ঢাকা বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

প্রতি ডিমে লোকসান আড়াই টাকা

ঈশ্বরদীতে নিঃস্ব হচ্ছেন পোল্ট্রি খামারিরা
প্রতি ডিমে লোকসান আড়াই টাকা

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের পোল্ট্রি খামারি মো. নজরুল ইসলাম। বিদেশ থেকে ফিরে এসে প্রায় ২০ বছর ধরে পোল্ট্রির খামার করে ডিম উৎপাদন করেন। বর্তমানে তার খামারে ১৫ হাজার লেয়ার মুরগি লালন পালন করছেন। এ থেকে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার ডিম পাওয়া যায়। খামারি নজরুল জানায়, প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ৮ টাকা ৬০ পয়সা। খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিম ৯ টাকা করে বিক্রি করলেও পাইকাররা খামারিদের নিকট থেকে প্রতিটি ডিম কিনছেন ৭ টাকা ৪০ পয়সা। এতেই প্রতিটি ডিমের লোকসান হচ্ছে এক টাকা ২০ পয়সা। এর ছাড়াও ভেঙে যাওয়া ডিম ও ছোট ডিম ফেরত আসে পাইকারদের কাছ থেকে। এই ফেরত আসা ডিমগুলো তখন বেকারিদের কাছে প্রতি পিস ৫ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। ডিম প্রতি লোকসান হচ্ছে দুই থেকে আড়াই টাকা। প্রতিদিন তার খামারে লোকসান হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

উপজেলার আরামবাড়ীয়া এলাকার খামারি সুজন আলী কানন বলেন, বর্তমানে তার খামারে ১৫০০ মুরগি রয়েছে এ থেকে প্রতিদিন ডিম পাওয়া যায় ১২৫০টি। তিনি জানান, তার খামারে প্রতিদিন রেডি ফিড লাগে ২০০ কেজি। ৫০ কেজির রেডি ফিডের ১ বস্তার দাম ২৬০০ টাকা। এছাড়া খামারে অসুস্থ না হলেও ভ্যাকসিন, ঠাণ্ডা ডোজ, টক্সির, সালমোনি ডোজ ও লিভার টনিক দিতে হয়। এতে তার উৎপাদন খরচ ডিম প্রতি প্রায় ৯ টাকা পড়ে যায়। তার খামারে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। খামারিরা জানান, গত কোরবানি ঈদের আগ পর্যন্ত ডিম বিক্রি করে লাভ না হলেও উৎপাদন খরচের সমান সমান হতো। ঈদ পরবর্তী সময় থেকে ডিমের দাম পড়ে যায়।

প্রতি ডিমে দুই থেকে আড়াই টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণতে হচ্ছে। প্রতি ডিমের উৎপাদন খরচ ৯ টাকার উপরে। সেখানে ৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে। লোকসান হওয়ায় আমাদের উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অনেক খামারি নিঃস্ব হয়েছে। ফলে এসব খামার বন্ধ করে দিয়েছে। আবার অনেকেই দেউলিয়া হয়ে বাড়ি ছাড়া হয়েছে। ডিমের দাম কমায় প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এভাবে চলমান থাকলে আমাকেও দেউলিয়া হতে হবে।

শুধু কানন নয়, তার মতো উপজেলার উপজেলার মুনশীদ পুর, মুলাডুলি, শ্রীপুর, মাড়মী, আহ্লাদী, পৌর শহরের পূর্ব টেংরি, মানিকনগর, বাগবাড়িয়া, অরণখোলা, বেদবাড়িয়া ও ভুতের গাড়ি আরআরপিসহ উপজেলার রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত ২১টি লেয়ার খামারে ১ লাখ ৪৬ হাজার ১০০টি মুরগি পালনের সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের রেজিস্ট্রেশন বিহীন খামার রয়েছে। ডিমের দরপতনে প্রান্তিক ও ঋণ নিয়ে খামার করা খামারিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

খামারিদের দাবি, ডিমের দাম কমলেও খাদ্য, মেডিসিনসহ উৎপাদন খরচ কমছে না। এতে ঋণ, সুদ ও জমি বিক্রি করে যারা খামার পরিচালনা করছিলেন। তারাই অনেকেই দেউলিয়া হয়েছেন। বর্তমান বেশিভাগ খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। এ দিকে ডিমের দাম কমলেও তেমন বিক্রি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের দাবি, ডিমের চাহিদা কমায় আগের চেয়ে ডিম বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে। উপজেলার মুলাদলি ইউনিয়নের মাড়মি গ্রামে রাইসা পল্টি ফার্মের মালিক দিলারা পারভিন বলেন, এখন তো ডিমের দাম কমছে, তাহলে যদি পাশ্ববর্তী দেশগুলো ডিম রপ্তানি করা যেত তাহলে লাভ না হলেও ডিমের উৎপাদন খরচটা উঠতো। ডিমের দাম কমায় একদিকে যেমন খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে আমরা স্বাভাবিক সময়ের মতো ডিম বিক্রিও করতে পারছি না। অনেকের ডিম আড়তে থেকে ভেঙে ও পঁচে নষ্ট হচ্ছে।

উপজেলার আরামবাড়িয়া বাজারের পাইকারি ডিম বিক্রেতা ফজলু আলী বলেন, গত ঈদে ১০ দিনের ছুটি ছিল। সেই ছুটিতে যে ডিমের চাহিদা কমেছে, তা আর বাড়েনি। সেই ১০ দিনে ডিম জমে যাওয়ায় ডিমের সরবরাহ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।

তবে তেমন চাহিদা না থাকায় ডিমের দাম কমেছে। খামারিদের পাশাপাশি আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা. আকলিমা খাতুন বলেন, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো আমাদের খামারিরা। তাদের হাতে যদি সঠিক পুষ্টিমানের ফিড সঠিক সময়ে ও সুলভ মূল্যে পৌঁছে দেওয়া যায়, তাহলে উৎপাদনে অভাবনীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব। খামারিদের স্বার্থে খাদ্য, ওষুধ ও বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতে পারলে ডিমের উৎপাদন খরচ কমে আসবে এবং খামারিরাও লাভবান হবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত