ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাঁচ বছরেও পূর্ণতা লাভ করেনি মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী

গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটসহ নানা জটিলতা
পাঁচ বছরেও পূর্ণতা লাভ করেনি মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী

১৫.৩২ একর ভূমিতে ৫ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল মিরসরাইয়ের একমাত্র বিসিক শিল্পনগরী। নানা সীমাবদ্ধতা ও জটিলতায় প্রতিষ্ঠার ৫ বছর পরেও পূর্ণাঙ্গ রুপ লাভ করেনি এ শিল্পনগর। বরাদ্দ দেয়া ৮৮টি প্লটের মধ্যে ৫৯টি খালি পড়ে আছে। ৮৮টি প্লটে ৮০টি কারখানা নির্মাণ হওয়ার কথা থাকলে বর্তমানে রয়েছে মাত্র ১১টি। নিরাপত্তা, গ্যাস সংকট, দক্ষ শ্রমিক সংকট, বিদ্যুৎ সংকট ও মেইনটেইনেন্স করার শ্রমিক সংকটের কারণে প্লট মালিকরা কারখানা নির্মাণ করছে না। এরইমধ্যে লোকসান হওয়ায় উৎপাদনে যাওয়া খান এক্সেসারিজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে ৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে মোট ৫৫ জনের। ২০২০ সালে পরীক্ষামূলক ৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যায়। এরপর ২০২২ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায় ‘এয়াকুব অটো রাইস মিল’ নামে একটি শিল্প কারখানা। সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর ‘এবি কমোডিটিজ’ নামে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে। এতে গত ৫ বছরে ৮টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে গিয়েছে দেশের ৭৫তম বিসিক শিল্পনগরীতে। তবে বিসিক কর্মকর্তাদের দাবি গ্যাস ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকায় উৎপাদনে যেতে পারছে না অনেকগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে গত বছরের ২১ নভেম্বর চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে চিঠি দিয়েছে বিসিক কর্তৃপক্ষ।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ১৫ দশমিক ৩২ একর জমির ওপর নির্মিত মিরসরাই বিসিক শিল্প নগরীতে ব্যয় হয় ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। কাজ শেষ হওয়ার ২ বছর পর বরাদ্দের জন্য ৮৮টি প্লটের বিপরীতে ১১৪টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। যাচাই বাছাই শেষে ৮৮টি শিল্পোদ্যোক্তাকে প্লট বরাদ্দ দেয় বিসিক চট্টগ্রাম জেলা প্লট বরাদ্দ কমিটি। কিন্তু ১৪টি শিল্পোদ্যোক্তা সময় মতো অর্থ পরিশোধ করতে না পাড়ায় প্লটগুলো শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে ১৪টি প্লটের বিপরীতে ৫৬টি আবেদন জমা পড়ে। যাচাই বাছাই শেষে অবশিষ্ট ১৪টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়। ৮৮টি প্লট ৮০ জন শিল্পোদ্যোক্তাকে দেওয়া হয়েছে। ৫ বছরের মধ্যে নয়টি কিস্তিতে প্লটের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন শিল্পোদ্যোক্তারা। প্লটের প্রতি বর্গফুট জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০ টাকা। মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে এ-টাইপ প্লট-২৭টি, বি-টাইপ প্লট-৩৩টি ও সি-টাইপ প্লট-২৭টি। প্লট বরাদ্দ কমিটি প্রকৌশলি খাতে ১৯টি, তৈরি পোশাক খাতে ১৬টি, খাদ্য ও খাদ্যজাত খাতে-১৯টি, ক্যামিকেল অ্যান্ড অ্যালাইড খাতে ১০টি, বন ও বনজাত খাতে ৩টি, প্যাকেজিং খাতে ৮টি, সিরামিকস ও নন মেটালিক-৩টি, রাবার-লেদার অ্যান্ড অ্যালাইড খাতে-৪টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। বর্তমানে বরাদ্দ দেয়া ৮৮টি প্লটের মধ্যে ৫৯টি খালি পড়ে আছে।

সরেজমিন মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে গিয়ে দেখা যায়, কারখানা নির্মাণ উপযোগী ৫৯টি প্লট খালি পড়ে আছে। লোকসান হওয়ায় কার্টন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘খান এক্সেসারিজ’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধ জানান, প্রায় ৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। লোকসান হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীরের কাজ চলছে। দুইটি রাইস মিল উৎপাদনে থাকতে দেখা যায়। বিসিক চট্টগ্রামের শিল্পনগরী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তানজিলুর রহমান বলেন, মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরে ৮০টি শিল্পকারখানার বিপরীতে বর্তমানে রয়েছে ১১টি। ৮টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে। গ্যাস, নিরাপত্তা ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পাওয়ায় আরো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মিরসরাইয়ে বর্তমানে দৈনিক ৪ বার লোডশেডিং হয়। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পেলে ছোট কারখানা চালানো খুবই কষ্টদায়ক। তাই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য গত ২১ নভেম্বর মিরসরাই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে চিঠি দিয়েছি।

উৎপাদনে যাওয়া ৮টি প্রতিষ্ঠান হলো- এয়াকুব অটো রাইস মিল, খাজা ভান্ডার, খান এক্সেসারিজ, নাছির ক্যামিকেল, আলিফ ফুড, মেঘনা ডাল মিল, ইনোভা টেক্সটাইল ও এবি কমোডিটিজ। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে ৫৫ জন লোক কাজ করছে। তবে ইনোভা টেক্সটাইল পুরোপুরি চালু হলে কয়েকশ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২৫ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

এ বিষয়ে বিসিক চট্টগ্রামের ডিজিএম এসএমএম আলমগীর আল কাদেরী জানান, মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। তাই এটির চাহিদা বেশি। কিন্তু বিসিক শিল্পনগরীতে বিদ্যুতে যে লাইন রয়েছে সেটি জেনারেল সংযোগ। এছাড়া গ্যাসের সংকট রয়েছে। মূলতঃ এই দুইটি কারণে উদ্যোক্তা কারখানা নির্মাণে বিলম্ব করছে বলে আমাদেও জানিয়েছেন। আমরা বাণিজ্যিক সংযোগ স্থাপনে মিরসরাই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে চিঠি দিয়েছি। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সুবিধা পেলে দ্রুত কারখানা নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আমরা আশা করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত