ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কাপ্তাই হ্রদের নাব্য সংকট ছয় উপজেলায় নৌরুট বন্ধ

কাপ্তাই হ্রদের নাব্য সংকট ছয় উপজেলায় নৌরুট বন্ধ

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলাশয় কাপ্তাই হ্রদ, যা ১৯৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনীতির প্রাণ জোগাতে নির্মিত হয়েছিল, আজ ভূপৃষ্ঠ সংকুচিত, শুষ্ক ও পলিমাটিতে ভরাট হয়ে জনদুর্ভোগের এক অনিবার্য কারণ হয়ে দঁড়িয়েছে। ৭২৫ বর্গকিলোমিটারের বিস্তৃত এই হ্রদ বর্তমানে প্রায় ৩০ শতাংশ পানির কমতি ভুগছে বলে স্থানীয় ও সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

প্রতি গ্রীষ্ম মৌসুমে হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় রাঙামাটির ছয়টি উপজেলায়, বাঘাইছড়ি, বরকল, লংগদু, নানিয়ারচর, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এর প্রধান নৌরুটগুলো বন্ধ হয়ে পড়ে। এসব উপজেলায় বসবাসকারী প্রায় ৮ লাখ মানুষ এখন বিচ্ছিন্ন ও অসহায়। নৌপরিবহন বন্ধ হওয়ায় তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন বিপর্যস্ত। বরকলের ব্যবসায়ী অনিল দাশ বলেন, ‘এক বস্তা চাল আনতে যেখানে আগে ১০০ টাকা খরচ হতো, এখন তা বেড়ে ১৫০ টাকা। সময়মতো নৌযান পাওয়া যায় না। রিজার্ভ বাজারের মো. জামাল অভিযোগ করেন, প্রতিবছর ড্রেজিংয়ের কথা শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। লঞ্চ শ্রমিকদের দুর্দশাও ভয়াবহ। প্রতিবছর ৪-৫ মাস বেকার হয়ে পড়েন তারা। পানি সংকটের কারণে লঞ্চগুলো বারবার চরে আটকে যায়, ফলে তাদের সময় ও আয় দুটোই নষ্ট হয়। এসময় শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে অভাবের দিনে দিন কাটাতে বাধ্য হন। এদি?কে, শুষ্ক মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন। পানি সংকটের কারণে বর্তমানে প্রকল্পের ৫টি ইউনিটের মধ্যে চালু রয়েছে মাত্র একটি ইউনিট। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, চালু থাকা একমাত্র ইউনিট থেকে বর্তমানে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, যা জাতীয় চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০২৪ সালের মধ্যে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর গড়পড়তা ২-৩ ফুট কমেছে, যা নৌ-চলাচলের জন্য বিপজ্জনক। এর সঙ্গে অবৈধ বন উজাড়, অনিয়ন্ত্রিত মাটি কাটাছেঁড়া ও পর্যটন শিল্পের অসংগঠিত বৃদ্ধি সংকটকে তীব্র করেছে। স্থানীয়রা মনে করেন, শুধু অনাবৃষ্টি নয়, বরং নির্বিচারে বন উজাড়, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ এবং দীর্ঘদিন ধরে নাব্য সংকটের সমাধান না করাও হ্রদের সংকটের কারণ। টুরিস্ট বোট চালক অনন্ত বলেন, যখন বোট চরে আটকে পড়ে, তখন যাত্রীদের নামিয়ে নিজেকে ধাক্কা দিতে হয়। এজন্য পর্যটক কমে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। তবে কাজ শুরু হওয়ার সঠিক সময় এখনও অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাপ্তাই হ্রদে জলজ সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক ড্রেজিং, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, বন সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব পর্যটন নীতি গ্রহণ। দ্রুত কার্যকর পরিকল্পনা না হলে ভবিষ্যতে এই সংকট আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। স্থানীয়রা বলছেন, শুধুমাত্র চিঠি আর আশ্বাস দিয়ে চলবে না। জরুরি বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও দ্রুত কার্যক্রমের মাধ্যমে যেন কাপ্তাই হ্রদ আবার তার প্রাচীন জীবন্ত রূপে ফিরে আসে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত