ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সফল ফ্রিল্যান্সার প্রতিবন্ধী রাব্বানী

সফল ফ্রিল্যান্সার প্রতিবন্ধী রাব্বানী

গোলাম রাব্বানী (২৩)। এই যুবক নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে গড়ে তুলেছেন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে। তিনি পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের চিংগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. বাবুল খানের একমাত্র ছেলে। পাননি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। পা রাখেনি স্কুলের গণ্ডিতে। কিন্তু পেয়েছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সম্মাননা। তার আয় দিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ঋণ শোধ করেছেন। একটা সময় পরিবার যাকে বোঝা মনে করত সেই এখন পরিবারের একমাত্র ভরসা। শুধু নিজের নয়, এখন পুরো পরিবারের দায়িত্বই কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, শরীরের কোমর থেকে নিচের অংশ সম্পূর্ণ অচল। দাঁড়ানো তো দূরের কথা, ঠিকমতো বসতেও পারেন না গোলাম রাব্বানী। দুই পা অচল থাকায় ঘরের একটি কাঠের চৌকির পাশে একটি তক্তায় কম্পিউটার সরঞ্জাম রেখে দিন-রাত কাজ করেন।

২০২১ থেকে ২০২৩ সালের কোডম্যানবিডি এর তিনটি ব্যাচে অংশ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যেই তিনি ফাইভার মার্কেটপ্লেসে লেভেল-২ সেলার হিসেবে ৩০০টিরও বেশি অর্ডার সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। লোন নিয়ে একটি কম্পিউটার কিনে দিনরাত ১০-১৫ ঘণ্টা পরিশ্রম করে সফলতা পেতে থাকেন। ২০২৪ সালে এক ক্লায়েন্টের সহযোগিতায় আধুনিক প্রযুক্তি হুইলচেয়ার ক্রয় করেন, যা ব্যাটারিচালিত। তিনি এখন কাজ করছে ডিজিটাল মার্কেটিং মুক্ত পেশাদার হিসেবে। তবে তার এখন সবচেয়ে প্রয়োজন একটি নিরাপদ বসতঘর, স্বাস্থ্যসম্মত রুম, যেখানে বসার উপযোগী চেয়ার এবং ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।

রাব্বানীর অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন সমাজের অন্যান্য হতাশ মানুষদের কাছে। তিনি বলেন, কিছু করার ইচ্ছা থাকলেই পারা যায়। ২০২১ সাল পর্যন্ত নিজেকে অর্থহীন মনে করতেন এই চলনশক্তিহীন যুবক। জীবনকে বোঝা মনে করতেন, ভাবতেন সারাটা জীবন বাবা-মায়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে কাটবে। কিন্তু এক সময় নিজেকে নিয়ে কিছু করার দৃঢ় সংকল্প নেন। ১৯ মাসে নিজেই কোরআনের হাফেজ হয়েছেন। এরপর ফ্রিল্যান্সিংয়ের স্বপ্ন নিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন।

তবে তরুণ প্রজন্মকে আহ্বান জানিয়েছে গোলাম রাব্বানী। বেকার না বসে থেকে প্রযুক্তির উপর দক্ষতা অর্জনের মধ্যে দিয়ে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়।

গোলাম রাব্বানী মা আখিনুর বেগম বলেন, তার ৩ সন্তান। এর মধ্যে গোলাম রাব্বানী ২য় সন্তান। বড় বোন সুইটি আক্তারও শারীরিক প্রতিবন্ধী। আর ছোট বোন আফসানা (১০) স্বাভাবিক। অনেক জোরাজোরির পর সুদে টাকা নিয়ে একটা কম্পিউটার ক্রয় করে দেয় ছেলেকে। সেই যে শুরু এরপর থেকে আর থামেনি গোলাম রাব্বানী।

গোলাম রাব্বানী পিতা মো. বাবুল খান বলেন, তার ছেলে পড়াশোনা করেনি। সম্পূর্ণ অচল, কিন্তু এখন আয় করছে। তবে কাজের পরিবেশ নিয়ে আমি সবসময় উদ্বিগ্ন থাকি।

মুসুল্লিয়াবাদ ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসার প্রভাষক মো. সাইদুর রহমান বলেন, লজিস্টিক সাপোর্ট করা হলে স্থানীয় বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী করতে সাহায্য করতে পারে।

গোলাম রাব্বানী প্রমাণ করলেন ইচ্ছে শক্তি থাকলে শারীরিক সমস্যা মোকাবিলা করে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত