ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দুর্যোগের শিকার উপকূলবাসী শহরের জীবনেও নানা বঞ্চনা

সেমিনারে বক্তারা
দুর্যোগের শিকার উপকূলবাসী শহরের জীবনেও নানা বঞ্চনা

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার উপকূলবাসীর শহর অভিবাসন জীবনও বঞ্চনায় গাথা বলে জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, অস্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবন, লবণাক্ততা ও নদীভাঙনের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের হার ক্রমবর্ধমান। এসব পরিবার রাজধানী ছাড়াও খুলনা ও চট্টগ্রামের মতো শহরে আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু এসব শহরে এসেও তারা নতুন ধরনের সংকটের মুখোমুখি হন।

যেমন অনিরাপদ আবাসন, পানি-স্বাস্থ্য-শিক্ষা সেবার অভাব এবং সামাজিক বঞ্চনা। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে কারিতাস বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিবাসন ও নগর জীবনের বাস্তবতা নীতিমালা বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পন্থা’ শীর্ষক পরামর্শমূলক সভায় এসব কথা বলেন তারা।

সভায় কারিতাস বাংলাদেশের পরিচালক (কর্মসূচি) দাউদ জীবন দাশ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীসহ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত, বিপদাপন্ন ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি নিরসন, অভিযোজন ও জীবনমান উন্নয়ন সংক্রান্ত কারিতাস বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন। সভায় প্রবন্ধের ওপর বক্তব্য দেন সাংবাদিক সোহরাব হাসান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, কারিতাস বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান অ্যালেক্সজান্ডার ত্রিপুরা প্রমুখ।

সোহরাব হাসান বলেন, উপকূলীয় এলাকায় হাজার হাজার একর ফসলি জমি ঘের করা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় টেকসই বাধ নেই। বিশেষ করে সাতক্ষীরার মানুষরা নিজেরাই মানবঢাল হয়ে বাঁধ তৈরি করেন সংকালীন সময়ে। তারা মন্ত্রণালয় কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপেক্ষায় থাকেনি। উপকূলের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সংকট মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তারা ভালো পরিবেশ পাচ্ছেন না এ কারণে প্রতিনিয়ত নিজ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। ঢাকা শহরের ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বড় অংশই মৌসুমী। তারা এই শহরে এলাকা থেকে এসেছেন। সেখানকার বায়ূ ও পানিকে সুন্দর রাখতে হবে তা না হলে পানিবাহিত রোগ বিস্তার লাভ করবে। তিনি বলেন, শহরের পরিবেশও ভালো রাখতে হবে। এ নিয়ে সরকারসহ সবাইকে কাজ করতে হবে। এটা করতে না পারলে ডেঙ্গুসহ নানা রোগ আসন গেড়ে বসবে। আজ ভারী বৃষ্টি হলেই শহরের পানি নামে না, খারাপ হয়ে যায় চট্টগ্রামের অবস্থা। মানুষ নিরুপায় হয়ে শহরে আসছেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করলে উভয় স্থানের পরিবেশই ভালো থাকবে, দেশটাও সুন্দর হবে। মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, ঘূর্ণিঝড়, অস্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবন, লবণাক্ততা ও নদীভাঙনের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শহরমুখী হচ্ছেন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। কেন তারা নিজ এলাকায় নিরাপদে থাকতে পারছেন না এটা নিয়ে আমাদের যথা সময়ে কাজ করতে হবে।

এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে কারিতাস বাংলাদেশ জানায়, ২০০৮-২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশে ৪৭ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গবেষণা সংস্থা রামরু ও এসসিএমআরের মতে, ২০১১ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে ১.৬ থেকে ২.৬ কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হতে পারে। জিআইজেড-এর ২০২৩ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, শহরে আশ্রয় নেওয়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশই উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার।

দুর্যোগ সাড়াদান, প্রশমণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে এ পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি গৃহ নির্মাণ, পয়নিঃষ্কাশ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং কমিউনিটি অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ৪ কোটি ৭০ লাখের বেশি মানুষের কাছে ভালোবাসাপূর্ণ সেবা পৌঁছে দিয়েছে। এছাড়াও কারতিাস ৩ হাজার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং ১৪ হাজার কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। শুধুমাত্র উপকূলীয় এবং বন্যাপ্রবণ এলাকার দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি প্রশমনে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ৩২৯টি ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত