ঢাকা রোববার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জান্নাত লাভের ১০ আমল

রায়হান রাশেদ
জান্নাত লাভের ১০ আমল

প্রতিটি মুসলমানই জান্নাতে যেতে চায়। এটি মুসলমানদের চূড়ান্ত চাওয়া। জান্নাতে যেতে পারলে জীবন সফল। দুনিয়ায় আসা স্বার্থক। জান্নাত আল্লাহর নেয়ামতে ভরা। একে বানানো হয়েছে আকর্ষণ করে।

চির-শান্তির স্থান জান্নাত। এর ঘর-বাড়ি, আসন, আসবাবপত্র সবকিছু স্বর্ণ-রৌপ্য, মণি-মুক্তি দিয়ে নির্মিত। আরও থাকবে রেশমের গালিচা, দুধ ও মধুর নহর ও মিষ্টি পানির স্রোতধারা। আনন্দ উপভোগের সব বস্তু থাকবে জান্নাতে। আল্লাহ বলেন, ‘জান্নাতে তোমাদের মন যা চাইবে তা-ই তোমাদের জন্য রয়েছে আর তোমরা যা দাবি করবে তাও তোমাদের দেওয়া হবে।’ (সুরা হামিম সেজদা : ৩১)। আল্লাহতায়ালা জান্নাতকে নিজেই জান্নাতের দিকে বান্দাদের ডেকেছেন। কোরআনে আছে, ‘আল্লাহ শান্তির ঘরের দিকে ডাকছেন।’ (সুরা ইউনুস : ২৫)।

জান্নাত পেতে হলে আল্লাহর আদেশ মানতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ করতে। এ ছাড়া জান্নাত লাভ করা যাবে না। এমন কিছু আমল রয়েছে, যা পালন করলে সহজে জান্নাতে যাওয়া যায়। এখানে দশটি আমল উল্লেখ করা হলো-

এক. আয়াতুল কুরসি পড়া : ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। আয়াতুল কুরসি কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ফরজ নামাজের পর এটি পড়তেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে প্রত্যেক নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে মৃত্যু ছাড়া তার আর কোনো বাধা নেই।’ (নাসায়ি : ৯৯২৮)।

দুই. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া : উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বান্দার ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে এই নামাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে এবং অবহেলাবশত তাতে কোনো ত্রুটি করবে না, তার সঙ্গে মহান আল্লাহর চুক্তি হয়েছে যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (আবু দাউদ : ১৪২০)।

তিন. আজানে উত্তর দেওয়া : খুব মনোযোগী হয়ে আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে আজানের উত্তর দেওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে আন্তরিক বিশ্বাসের সঙ্গে আজানের উত্তর দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।’ (মুসলিম : ৩৮৫)।

চার. অজুর পর কালিমা পড়া : প্রত্যেকবার অজুর পর কালিমায়ে শাহাদাত পড়া। কেননা, এটা পড়লে জান্নাতের আটটি দরজার যে কোনোটি দিয়ে তাকে প্রবেশ করতে বলা হবে। (নাসায়ি : ১৪৮)।

পাঁচ. সকাল-সন্ধ্যা সাইয়িদুল ইসতেগফার পড়া : প্রত্যেক দিন সকাল ও সন্ধ্যায় একবার করে সাইয়িদুল ইসতেগফার পড়া। এই ইসতেগফার সকালে পড়ে সন্ধ্যার আগে মারা গেলে অথবা সন্ধ্যায় পড়ে রাতের মধ্যে মারা গেলে সে জান্নাতি হিসেবে গণ্য হবে। (বোখারি : ৬৩০৬)।

ছয়. চল্লিশ দিন জামাতে নামাজ পড়া : তাকবিরে তাহরিমার সঙ্গে টানা চল্লিশ দিন জামাতে নামাজ আদায় করা। এতে করে তার নাম মুনাফিকের খাতা থেকে কাটা যাবে। আর তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। (তিরমিজি)।

সাত. তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় : শেষ রাতে সবাই যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন আরামের বিছানা ছেড়ে মহান আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার নামই তাহাজ্জুদ। তাহাজ্জুদ নামাজ জান্নাতে নিয়ে যাবে আমাদের। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে লোকসকল, সালামের প্রসার করো। খাবার খাওয়াও। রাতে যখন সবাই ঘুমে বিভোর তখন নামাজ পড়ো। শান্তির সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (ইবনে মাজাহ : ১০৯৭)।

আট. এতিমের তত্ত্বাবধান : এতিমের তত্ত্বাবধান জান্নাতে যাওয়ার সহজ আমল। সাহাল্ ইবনে সাদ (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) নিজের তর্জনী ও মধ্যমা একত্র করে বলেন, ‘আমি ও এতিমের তত্ত্বাবধায়ক জান্নাতে এভাবেই থাকব।’ (বোখারি : ৬০০৫)।

নয়. বিশেষ তিনটি আমল : কারও সঙ্গে কথোপকথনের আগে সালাম বিনিময় করা, মানুষকে খাওয়ানো এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া- সহজ এই তিনটি আমলের বিনিময়ে জান্নাত লাভ হবে। এক সাহাবি বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সর্বপ্রথম সাক্ষাতের সময় আমি তাঁকে কথা বলতে শুনেছি, হে লোক সকল, তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও। খাবার খাওয়াও। মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন (অর্থাৎ শেষ রাতে) নামাজ পড়ো। তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি : ২৪৮৫)।

দশ. দুই জিনিসের হেফাজত করা : মুখ ও যৌবন হেফাজত করার প্রতিদান জান্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে জিহ্বা ও লজ্জাস্থান হেফাজতের নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নেব।’ (বোখারি : ৬৪৭৪)।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত