ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ফটিকছড়িতে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

ফটিকছড়িতে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা

চট্টগ্রামের বৃহৎ উপজেলা ফটিকছড়ির অপার সম্ভাবনা রয়েছে। ৭৭৩.৫৬ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলা ফেনী জেলা ও মালদ্বীপ দেশের চেয়েও বড়। এই উপজেলার দক্ষিণে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা, পশ্চিমে মিরসরাই ও সিতাকুণ্ড, পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানিকছড়ি ও লক্ষিছড়ি, উত্তরে ভারতীয় সীমান্ত ও রামগড় উপজেলা। এ উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ৬ লাখ ৪২ হাজার ৭৬ জনের মধ্যে ৩ লাখ ৯ হাজার ৭০১ জন পুরুষ ও ৩ লাখ ৩২ হাজার ৩৭৫ জন মহিলা। মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৬ জনের মধ্যে পুুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৩১ জন ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ২৩ হাজার ১৭৩ জন। দুটি থানা, ১৮টি ইউনিয়ন, দুটি পৌরসভা রয়েছে এ উপজেলায়। চট্টগ্রামের ২৩টি চা-বাগানের মধ্যে ১৮টি রয়েছে ফটিকছড়িতে। ৪টি রাবার বাগানও রয়েছে। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম চা-বাগান ‘কর্ণফুলী চা-বাগান’ ও দ্বিতীয় বৃহত্তম রাবার বাগান ‘দাঁতমারা রাবার বাগান’ এ উপজেলায়। তাছাড়া আধ্যাত্মিক নগরী মাইজভান্ডার দরবার শরিফে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এ উপজেলায় অবাধেই গড়ে তোলা যাবে ইকোট্যুরিজম ব্যবসাসহ ভারি ও মাঝারি শিল্পকারখানা। ফটিকছড়ির উত্তর সীমান্ত বাগান বাজার থেকে মাত্র ১(এক) কিমি দূরত্বে নির্মিত হয়েছে রামগড় স্থল বন্দর এবং এটি ফটিকছড়ির সঙ্গে সরাসরি সড়ক পথে সংযুক্ত আছে। রামগড় স্থলবন্দরকে কেন্দ্র করে বদলে গেছে ফটিকছড়ির ওই অংশের প্রধান সড়ক-মহাসড়কের দৃশ্যপট। নির্মাণ করা হয়েছে শতাধিক ব্রিজ-কালভার্ট। চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত যে রেললাইন রয়েছে সেটিকে মাত্র ৪০ কিমি বাড়িয়ে ফটিকছড়ির উপর দিয়ে রামগড় পর্যন্ত নিয়ে গেলে ওপারে ভারতের নির্মিত রেলপথ সাব্রুম সীমান্ত পর্যন্ত রয়েছে। কাজেই এটি খুব কম করছে যুক্ত করা যায়। এতে উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য যেমন বাড়বে তেমনি উভয় দেশের পর্যটকের সংখ্যাও বহুগুণে বেড়ে যাবে বলে সচেতন মহলের ধারণা। উক্ত স্থল বন্দর চালু হয়ে গেলে ভারতের লোকজনের এদেশে আসা যাওয়া বহুগুণে বেড়ে যাবে। ফলে অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি ফটিকছড়িতে ইকো ট্যুরিজমের ব্যবসা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। তাছাড়া রাউজান-ফটিকছড়ির সীমান্ত এলাকা সর্তা খালের রাউজান অংশে বেশকিছু ব্রিজ হয়েছে। ফটিকছড়ি অংশে একটিও হয়নি। নারায়ণহাট বাজার সংলগ্ন হালদার উপর কাঠের ব্রিজটির স্থানে পাকা সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেই। কৃষির জন্য পর্যাপ্ত সেচব্যবস্থা নেই। হালদা এবং বিভিন্ন শাখা খালের পানি ব্যবহারের উদ্যোগ নেই। যা নিশ্চিত করা গেলে ফসল উৎপাদন বেড়ে যাবে। এদিকে উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৯৩৬ কিমি গ্রামীণ জনপদের এখনও অনুন্নত ১ হাজার ২৯৮ কিমি। সবচেয়ে পিছিয়ে বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট, ভূজপুর, সুন্দরপুর ও খিরাম ইউনিয়ন। ফটিকছড়ি সদরস্থ ফটিকছড়ি পৌরসভা এবং নাজিরহাট পৌরসভা থাকলেও এই দুই পৌরসভার সড়ক যোগাযোগের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি। উত্তর ফটিকছড়ির হাজারীখীলে অবস্থিত বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য, বড়বিলের ত্রিপুরা পল্লী, হাজারীখীলের পাথরের ছড়া, এশিয়ার বৃহত্তম দাঁতমারা রাবার বাগান, ভুজপুরের হালদা রাবার ড্যাম, হারুয়ালছড়ি রাবার ড্যাম, দাঁতমারা সেল্পী রোড, বাগানবাজার ইউপির দিগন্ত জোড়া রামগড় চা-বাগানসহ ফটিকছড়ির বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত চা-বাগানগুলোর পাশ ঘেঁষে ইকোট্যুরিজম ব্যবসা গড়ে তোলা যায়। এরমধ্যে হালদা রাবার ড্যাম, দাঁতমারা সেল্পী রোড, এবং হাজারীখীল অভয়ারণ্যে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থীর সমাগম হতে দেখা যায়। ফটিকছড়ি-রামগড় সীমান্তে হালদার উৎসমুখসহ বিশেষ করে উত্তর ফটিকছড়িতে নিবিড় বনাঞ্চলসহ আরও বহু প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ রয়েছে যেখানে অবাধেই ইকোট্যুরিজম ব্যবসা করা যায় বলে সচেতনদের ধারণা। নাজিরহাটের ৫০ শয্যার উপজেলা হাসপাতাল থেকে মূলত সেবা পান নাজিরহাট এবং আশপাশের হাটহাজারীর মানুষ। ফটিকছড়ি উপজেলা সদর বিবিরহাটে ২০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হলেও সেখানে জনবল নেই। অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা এবং দূরত্বের কারণে উত্তর ফটিকছড়ির মানুষ এই দুই হাসপাতাল থেকে সেবা নিতে পারেন না। উপজেলায় ৩ হাজার ৫৫৯ হেক্টর পতিত জমি পড়ে আছে। এসব পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হলে কৃষি ক্ষেত্রে আরও বিপ্লব ঘটবে। পরিবেশবান্ধব একটি মাত্র ইটভাটা আছে ফটিকছড়িতে। বাকিগুলো প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করছে। উজাড় করছে জমির উর্বর টপ সয়েল।

পাইন্দং হতে ভূজপুর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে। দক্ষিণ ফটিকছড়ির ধর্মপুর, খিরাম ও বক্তপুর এলাকায়ও ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। উজাড় হচ্ছে বন। এ নিয়ে বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত