ দিনের। সময় ও পরিধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলী রীয়াজ বলেন, কোনো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ হবে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো অনেক কাছাকাছি এসেছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। আশা করি এসব বিষয়ে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবো। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই মর্মে সহযোগিতা থাকলে চলতি জুলাইয়ের মধ্যে আমরা একটি জুলাই সনদ তৈরি করতে পারবো। ড. আলী রীয়াজ বলেন, অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে দ্বিকক্ষীয় সংসদের পক্ষে, উচ্চকক্ষ প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে আসন গঠনের একমত বেশিরভাগ দল। তবে কিছু দল একমত হয়নি।

এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অমীমাংসিত সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে গণশুনানি আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বরাবরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান আজ বুধবার এ চিঠি পাঠান। তিনি বলেছেন, গণশুনানি আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে দুপুরে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে এ আইনজীবী বলেছেন, তিনি গভীরভাবে লক্ষ করছেন যে জাতীয় স্বার্থে গঠিত ঐকমত্য কমিশন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত গ্রহণ করে একটি সমন্বিত সংস্কার পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত সংস্কারবিষয়ক আলোচনায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো কোনো ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এসব অমীমাংসিত ইস্যুর মধ্যে নির্বাচনপদ্ধতির পরিবর্তন, সংসদীয় ক্ষমতার ভারসাম্য, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা, রাজনৈতিক অর্থায়নের স্বচ্ছতা, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, এসব ইস্যু দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাববাহী। কিন্তু শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সমঝোতার অভাবে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনির্ধারিত থাকলে তা একদিকে যেমন গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করবে, অন্যদিকে তেমনি সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা পূরণেও ঘাটতি থাকবে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী সংগঠন, আইনজীবী সমাজ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক জনগণের মতামত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি বিস্তৃত গণশুনানি প্রক্রিয়া পরিচালনা করা জরুরি বলে বিশ্বাস করেন চিঠিদাতা এ আইনজীবী।

চিঠিতে আরও বলা হয়, গণশুনানির মাধ্যমে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে অমীমাংসিত সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে গণতান্ত্রিক রায় প্রতিফলিত হবে। পাশাপাশি কমিশনের সিদ্ধান্তে জনসমর্থন বৃদ্ধি পাবে। রাজনৈতিক দলগুলোও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বাধ্য হবে। সর্বোপরি একটি দীর্ঘস্থায়ী ও কার্যকর সংস্কার কাঠামো প্রতিষ্ঠা পাবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বরাবরে পাঠানো চিঠির শেষাংশে এ আইনজীবী বলেছেন, ‘বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, অতিসত্বর এক বা একাধিক ধাপে গণশুনানির আয়োজন করার জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করুন, যেখানে সাধারণ জনগণ, সুশীল সমাজ, নাগরিক নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবীরা তাঁদের যুক্তিগ্রাহ্য মতামত ও প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারবেন।’ আইনজীবী তার চিঠিতে আরও বলেছেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন আলী রীয়াজ এই আবেদনের গুরুত্ব অনুধাবন করে কমিশনের নীতিগত স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের লক্ষ্যে গণশুনানি আয়োজনের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত