পাহাড়ি শহর রাঙামাটি এখন যেন রঙিন ফলের রাজ্য। জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই হাট-বাজারে ভিড় জমেছে আম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস আর কদবেলসহ নানারকম ফলের। জেলার বনরূপা সমতাঘাট, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি, ভেদভেদী বাজার সবখানেই চোখে পড়ে বাহারি ফলের সারি। সকালে সূর্য ওঠার আগেই শুরু হয় কেনাবেচা। মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে চারিদিক। এই মৌসুমে পাহাড়ি ফলের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে কৃষকদের ব্যস্ততা। কাপ্তাই হ্রদের পাড়ঘেঁষা এলাকা, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি ও লংগদুর মতো দুর্গম পাহাড়ি উপজেলা থেকে নৌকাণ্ডবোটে করে ফল নিয়ে আসেন প্রান্তিক কৃষকরা। কাঠের তৈরি নৌকায় ঠাসা ফলের ঝুড়ি আর গায়ে রোদের এই দৃশ্য যেন এক শিল্পকর্ম। পাহাড়ি পথ পেরিয়ে, নৌপথের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পৌঁছান তারা জেলা সদরের বিভিন্ন হাটে।
ভোর হতে না হতেই বাজারে ভিড় জমে বেপারি, খুচরা বিক্রেতা ও পাইকারদের। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফল ব্যবসায়ীরাও ছুটে আসেন এখানে। চলে দরদাম, আলাপ, আলোচনা। কেউ পাকা কাঁঠাল কিনছেন, কেউ লিচুর টাটকা ঝুড়ি গুনছেন, কেউবা আবার আনারসের মিষ্টি গন্ধে মুগ্ধ হয়ে কিনছেন একাধিক ডজন।
রাঙামাটির ফল এখন শুধু স্থানীয় চাহিদা মেটাচ্ছে না, পিকআপ, ট্রাক ভর্তি করে যাচ্ছে জেলার বাইরেও। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাঙামাটিতে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকার ফল বেচাকেনা হয়। এসব ফল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ ছাড়াও সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে রপ্তানিও হচ্ছে।
তবে এত সম্ভাবনার মাঝেও কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে বাজারে ভাটা পড়ে। অনেকে আসতে পারেন না, আবার আসলেও ফল বিক্রি না হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েন। কারণ, ফলগুলো অধিকাংশই পচনশীল। দীর্ঘক্ষণ রাখার উপায় নেই। একদিকে হ্রদে পানির স্তর নিচে নামায় নৌযান চালাতে সমস্যা, অন্যদিকে বজ্রপাত, ঝড়ের কারণে নিরাপত্তার শঙ্কা।
প্রান্তিক কৃষকের ভাষায় ‘মুনাফার আগে ভাবি লোকসানের কথা’ চাষি মো. আনোয়ার হোসেন, যিনি লংগদু থেকে কাঁঠালের বোঝা নিয়ে এসেছেন, বলেন রাতে রওনা দিয়ে সকালে পৌঁছাই। রাস্তাঘাটের কষ্ট তো আছেই, এখন আবার ঝড়-বৃষ্টির ভয়। ফল পচে গেলে সব শেষ। আরেক চাষি রুনু চাকমা বলেন, যদি একটা হিমাগার থাকত, তাহলে অন্তত একটু সময় পেতাম ফল রাখার। আর দামও পেতাম ঠিকঠাক।