ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাঘের মাসি

হুমাইদুল্লাহ তাকরিম
বাঘের মাসি

পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়াল পালন করেন অনেকে। এটি বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গৃহপালিত প্রাণী। বিড়াল খুবই আরামপ্রিয়। বাংলাদেশে একে ‘বাঘের মাসি’ বলে ডাকা হয়। অনেকে বিড়াল পোষেন ইঁদুর মারার জন্য। দুধ, মাছ, মাংস বিড়ালের প্রিয় খাবার। এরা খুবই নিঃশব্দে চলাফেরা করতে পারে। কারণ, এদের পায়ের নিচে খুব নরম মাংসপি- থাকে।

উৎপত্তি ও বিকাশ : প্রায় ৯ হাজার বছর আগে প্রাচ্যের কৃষকেরা সর্বপ্রথম বন্য বিড়ালকে পোষ মানাতে সক্ষম হন। এর কয়েক শত বছর পর মিশর ছাড়িয়ে সমুদ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে বিড়াল ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে শুধু অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ ছাড়া সর্বত্রই বিড়াল দেখা যায়। চীনে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বছর আগের কিছু মৃৎশিল্পে চমৎকারভাবে বিড়ালের ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেগুলো আকারে বর্তমানের সাধারণ বিড়ালের মতোই। যদিও খ্রিষ্টপূর্ব ২৪৬৫-২১৫০ অব্দে বিড়ালকে একটি পবিত্র প্রাণী হিসেবে মানা হতো, তবু ওই সময়ে তেমন কেউ বিড়াল পালত না। ইঁদুর ধরে বলে বিড়ালকে অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতার অধিকারী পশু বলে বিবেচনা করা হতো।

মজার কিছু তথ্য : ঘরোয়া বিড়ালগুলো বন্য বিড়ালের চেয়েও আক্রমণাত্মক। মিশর ও তার পূর্ববর্তী এলাকার বৃহত্তর গবেষণার মাধ্যমে এ আশ্চর্য তথ্য পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করে থাকেন, বন্য বিড়ালেরা শস্যখাদক ইঁদুর ধরার তাগিদে বিভিন্ন খেতে ঘুরে বেড়াত। তখন থেকেই কৃষকেরা এদের বন্ধু ভাবা শুরু করে। গবেষক ইভা মারিয়া গেইগল বলেন, বিড়াল দুই ধাপে পোষা শুরু হয়। প্রথমে পূর্বাঞ্চলীয় কোনো দেশে এবং তারও অনেক পরে মিশরে। এরপর বিড়ালগুলো জাহাজে জাহাজে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, তখন জাহাজে মজুদ করা শস্য ও পণ্য ইঁদুরের কবল থেকে বাঁচাতে একমাত্র কার্যকরী পন্থা ছিল বিড়াল।

ইঁদুর ধরা থেকে পোষা প্রাণী : বিড়াল শুরু থেকে এত আদুরে বা অলস ধরনের প্রাণী ছিল না। প্রায় কয়েক হাজার বছর ধরে কৃষক ও নাবিকদের হয়ে তারা ইঁদুর ধরেছে। অনেক অনেক উপকার করে এসেছে। প্রকৃতপক্ষে বিড়ালই মানুষের সঙ্গ বেছে নিয়েছিল। এতে দুই পক্ষেরই লাভ হলো। গবেষণায় জানা যায়, প্রায় ২০০ রকম প্রাচীন বিড়ালের মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এগুলো মূলত পাথুরে যুগ, মিশরের মমি যুগ কিংবা ভাইকিং গ্রেভসের সময়কার।

অদ্ভুত কিছু বৈশিষ্ট্য : বিড়াল যদি মেঝেতে খুব গড়াগড়ি খায়, তখন বুঝতে হবে, সে এ মুহূর্তে খেলতে চাচ্ছে। অনেক বিড়াল তার মনিবের বাইরে যাওয়ার সময় এমনটি করে থাকে; যেন তাকেও সঙ্গে নেওয়া হয়। এটা দৃষ্টি আকর্ষণ করার সুন্দর পদ্ধতি। বিড়াল সবটুকু খাবার শেষ করে না। অনেক সময় ধরে খেয়ে খাবারের কিছু অংশ বাঁচিয়ে রাখে। মজার ব্যাপার হলো, এমনটি সে তার মনিব থেকেই শেখে। যেসব বাড়িতে মনিব তার বেঁচে যাওয়া খাবার থেকে বিড়ালকে খেতে দেয়, সেসব বাড়িতেই বিড়ালগুলো নিজের খাবার মনিবের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে শেখে। বিড়াল সাধারণত মাংসাশী প্রাণী। কিন্তু যখন ঘাস পাতা খেতে শুরু করে, তখন খুব অদ্ভুত লাগে। আসলে বিড়ালের ঘাস খাওয়ার পেছনে কারণ হলো, এরা ঘাস থেকে একধরনের ভিটামিন পায়। কখনও কখনও নিজের গা চুলকাতে গিয়ে মুখে জড়িয়ে যাওয়া পশম ছাড়াতেও এরা ঘাসের সাহায্য নেয়। অনেক সময় দেখা যায়, বিড়াল তার পা আরেক বিড়ালের গায়ে অথবা মেঝেতে পিষছে। এর কারণ হলো, তারা অন্য বিড়ালের প্রতি যত্ন বা মমতা দেখায় অথবা নিজের পায়ের রক্তসঞ্চালন ঠিক রাখতে এমনটি করে।

অনেক সময় বাচ্চা বিড়াল তার মায়ের বুকের দুধ ঠিকমতো না পেলে মায়ের গায়ে পা ঘষতে থাকে। বিড়ালরা ফোনের প্রতি আসক্ত। ফোন বেজে উঠলেই বাড়ির বিড়ালটি সবার আগে দৌড়ে ফোনের কাছে চলে যায়। এর কারণ কৌতূহল। এরা বোঝার চেষ্টা করে, আসলে ফোনে কীভাবে কার সঙ্গে কথা বলা যায় কিংবা কাউকে দেখা যাচ্ছে না, তবুও মনিব কার সঙ্গে কথা বলছে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বিড়াল সাধারণত ফোনের কাছে সবার আগে দৌড়ে যায়। তা ছাড়া এরা আরও লক্ষ্য করে, ফোনে কথা বলার সময় তাদের প্রতি মনিবের মনোযোগ কিছুটা কমে যায়। তাই মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার উৎসটি তারা নিজেরাই বেছে নেয়।

বাঘের মাসি,পোষা প্রাণী,বিড়াল পালন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত