ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মনমাতানো অর্কিডের খোঁজ

তাবাসসুম মাহমুদ
মনমাতানো অর্কিডের খোঁজ

সৌন্দর্য, নাটকীয় আকৃতি ও রং দিয়ে বছরের পর বছর ধরে উদ্ভিদপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছে অর্কিড। এর চমৎকার ফুলগুলো প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর আগে প্রথম দেখা গিয়েছিল। তারপর বিষুব রেখা থেকে আর্কটিক সার্কেল ও হিমালয় থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। গবেষকরা জুরাসিক যুগ থেকে মেসোজোয়িক যুগ (১৯৫-১৩৬ মিলিয়ন বছর আগে) এবং সেনোজোয়িক যুগেও (৬৪ মিলিয়ন বছর আগে) অর্কিডের অস্তিত্ব খুঁজে পান। বিশ্বব্যাপী ২৫ হাজারেরও বেশি প্রজাতিসহ অর্কিড উদ্ভিদ রাজ্যের বৃহত্তম পরিবারগুলোর একটি। আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও চাষাবাদের সুবাদে অর্কিডের ১ লাখ ভিন্ন জাত উদ্ভাবিত হয়েছে।এর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

উৎপত্তি ও বিকাশ : অর্কিডের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ‘ইনকোয়ারি ইন্টু প্লান্টস’ নামক গ্রন্থে। অ্যারিস্টটলের ছাত্র থিওফ্রাস্টাস খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ সালের দিকে যেটি লিখেছিলেন। ডিওসকোরিডস নামক একজন গ্রীক উদ্ভিদবিদ ও চিকিৎসক প্রথম শতাব্দীতে এর গাছগুলোকে স্পষ্টভাবে ‘অর্কিড’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তার রচিত ডি মেটেরিয়া মেডিকা মধ্যযুগ পর্যন্ত একটি আদর্শ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কনফুসিয়াস তার ঘরে অর্কিড রাখতেন। তিনি অর্কিডের সুগন্ধির প্রশংসা করে কবিতাও লিখেছিলেন। অর্কিড জাতীয় গাছদের ২ হাজার বছর আগে গ্রীক দেশে ‘অর্চিস’ ডাকা হতো। নামটির অর্থ ‘অ-কোষ’। রোমান আমলে (৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দ) অর্কিড শিকড় একটি কামোদ্দীপক হিসেবে খাওয়া হতো। উনিশ শতকে ও শিল্পযুগের আগমনের ফলে অর্কিডকে ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সভ্যতায় প্রতিস্থাপন করা সহজ হয়। গ্লাস উৎপাদনের অগ্রগতি গ্রিনহাউজ নির্মাণের সুবিধা দিয়েছে।

এটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অর্কিডের উৎপাদনকে সহজ করে তোলে। যেখানে ধনী, সংস্কৃতিমনা সমাজের মানুষ বিরল ও সুন্দর অর্কিডের নমুনা সংগ্রহে আগ্রহী হয়ে ওঠে। অর্কিড গৃহস্থালির গাছ হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। এদের সুদৃশ্য ফুল, রঙের বিশাল পরিসর কয়েক মাস ধরে চলতে পারে। কিছু অর্কিডের সুন্দর ঘ্রাণও আছে। সঠিকভাবে যত্ন নিলে এরা অনেক বছর বাঁচতে পারে। অর্কিড পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকা থেকে আন্দিজ পর্যন্ত এদের বিচরণ। এ কারণে বিভিন্ন অর্কিডের যত্নের প্রয়োজনীয়তাগুলো আলাদা। তাই সর্বদা নির্দিষ্ট অর্কিডের জন্য নির্দিষ্ট লেবেল ও যত্নের নির্দেশাবলি অনুসরণ করা উচিত।

ডেনড্রোবিয়াম : ডেনড্রোবিয়ামের জন্য মথ অর্কিডের তুলনায় শীতল ও কম আর্দ্র পরিবেশের প্রয়োজন। শরৎকালে পানি কমিয়ে দিয়ে গাছগুলোকে একটি উজ্জ্বল জানালা বা বারান্দায় নিয়ে রাখতে হয়। যেখানে তারা বসন্ত পর্যন্ত শীতল ও শুষ্ক থাকতে পারে। তারপর যখন তাপমাত্রা আবার বাড়তে শুরু করে, তখন পানি দেওয়া বাড়াতে হয়। এরপর বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসা উচিত।

ক্যাটলিয়া : ক্যাটলিয়া তার উজ্জ্বল ফুলের জন্য পরিচিত। যা ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হতে পারে। শরৎ বা বসন্তে মূলত এদের আগমন ঘটে। এরা একটি বা দুটি ফ্লেশি পাতা দিয়ে সিউডোবাল্ব তৈরি করে। গাছগুলো প্রায় ১৮-২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা পছন্দ করে। রাতে তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে নামলে তা গাছের বৃদ্ধি ব্যহত করে।

ভাণ্ডা : সাধারণত বসন্ত ও শরতের মধ্যে ভাণ্ডা বড় ও সুন্দর ফুল উৎপন্ন করে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু থেকে আসায় এরা উচ্চ তাপমাত্রা ও উচ্চ আর্দ্রতা পছন্দ করে। এগুলো প্রায়ই স্ল্যাটেড ঝুড়িতে বা কাচের ফুলদানিতে জন্মানো হয়। যার মধ্যে সামান্য বা কোনো পটিং মিডিয়াম থাকে না। অন্যান্য অর্কিডের মতো না হয়ে ভাণ্ডা রৌদ্রোজ্জ্বল জায়গা পছন্দ করে।

সাইপ্রিপেডিয়াম : এরা লেডিস স্লিপার নামেও পরিচিত। সাইপ্রিপেডিয়ামে একটি বিশাল ফুলের থলি (আসলে মিশ্রিত ফুলের পাপড়ি) এবং প্রায়ই মোচড়ানো সেপাল থাকে। এগুলো কম্পোস্টে জন্মানো সম্ভব। ফুলের মৌসুমে তাদের প্রচুর পরিমাণে পানি দিতে হয়। অনেক প্রজাতি শক্ত প্রকৃতির এবং বাড়ির বাইরেও জন্মানো যায়।

অডোন্টোগ্লোসাম : ফুলের জটিল শিরা ও দাগ থাকার কারণে অডোন্টোগ্লোসামকে প্রায়ই ‘প্রজাপতি’ অর্কিড বলা হয়। বেশিরভাগ অর্কিডের বিপরীতে তারা কম আলো পছন্দ করে। যেমন- একটি উত্তরমুখী উইন্ডোসিল। আন্দিজ থেকে আগত এ ফুলগুলো শীতল, তাজা, বাতাসযুক্ত পরিবেশ পছন্দ করে।

অনসিডিয়াম : অনসিডিয়াম অর্কিড কখনও কখনও ‘নৃত্যরত নারী’ হিসেবে পরিচিত। এরা সাধারণত শরৎকালে ফোটে। দোকানে যে হাইব্রিডগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো বড় করা সবচেয়ে সহজ। এরা শীতল তাপমাত্রা পছন্দ করে। গ্রীষ্ম ছাড়া অন্য সময়ে ভালো ফলন দিয়ে থাকে।

মিল্টোনিয়া : মিল্টোনিয়া বা প্যানসি অর্কিডগুলো প্রায়ই বিক্রির জন্য পাওয়া যায়। এরা আসলে মিল্টোনিওপিসিস হাইব্রিড। এ কমপ্যাক্ট গাছগুলোতে প্যানসির মতো একটি স্বতন্ত্র ‘মাস্ক’ বা ‘মুখ’সহ বড় ফুল থাকে। এরা শীতল তাপমাত্রা পছন্দ করে। তবে তাপমাত্রার ওঠানামা সহ্য করতে পারে।

প্যাফিওপেডিলাম : প্যাফিওপেডিলাম স্লিপার অর্কিড নামে পরিচিত। এদের ফুলের থলি-আকৃতির ঠোঁট থাকে। যা বন্য পরাগায়নকারীদের আকর্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুল ফোটে। এরা আর্দ্রতা ও মাঝারি তাপমাত্রা পছন্দ করে। যা সাধারণত ১০-২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। শীতকালে শীতল, উজ্জ্বল জায়গায় এরা ভালো জন্মায়।

মনমাতানো অর্কিড,উদ্ভিদপ্রেমী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত