দীর্ঘ সময় ফোন ব্যবহারের ফলে ব্যাটারির চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে আসে। ফের পূর্ণ চার্জ করতে গেলে লাগে দীর্ঘ সময়। এই সময়ের নতুন সমাধান তাই ফাস্ট চার্জার।
শহুরে জীবনে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় আমাদের হাতে থাকা ফোন। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাহায্য করে এটি। অনেক বেশি ব্যবহারের ফলে ফোনের চার্জ করা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকেন ব্যবহারকারীরা। এজন্য দ্রুত চার্জার ব্যবহার করতে পারেন।
হারমনি হেলথকেয়ার আইটি অনুসারে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় সোয়া ৫ ঘণ্টা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। এত দীর্ঘ সময় ফোন ব্যবহারের ফলে ব্যাটারির চার্জ দ্রুত ফুরিয়ে যায়। আবার চার্জ করতে গেলে সাধারণ ১০ বা ১৮ ওয়াটের চার্জার দিয়ে পুরোপুরি চার্জড কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে। এর চেয়ে দ্রুত উপায় হচ্ছে ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করা, যার চার্জিং সক্ষমতা ১৮ থেকে ৬৫ ওয়াট পর্যন্ত হতে পারে। দ্রুত চার্জার ব্যবহারে কেবল ৩০ মিনিটেই ব্যাটারির প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জড হতে পারে। এসব চার্জার ‘পাওয়ার হ্যান্ডশেইক প্রোটোকল’ ব্যবহার করে ডিভাইস অনুযায়ী সঠিক পরিমাণ বিদ্যুৎও সরবরাহ করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট স্ল্যাশগিয়ার।
নিরাপদ ও কার্যকর চার্জিং নিশ্চিতের জন্য ফোন চার্জার ও ফোনের মধ্যে একটি বিশেষ যোগাযোগ প্রক্রিয়া রয়েছে, যেটিকে বলা হচ্ছে ‘পাওয়ার হ্যান্ডশেইক’। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চার্জারটি ফোনের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করে জেনে নেয় ফোনটি কত ভোল্ট ও বিদ্যুৎ নিতে পারে। ফলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে ফোনের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। দ্রুত চার্জিংয়ের ক্ষেত্রে চার্জার প্রথমে সাধারণভাবে ৫ ভোল্ট বিদ্যুৎ দেয়। এরপর ফোন ও চার্জার উভয়ের পক্ষেই যদি তা নিরাপদ হয় তাহলে আরও দ্রুত চার্জ সম্পন্ন করতে চার্জারটি উচ্চ ভোল্টে চার্জ দিতে শুরু করে।
বর্তমানে মোবাইল ফোনের জন্য বেশ কয়েকটি দ্রুত চার্জিং প্রোটোকল রয়েছে, যার মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘ইউএসবি পাওয়ার ডেলিভারি’ বা ইউএসবি। কিছু প্রোটোকল নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের সঙ্গে জড়িত, যেমন– ‘কোয়ালকম কুইক চার্জ’, ‘স্যামসাং অ্যাডাপ্টিভ দ্রুত চার্জিং’, ‘ওপিপিও ভিওওসি’ এবং ‘হুয়াওয়ে সুপারচার্জ’। এসব চার্জিং প্রোটোকলের বিভিন্ন কারণের মধ্যে রয়েছে নিজস্ব প্রযুক্তি, নির্মাতাদের পছন্দ, সর্বোচ্চ চার্জিং গতি নিশ্চিত করা ও নিরাপত্তার মতো বিষয়।
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের দ্রুত চার্জারও বাজারে রয়েছে, যা এসব প্রোটোকলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। তাই নিজের ফোনের সঙ্গে কোন দ্রুত চার্জারটি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।
দ্রুত চার্জিং বুঝেশুনে ব্যবহার করাই ভালো: প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অনেক বেশি শক্তি সরবরাহ করে দ্রুত চার্জিং। ফলে ব্যাটারি অনেক দ্রুত চার্জ হয়। এটি ব্যবহারে সাধারণ একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, দ্রুত চার্জিংয়ে ফোনের ক্ষতি করে, যেটি ঠিক নয়। বিভিন্ন দ্রুত চার্জিং প্রোটোকলকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যেন তা ফোন ও চার্জারের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ফোনের যাতে অতিরিক্ত গরম বা ক্ষতির ঝুঁকি না থাকে। ফোন বা ট্যাবলেট দ্রুত চার্জ করার সুবিধা ব্যবহারকারীর সময় বাঁচানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ খরচও কমিয়ে আনতে পারে। কিছু ফোন ও চার্জারে উন্নত ফিচারও রয়েছে, যেমন ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, যা ডিভাইসকে ভোল্টেজ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ফলে ব্যাটারির গরম হওয়া কমাতে সহায়তা করে ব্যাটারির আয়ু বা স্থায়িত্ব বাড়াতে পারে।
মোবাইল ডিভাইসে দ্রুত চার্জিং সহজ মনে হলেও, ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়ী কর্মসক্ষমতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সঠিক চার্জিং পদ্ধতি মেনে চলা জরুরি। সবসময় ব্যাটারিকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ করা ব্যাটারির আয়ু কমাতে বা চার্জিং ধীর করে দিতে পারে। দ্রুত চার্জিংয়ের সুবিধা পুরোপুরি পেতে চাইলে আপনার ফোন নির্মাতার নির্দেশিকা অনুসরণ ও ডিভাইসের জন্য নির্ধারিত সঠিক চার্জারটি ব্যবহার করুন।