ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ফেনী

শহিদ ইকরামের স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার

শহিদ ইকরামের স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার

ইকরাম বিস্কুটের প্যাকেটটি নিয়ে সড়ক পার হতে যেয়ে প্যাকেটটি ছিঁড়ে একটি বিস্কুট মুখে দেয়। এমন সময় পিছন থেকে মাথায় গুলি করে পুলিশ। মুহূর্তেই ইকরামের মগজ ছিটকে সড়কে পরে যায়। এভাবেই বড় ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনাটি বর্ণনা করছিলেন ছোট ভাই ইমরান হোসেন ফারুক। আর নিহত ইকরামের বাবা আনোয়ার হোসেনের প্রশ্ন এ হত্যার দায় কে নেবে? তিনি বলেন, বাবা হয়ে সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়ার কষ্ট কাউকে বলে বুঝাতে পারব না। ছেলেকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। ঘাতকরা সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। আমার ছেলের কি অপরাধ ছিল? কেন তাকে গুলি করে হত্যা করা হলো? এতোটাই অপরাধ করলে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতো তারা। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। নিশ্চয়ই তিনি সঠিক বিচার করবেন।

নিহত ইকরাম হোসেন কাউছার ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার রাজসপুর গ্রামের হাজী বাড়ির স্কুল শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তিন সন্তানের মধ্যে ইকরাম ছিল মেঝু সন্তান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ঢাকা কবি নজরুল কলেজের মাস্টার্স শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউছার। ২০২৪ সালের ১৭ ও ১৮ জুলাই দু’দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মেসগুলোতে রান্না বন্ধ ছিল। দু’দিন কিছু খেতে না পেরে কাউছার খাবারের জন্য ১৯ জুলাই শুক্রবার দুপুরে মেস থেকে বের হয়। জুমার নামাজ শেষে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ঠেলাওয়ালার দোকান থেকে চেয়ে ভাত খায় ইকরাম। পরে ঠেলাওয়ালা সেঁধে একরামকে রাতের খাবারের জন্য একটি বিস্কুটের প্যাকেট ধরিয়ে দেয়। ইকরাম বিস্কুটের প্যাকেটটি নিয়ে সড়ক পার হতে যেয়ে প্যাকেটটি ছিঁড়ে একটি বিস্কুট মুখে দেয়। এমন সময় পিছন থেকে মাথায় গুলি করে পুলিশ। মুহূর্তেই ইকরামের মগজ ছিটকে সড়কে পরে যায়। পরে তাকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলে পাঠানো হয়।

এভাবেই বড় ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনাটি বর্ণনা করছিলেন ছোট ভাই ইমরান হোসেন ফারুক। তিনি বলেন, মৃত্যুর ২০ মিনিট আগেও বড় ভাই ইকরাম হোসেন কাউছার বাড়িতে ফোন করেছিলেন। কবি নজরুল কলেজ সংলগ্ন লক্ষীবাজার এলাকায় ভাই যে জায়গায় থাকতো সেখানে বিদ্যুৎ না থাকায় তার মোবাইলে চার্জ ছিল না। যেই ঠেলাওয়ালা ভাইকে ভাত খাইয়েছিল সেই ঠেলাওয়ালার ফোন থেকে বাড়িতে ফোন করে ইকরাম। সেই ঠেলাওয়ালাই ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদটি প্রথম বাড়িতে জানায়।

ইমরান আরও বলেন, ভাইয়ার শেষ ফোন কলটি ছিল বাবার সঙ্গে শেষ কথা। বাবাকে সে বলেছিল সে ভালো আছে। তার জন্য দোয়া করতে। ছোট ভাই আমাকে (ইমরানকে) দেখে রাখতে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাড়ি ফিরে আসবে। নিহত ইকরামের বাবা মাওলান আনোয়ার হোসেন বলেন, সামান্য স্কুল শিক্ষক হয়ে তিন সন্তানকে পড়ালেখা করিয়ে যাচ্ছি। তার বড় ছেলে ইকরাম এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। সে মেধাবী হওয়ায় ঢাকা কবি নজরুল কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স পড়ছিল। জমি বিক্রি করে ছেলের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছিলেন। ছেলের স্বপ্ন ছিল মাস্টার্স শেষ করে সে বিসিএস এ অংশগ্রহণ করবে। পুলিশের গুলিতে তার স্বপ্ন অংকুরে বিনষ্ট হল। এ হত্যার দায় কে নেবে?

ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে ১৯ জুলাই রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন তার মা-বাবা। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ নিয়ে আসলে রাত ৯টায় তার নিজ এলাকায় দাফন সম্পন্ন হয়। ছেলের মৃত্যুতে বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন তার মা রুমি আক্তার। অনেকটা বাকরুদ্ধ মা। ছেলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। ইকরামের একমাত্র বোন জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, আমাদের পরিবার খুবই গরীব। পড়ালেখা শেষ করে ইকরাম পরিবারে হাল ধরবে আমাদের দুঃখ ঘুচবে এমনটাই আশা করেছিলাম। এখন আমার ভাই নেই, আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত