সিলেটে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে চর্মরোগ স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া। সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ছোঁয়াছে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। গত আড়াই মাসে শুধু সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে এই রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫ হাজার ৩৫৫ জন। তাদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধরাও রয়েছেন। এর বাইরে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। এ অবস্থায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্ক্যাবিস রোগের বহুল প্রচলিত কয়েকটি ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরা বলছেন, স্ক্যাবিসের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী একটি লোশন সরকারি হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধগুলো কিনতে হচ্ছে। ‘স্ক্যাবিসে আক্রান্তের হার ব্যাপকহারে বেড়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালে স্ক্যাবিসসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্তদের ভিড় থাকছে। বিশেষ করে গত কয়েক মাস ধরে এ ধরনের রোগী বেশি আসছেন।’ চিকিৎসকরা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, গরমণ্ডআর্দ্র পরিবেশ এবং পরিচ্ছন্নতার অভাব এই রোগ ছড়ানোর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া সিলেটে বারবার বন্যা ও তাপমাত্রার তারতথ্যের কারণে রোগটি ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বাসার একজনের স্ক্যাবিস হলে ব্যবহৃত কাপড়সহ সবকিছু গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধোয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যমতে, এপ্রিল মাসে হাসপাতালের বহির্বিভাগে শুধু স্ক্যাবিসের চিকিৎসা নিয়েছেন পাঁচ হাজার ২৭১ জন। তারমধ্যে শূন্য থেকে ৯ বছর বয়সের এক হাজার ১০২জন, ১০-২৪ বছরের এক হাজার ৫৪৯ জন, ২৫-৪৯ বছরের দুই হাজার ২ জন, ৫০-৮০ বছরের ৫৯৭ জন ও ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে ২১ জন। মে মাসে এই হাসপাতালে স্ক্যাবিসের চিকিৎসা নিয়েছেন ছয় হাজার ৩৫০ জন। তারমধ্যে শূন্য থেকে ৯ বছর বয়সের এক হাজার ৩৫৮ জন, ১০-২৪ বছরের এক হাজার ৮৭৭ জন, ২৫-৪৯ বছরের দুই হাজার ৩৬৪ জন, ৫০-৮০ বছরের ৭৩৩ জন ও ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে ১৮ জন। সবশেষ চলতি মাসের ১৯ জুন পর্যন্ত স্ক্যাবিসের চিকিৎসা নিয়েছেন তিন হাজার ৭৩৪ জন। এরমধ্যে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটির কারণে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। অর্থাৎ ৯ দিনে ওসমানী হাসপাতালে স্ক্যাবিসের চিকিৎসা নিয়েছেন তনি হাজার ৭৩৪ জন। তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ৯ বছর বয়সের এক হাজার ১০৪ জন, ১০-২৪ বছরের ৯৭০ জন, ২৫-৪৯ বছরের এক হাজার ২৫৩ জন, ৫০-৮০ বছরের ৩৯২ জন ও ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে ১৫ জন। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী বলেন, স্ক্যাবিসে আক্রান্তের হার ব্যাপকহারে বেড়েছে। প্রতিদিন হাসপাতালে স্ক্যাবিসসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্তদের ভিড় থাকছে। বিশেষ করে গত কয়েক মাস ধরে এ ধরনের রোগী বেশি আসছেন। ‘গত আড়াই মাসে শুধু সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে এই রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন ১৫ হাজার ৩৫৫ জন। তাদের মধ্যে শিশু, নারী ও বৃদ্ধরাও রয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, স্ক্যাবিস রোগটি সারা বছরই থাকে। তবে সাধারণত গরম বেশি হলে এই ছোঁয়াছে রোগটি বেড়ে যায়। এটি মূলত ব্যক্তির হাইজিনের (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) ওপর নির্ভর করে। এজন্য নিজেদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। ডা. সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী বলেন, স্ক্যাবিস পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। তবে সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি বড় আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এদিকে, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালেও বাড়ছে স্ক্যাবিসে আক্রান্তদের সংখ্যা। বিশেষ করে যেসব এলাকা বারবার বন্যা আক্রান্ত হচ্ছে সেসব এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতেও স্ক্যাবিসে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ‘গত তিন-চার মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে গড়ে ৮০ শতাংশই স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। ডাবল ডোজ দেওয়ার পরেও অনেক রোগীরা সুফল পাচ্ছেন না।’ গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন বলেন, ‘প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ খোস-পাঁচড়ায় আক্রান্ত।’ তিনি বলেন, ‘স্ক্যাবিসের সব ধরনের ওষুধ দেয়া যাচ্ছে না। অয়েনমেন্ট ও ট্যাবলেটের মজুত রয়েছে।