ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

স্বর্ণের থেকে এগিয়ে যাচ্ছে রুপা

স্বর্ণের থেকে এগিয়ে যাচ্ছে রুপা

বিশ্ববাজারে রুপার দাম সাময়িকভাবে পতনের স্বীকার হলেও, এর দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ যেন আলোছায়ার মধ্যেও আলোর দিশা। বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তন ও গ্রীন টেকনোলজির ক্রমবর্ধমান চাহিদায় রুপার ভূমিকা দিন দিন গুরুত্ব পাচ্ছে। সরবরাহ সংকট ও শক্তিশালী শিল্প চাহিদার মাঝে রুপার দাম আগামী দিনে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর আভাস দিচ্ছে। এই সপ্তাহে রুপার দাম সাময়িকভাবে পতনের মুখে পড়লেও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে রুপার দর শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখবে। গত বুধবার রুপার দাম হঠাৎ করেই ১.৪ শতাংশ কমে যায় মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে। এটির পেছনে প্রধান কারণ ছিল চীনের ভাইস প্রিমিয়ারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার বিষয়ে দেয়া সংশয়জনক মন্তব্য।

যদিও তিনি সরাসরি নেতিবাচক কিছু বলেননি, তবুও বাজার মনে করিয়েছে যে বাণিজ্য উত্তেজনা এখনও মিটে যায়নি। এই অনিশ্চয়তা বাজারে এক ঝটকা সৃষ্টি করেছে। ক্যাপিটাল ডট কমের সিনিয়র মার্কেট বিশ্লেষক ড্যানিয়েলা সাবিন হ্যাথর্ন বলেন, ‘বাজার আশা করেছিল আলোচনাগুলো মসৃণ হবে, তাই যেকোনো ধরনের ফাটল বা অশান্তি মূল্যবাজারে প্রভাব ফেলে। রুপার দ্রুত দরপতনের পেছনে এটাই প্রধান কারণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে রুপার দাম সাম্প্রতিক উচ্চতার কাছাকাছি ধরে রেখেছে, যা শক্তিশালী চাহিদা ও সরবরাহ সীমিত থাকার প্রমাণ।’ ট্রেডারদের ব্যবহৃত প্রযুক্তিগত সূচক আরএসআই (রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইনডেক্স) দেখাচ্ছে, রুপার দাম সাময়িকভাবে ঠাণ্ডা পড়লেও সামগ্রিকভাবে উর্ধ্বমুখী ধারা বজায় রয়েছে। অর্থাৎ বাজারে এখনো বিনিয়োগকারীদের ভালো সাড়া রয়েছে। আগামী দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতির (সিপিআই) তথ্য প্রকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হবে। যদি মুদ্রাস্ফীতি কমে আসে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা সুদের হার কমানোর আশায় মূল্যবান ধাতু, বিশেষ করে রুপায় বিনিয়োগ বাড়াবেন। এর ফলে রুপার দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রুপার চাহিদা স্বর্ণ থেকে আলাদা। এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় সোলার প্যানেল, ইলেকট্রনিক্স এবং ইলেকট্রিক গাড়িতে। তাই বিশ্ব অর্থনীতির পরিস্থিতি ও প্রযুক্তিগত প্রবৃদ্ধি রুপার দামে সরাসরি প্রভাব ফেলে।

সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন-চীনের বাণিজ্য উন্নতি এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশায় বিনিয়োগকারীদের রুপায় আগ্রহ বেড়েছে। এরই প্রমাণ স্বর্ণ-রুপার অনুপাতের পতন, যা নির্দেশ করে রুপার মূল্যবোধ বাড়ছে। সরবরাহ দিক থেকে রুপার উৎপাদনে রয়েছে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী রুপার মাত্র ৭০ শতাংশই খনি থেকে আসে এবং এর অনেকটাই অন্যান্য ধাতুর (যেমন কপার, জিঙ্ক) বাইপ্রোডাক্ট।

পুনর্ব্যবহারিত রুপার পরিমাণ মাত্র ২০ শতাংশ, যা সোলার প্যানেল ও পুরানো ইলেকট্রনিক্স থেকে সীমিত পরিমাণে আসে। ড্যানিয়েলা হ্যাথর্ন বলেন, ‘রুপা খনি ও পুনর্ব্যবহার অবকাঠামোয় যথেষ্ট বিনিয়োগ হয়নি। নতুন খনি তৈরি বা পুনর্ব্যবহার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মনোযোগ কম। আবার, গ্রীন প্রযুক্তি সেক্টরে চাহিদা বাড়ায় সরবরাহের ঘাটতি আরও গভীর হচ্ছে।’ বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তি ও ইলেকট্রিক গাড়ির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে রুপার চাহিদা বাড়ছে দ্রুত। এই কাঠামোগত চাহিদা এবং সরবরাহের সীমাবদ্ধতা মিলে রুপার দাম দীর্ঘমেয়াদে বাড়তে থাকবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত