ফেনীতে বিভিন্ন জাতের কুল চাষ করে সাফল্যে লাভ করেছেন কৃষক আসমত আলী। কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠা আসমত আলীর ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে কৃষিকাজে শুরু করেন। অক্লান্ত পরিশ্রম আর সাধনার ফলে আজ তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তার এই ঈর্ষণীয় সাফল্যে দেখে এলাকার অনেকেই কুল চাষ করে বেকারত্ব ঘোচাতে স্বপ্ন দেখছেন। ফেনী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড, পূর্ব ফলেশ্বর এলকার আসমত আলী ৪০ শতক জমি লিজ নিয়ে দুইটি কুল বাগান গড়ে তুলেছেন। তার কুল বাগান থেকে গত বছর লাভ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকারও বেশি। এ বছর ভয়াবহ বন্যার কারনে কুল বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরবরতী সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বাগানের যত্ন নিয়েছেন। চলতি মৌসুমে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। সরেজমিনে কুল বাগানে গেলে তিনি জানান, সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ ও উৎসাহ পেয়ে ৪ বছর পূর্বে দুইটি বাগানে ২০০টি কুল গাছের চারা লাগিয়ে ছিলেন। গাছের ডাল পালা বেড় উঠার কারণে পরবর্তীতে ১০০টি গাছ কেটে ফেলে দেন। বাকি ১০০টি গাছে কুলের বাম্পার ফলন হয়েছে।
দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করায় খুব বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি কৃষক আসমত আলী। তার বাবার নাম মৃত মোহাম্মদ ইসলাম ও মাতা মোর্শেদা খাতুন। ৩ ভাই ৪ বোনের মাঝে আসমত আলী সবার বড়। আসমত আলীর বয়স যখন ২২ বছর, তখন তার বাবা মারা যান। বাবা মারা গেলে ভাই বোনদের প্রতি দায়িত্ব পালন করেন। বাবা মারা যাওয়ার পূর্বে শৈশবকাল থেকেই বাবার সঙ্গে কৃষি কাজ করে পরিবার পরিজনকে পরিচালনা করে আসছেন কষক আসমত আলী। বৈবাহিক জীবনে তার ১ স্ত্রী, ৩ পুত্র এবং ১ মেয়ে রয়েছে। কুল চাষ করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সুখী সংসার অতিবাহিত করছেন। ৪ বছর পূর্বে ফেনী সদর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি কুল চাষ শুরু করেন। তখন কুল চাষের জন্য চারা গাছের ব্যবস্থা করে দিয়ে ছিলেন সদর উপজেলা কৃষি অফিস। বাগানে রয়েছে আপেল কুল, কাশ্মীরি কুল, বনসুন্দরী কুল ও বাউকুলসহ বিভিন্ন জাতের কুল। বাগানে এসে কুল কিনে নিয়ে যায় জেলা শহর ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকাররা।
আসমত আলীর বাগানে কুল গাছের প্রতিটি ঢালে সারি সারি কুল, দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি খেতেও মিষ্টি। কুল কেজি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। এরই মধ্যে কুল বাগানে ১০০টি গাছ থেকে ১০ মন কুল বিক্রি করে ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আরো ১৫ মণ কুল বিক্রি করার মত রয়েছে। সব মিলিয়ে এবার প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ করার আশা করছেন কৃষক আসমত আলী। তবে জমি তৈরি, চারা ক্রয়, রোপণ, পরিচর্যা এবং কুল উত্তোলণ পর্যন্ত তার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে মিনিমান ১ লাখ টাকা লাভ করবেন, যা অন্য কোন ফসল থেকে সম্ভব নয় বলে আসমত আলীর অভিমত। পরবর্তী বছরগুলোতে গাছ আরো পরিপক্ক হলে কুল উৎপাদন আরো বাড়বে।
এতে আরো বেশি আর্থিক লাভ আসবে। কুল বাগানে পশু পাখি ও ক্ষতিকর পোকার উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্য পুরো বাগানকে মশারী জাতিয় নেট ব্যবহারও করেছেন। শুধু কুল চাষেই নয়, প্রায় ৪ একর জমি বর্গা নিয়ে অন্যান্য কৃষিকাজ করে থাকেন আসমত আলী। চাষ করেছেন টমেটো, বরবটি, খিরা, সিম, লাউ, কচু, পাতা কফি, ফুল কফি, ভেন্ডি, তিতকরলাসহ বিভিন্ন জাতের সবজি। তবে কুল চাষে লাভের মুখ দেখছেন বেশি। এর পরেই লাভের মুখ দেখছেন টমেটো চাষে। তাছাড়া কুল চাষ করে ফেনীর কাজিরবাগ এলাকায় আসমত আলী এখন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার দেখাদেখি অনেক বেকার যুবক এখন কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেছেন। অনেকেই আসেন তার কাছে পরামর্শ নিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল বাতেন বলেন, গত বছরে জেলায় ৮৮.০৫ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৯৭৬ মেট্রিক টন কুল। চলতি মৌসুমের হিসাবটি চলমান। তবে ফেনীতে কুল চাষের আগ্রহ বাড়ছে। ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নের উপসহকারী কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন বলেন, কোনো ধরনের রাসায়নিক সার বা কীটনাশকের ব্যবহার না করেই সে ভালো আকার ও স্বাদের কুল পাচ্ছে আসমত আলী। এ কারণে বাজারে তার কুলের চাহিদা বেশি। আসমত আলী বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু করেছেন। তার সাফল্য বেশ কয়েকজনকে কুল চাষে উদ্বুদ্ধ করেছে। ফেনী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মহি উদ্দিন উপসহকারী জানান, চলতি মৌসুমে শুধু সদর উপজেলায় ৬৫ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ৯৭৫ মেট্রিক টন। ফেনীর একজন আদর্শ কৃষক আসমত আলী। দরিদ্র পরিবারেই তার জন্ম। তার সঙ্গে কৃষি অফিসের যোগাযোগ আছে। কৃষি অফিস থেকে তাকে প্রয়োজনী পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কুল চাষের পাশাপাশি টমেটো চাষে সফল হয়েছেন আসমত আলী। সামনে রোজার মাসে কুল ও টমেটোতে ভালো দাম পাবে। আমরা তার সফলতা কামনা করি।