কাউখালী উপজেলায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এলজিইআরইডির বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় ৪০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ রাস্তা, গার্ডার ব্রিজ, সাইক্লোন সেল্টার, ড্রেন নির্মাণসহ ২৫ থেকে ৩০টি প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে ঠিকাদাররা নিরুদ্দেশ হয়ে যান।
যার ফলে এই সমস্ত উন্নয়ন কাজগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। চরম ভোগান্তির শিকার সাধারণ মানুষ। এই সমস্ত রাস্তা ব্রিজগুলো মানুষ চলাচলে জন্য অনুপযোগ হয়ে পড়লে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশল অধিদপ্তর এ সব উন্নয়ন কাজ করার জন্য টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্য আদেশ দেয়া হয়। এর মধ্যে কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের ৫০ ভাগের বেশি সমাপ্ত করে করে উধাও। আবার কিছু কিছু রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করে ইট বালুর খোয়া ফেলে রেখেছে। কোথাও কোথাও ব্রিজ ভেঙে পাইলের কাজ শেষ করে ফেলে রেখেছে কাজ। যার ফলে মানুষের গাড়িতে চলা তো দূরের কথা পায় হেঁটে চলতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
প্রকল্পগুলো হলো- জিওবিএম, বিজেপি, আইবিআরপি, আরআইডিপি-৩, সিসিটিএফ, এমডিএসপি, আইপিসিপি, পিডিআরআইডিপি এবং ডিআরআরআই ডব্লুপি। এর মধ্যে জিওবিএম, প্রকল্প অধীনে আস্পদ্দি- দাসেরকাঠি সড়কে উনি ব্লকের ৬১ লাখ টাকা কাজ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরআর এন্টারপ্রাইজ পিরোজপুর। বিজেপি প্রকল্পের অধীনে মোল্লারহাট সাপলেজা সড়ক, পারসাতুরিয়া আদম আলী ব্রিজ সংলগ্ন সড়ক ও ব্রিজের কাজ ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএল ভান্ডারিয়া পিরোজপুর অর্ধেকের বেশি কাজ করে ফেলে রেখেছেন।
যাতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। এছাড়া আইবিআরপি প্রকল্পের অধীনে শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে প্রায় ৬ কোটি টাকা বরাদ্দের গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের কাজটি পাইলিং কাজ করে ফেলে রেখেছে ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড অথচ এই কাজ ২১ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এছাড়াও পার সাতুরিয়া সালেকিয়া মাদ্রাসার সংলগ্ন গার্ডার ব্রিজ, সয়না রঘুনাথপুর শাজাহান মাস্টারের বাড়ির সামনে গার্ডার ব্রিজ, জয় কুল খেয়া ঘাট গার্ডার ব্রিজ, চিরাপাড়া সুবিদপুর রোডে গার্ডার ব্রিজ, জোলাগাতি ফলইবুনায়া সড়কে গার্ডার ব্রিজ, কেউন্দিয়া সড়কে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজ ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সবগুলো কাজই অর্ধেকের বেশি করে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে এই সমস্ত কাজের বেশিরভাগ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক হলেন সাবেক এমপি মহিউদ্দিন মহারাজ ও তার ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজ হোসেন। আইআরআইডিপি ৩ প্রকল্পের অধীনে চিরাপাড়া জিএম স্কুল - ডুমজুড়ি সড়ক উন্নয়ন, কাজটি মেসার্স ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ জিয়া নগর পিরোজপুরের লাইসেন্সে ২০২০ সালে বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও আংশিক কাজ করে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অন্য দিকে এই প্রকল্পের অধীনেই ইফটি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড হোগলা বেতকা বাজার হয়ে পুলেরহাট সড়ক উন্নয়ন, কাজটিও ২৩ সালে শেষ করার কথা থাকলেও অর্ধেক পরিমাণ কাজ করে ফেলে রেখেছেন। যার ফলে এই সমস্ত এলাকার মানুষের চলাচলের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে শিয়ালকাঠি দারুদ সুন্নাত কামিল মাদ্রাসার সাইক্লোন সেলটার নির্মাণ এবং সোনাকুর ফেরিঘাট সড়ক নির্মাণের কাজ ১৮-১৯ সালে শেষ করার কথা থাকলেও কাজ সমাপ্ত না করাই ফেলে রেখেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এম ডিএসপি প্রকল্পের অধীনে উত্তর কেউন্দিয়া স্কুল সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ কাজটি স/ং গজ শঊ শংধ (লা) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আংশিক কাজ করে ফেলে রেখেছে। এছাড়াও পিডিআরআইডিপি প্রকল্পের অধীনে উত্তর বাজার কেউন্দিয়া সড়ক, শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন পরিষদ তালুকদার হাট সড়ক, জয়কুল হইতে আয়রন দাখিল মাদ্রাসা সড়ক, হোগলা হাইস্কুল থেকে নান্না মেম্বার এর বাড়ি পর্যন্ত সড়ক, চিড়াপাড়া সুবিদপুর সড়ক, রঘুনাথপুর মেঘ পাল সড়ক নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নামে মাত্র কাজ শুরু করে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড। এভাবেই কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই সমস্ত কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। তাদের বেশিরভাগই পলাতক।
কাউখালী উপজেলা প্রকৌশলী ইমতিয়াজ হোসেন বলেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত আছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত কাজ সমাপ্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতর কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বিষয়টি মনিটরিং করছেন।