ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে চামড়া নিয়ে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

চট্টগ্রামে চামড়া নিয়ে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

প্রতিবারের ন্যায় এবারও চামড়া নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিল মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় ভালো দাম আশা করেছিলেন তারা। কিন্তু এ বছর চামড়া নিয়ে ঠিক উল্টো চিত্র দেখা গেছে। যারা কিছু লাভের আশায় এ বছর চামড়া সংগ্রহ করেছেন দিনশেষে তাদের বহু টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এমন বহু চিত্র চট্টগ্রামে অলিগলিতে দেখতে পাওয়া গেছে।

চামড়া নিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের হতাশার ছাপ চোখেমুখে স্পষ্ট। অনেকে ভালো দাম না পেয়ে চামড়া রাস্তায় ফেলে চলে যান। জানা যায়, চট্টগ্রামে এবছর ৪ লাখ কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন আড়তদাররা। রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ও লবণের দাম কম থাকায় এবার আড়তে ভালো দাম পাওয়ার আশা ছিল মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বিগত বছরগুলোর মতো চামড়া বিক্রি হয়েছে নামমাত্র দামে।

গত ৮ জুন রাত ১২টার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রাকে ট্রাকে চামড়া নিয়ে চট্টগ্রামে আড়তের সামনে বিক্রির জন্য অপেক্ষমাণ ছিল অনেক ব্যবসায়ী। ওইদিন রাতে ট্রাকে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি চামড়া বিক্রির অপেক্ষায় ছিল। ছাগলের চামড়া কিনছে না আড়তদাররা। অনেক ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে না পেরে নষ্ট হয়ে গেছে। নগরীর আতুরার ডিপো এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চামড়াগুলো। গত ৭ জুন অর্থাৎ ঈদের পরদিন সকাল থেকে কোরবানির পর কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করতে শুরু করেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। দুপুরের পর থেকে তারা সংগ্রহ চামড়া নিয়ে যান নগরের আতুরার ডিপো এলাকার চামড়ার আড়তে। কিন্তু সেখানে গিয়ে হতাশ হয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

তারা জানান, ৭০০-৮০০ টাকা দিয়ে প্রতিটি চামড়া তারা কিনেছেন।

কিন্তু কোনো আড়তদার সেই দাম দিয়েও চামড়া কিনতে রাজি হচ্ছেন না। অনেক ভালো চামড়াও ৫০০ টাকার উপরে কেউ কিনছেন না। এতে ফের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। হামজারবাগ এলাকার এলাকার এক মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অনেক চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে জমজমাট হয়ে উঠে এ এলাকা। সেখানের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, আড়তদাররা প্রতিটি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার বেশি দামে কিনতে চাইছেন না। তবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, লবণযুক্ত চামড়ার দাম ১ হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। লবণ ছাড়া চামড়া বেশি দামে কেনার সুযোগ নেই। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের এ বিষয়টি মনে রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, একটি ২০ ফুটের চামড়ায় প্রায় ৫০০ টাকা খরচ পড়ে। এর মধ্যে প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন খরচ, আড়তের খরচ সবকিছু অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া ট্যানারি মালিকরা প্রতিটি চামড়ায় ২০ শতাংশ বাদ দিয়ে দেন। এবছর কোরবানির পশুর লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। আর ঢাকার বাইরের চামড়ার দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে খাসি ও বকরির চামড়ার দাম ২ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

আড়তদাররা জানান, ট্যানারিতে বিক্রির সময় ২০ শতাংশ বাদ দিয়ে প্রতি ফুটে ৫৫-৬০ টাকা পড়ে না। এছাড়া চামড়ার মানেও পার্থক্য থাকায় দামের হেরফের হয়। এ প্রসঙ্গে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মুসলিম উদ্দিন বলেন, মৌসুমি বিক্রেতাদের বারবার সতর্ক করা হয়েছে। সরকার শুধু লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে, কাঁচা চামড়ার নয়।

কিন্তু অনেকে এই বিষয়টা না বোঝায় নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন, সেটিকে লবণযুক্ত করতে অনেক টাকা খরচ হয়। একটি ২০ ফুটের চামড়ায় প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন ও আড়তের খরচসহ প্রায় ৫০০ টাকা খরচ পড়ে। এ ছাড়া ট্যানারি মালিকরা প্রতি চামড়ার ২০ শতাংশ বাদ দেন।

এদিকে, গত তিন বছর ধরে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে গাউসিয়া কমিটি চট্টগ্রাম। সংগঠনটি প্রতি মৌসুমে এক লাখ করে চামড়া স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করে। এবার পরিস্থিতি আরেকটু ভালো হবার আশাও করেছিল তারা।

গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মোসাহেব উদ্দিন বখতেয়ার বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙতেই এই উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। আমরা ভালো সাড়াও পেয়েছি। কিন্তু চট্টগ্রামের সব চামড়া তো আমরা সংগ্রহ করতে পারছি না। এজন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। চামড়াজাত শিল্প প্রসারে উদ্যোগ নিতে হবে। চট্টগ্রামে যেসব ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেছে, সেসব চালু করতে হবে। এবার চট্টগ্রামে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে আড়ৎদাররা। এর মধ্যে ৮০ ভাগ চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত