চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ডাকাতিয়া নদীর তীরবর্তী এলাকা এখন এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি। নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ বালু ব্যবসার ফলে ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ফসলি জমি। নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন কৃষকরা, হুমকির মুখে পড়েছে ভিটে-মাটি, পরিবেশ ও নদীর জলজ প্রাণী।
বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের এন্নাতলী গ্রামের কৃষিজমি এক সময় ছিল ইরি-বোরো ধান, বাঙ্গি, শসা ও নানা ফল-সবজির জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে সেখানে শুধুমাত্র ধানের চাষই টিকে আছে। স্থানীয়রা জানান, বালু ব্যবসার কারণে প্রায় এক হাজার শতাংশ জমি ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা একাধিক বালু মহাল থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক ও ট্রলারে করে বালু পরিবহন হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। নদীর পূর্বপাড়ে ড্রেজার বসিয়ে নিয়মিত বালু আনলোড করা হয়। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ট্রলারের ঘূর্ণন পাখায় নদীর তলদেশ ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। ফলস্বরূপ শুরু হয়েছে ভয়াবহ নদীভাঙন।
এন্নাতলী গ্রামের শিক্ষক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “এই চর ছিল এক ফসলি মাঠ। এখানকার কৃষিকাজই ছিল আমাদের মূল জীবিকা। এখন আমরা জমিহীন হয়ে পড়েছি।”
পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা জানিয়ে সচেতন মহল বলছেন, ড্রেজিংয়ের ফলে নদীর পানি ঘোলা হয়ে যাচ্ছে, সূর্যালোক পানির নিচে পৌঁছাতে পারছে না। এতে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনচক্র ব্যাহত হচ্ছে, কমে যাচ্ছে মাছের প্রজনন। নদীর জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু ব্যবসায়ীরা কোটিপতি হলেও নদীপাড়ের সাধারণ মানুষ হারাচ্ছেন তাদের জমি ও ঘরবাড়ি। গত ৪ এপ্রিল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এক বৈঠকে বালু ব্যবসায়ী কামাল হোসেনকে ড্রেজার সরানোর অনুরোধ জানান। তিনি সময় চাইলেও এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, “এখানে প্রায় ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। আমি একা নই, অনেকেই এখানে ব্যবসা করছেন। কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সবাই মিলে নিতে হবে।”
এদিকে, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান বলেন, “বালু মহালের ইজারা থাকলেও নদীতে ড্রেজার স্থাপন বা ট্রলার রাখার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন জানান, “অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
