ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চাঁদপুরে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এলপিজিসহ জ্বালানি

চাঁদপুরে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এলপিজিসহ জ্বালানি

চাঁদপুর জেলা সদরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার। ক্রেতার সহজলভ্যতার জন্য এই সিলিন্ডার বিক্রির অনুমোদন থাকলেও নিয়ম নীতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের। কিন্তু কোনো ধরনের নিয়ম না মেনেই একই দোকানে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি ও জ্বালানি তেল। ২০১৬ সালে অনিয়ম করে একই স্থানে এলপিজি ও জ্বালানি বিক্রির কারণে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অগ্নিকাণ্ডে ৪ জন দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। তখন প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে উঠলে এরপর থেকে নীরব ভূমিকায়। তবে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন সদর উপজেলা প্রশাসন।

সম্প্রতি চাঁদপুরের আঞ্চলিক, উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক এবং বাজারগুলোতে দেখা গেছে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার। দোকানের সামনে প্রচণ্ড তাপমাত্রায় রাখা হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। এসব সিলিন্ডার সড়কের পাশে রাখা হয়, যাতে করে ক্রেতাদের চোখে পড়ে। একটি দোকানে কী পরিমাণ সিলিন্ডার রাখা যাবে এসব নিয়মের কিছুই জানেন না ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও গ্যাস সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে সেটাও অবগত নন ক্রেতা ও বিক্রেতা।

শহর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে মুদি, ফোন, চায়ের দোকান, সার-কীটনাশক, টেইলারিং দোকানে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। পাশাপাশি একই দোকান বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল ও গ্যাস সিলিন্ডার। ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার ধরন নির্দিষ্ট করে ট্রেড লাইসেন্স করতে হয়, সেটিও মানা হচ্ছে না জ্বালানি বিক্রির ক্ষেত্রে। ইচ্ছেমত চলছে এ সব জ্বালানি ব্যবসা।

এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিয়ম হচ্ছে- একটি দোকানে ১২ লিটারের সর্বোচ্চ ৮টি এবং বড় হলে ৩টি রাখা যাবে। এর জন্য লাইসেন্স লাগবে না। তবে সিলিন্ডার রোদে না রেখে ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে। সদর উপজেলার চান্দ্রা চৌরাস্তার স্যানেটারি মালামাল বিক্রি করেন ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম। তিনি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারও বিক্রি করেন। তবে বিক্রির জন্য অনুমোদনের বিষয় তিনি কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, এলাকার অনেক দোকানে বিক্রি হয়, আমিও তাদের মতো বিক্রি করি। কি পরিমাণ সিলিন্ডার মজুদ রাখা যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন এই বিষয়ে তিনি অবগত নন।

সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারের মোটর গ্যারেজে বিক্রি হয় গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। দোকানের মালিক সুমন দাস বলেন, কোনো নিয়মই জানা নেই বিক্রির জন্য। দুর্ঘটনা হলে কি করণীয় সেটাও বলতে পারেননি এই ব্যবসায়ী।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া বাজার, ভাটিয়ালপুর, নয়ারহাট, রামপুর, গোয়ালভাওর এলাকার দোকানগুলোতে দেখা গেছে প্রায় দোকানে ২০-২৫টি করে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুদ। অনেক দোকানি রোদের মধ্যে রেখেছেন সিলিন্ডার।

রামপুর বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, সিলিন্ডার দোকানের সামনে না রাখলে ক্রেতারা জানবে কীভাবে। এজন্য রোদে রাখা হায়। সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে শহরের বাসিন্দা আল-ইমরান শোভন, মাইনুল ইসলাম, শাহজাহান বলেন, এই বিষয়টি জানতাম না। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহারে আগামীতে সতর্ক থাকবো। শহরে নিউ ট্রাক রোডের ব্যবসায়ী শামীম, সেলিম খান ও সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করি। কিন্তু এটির মেয়াদ থাকে জানা ছিল না। এখন থেকে মাল ক্রয়ের সময় মেয়াদ দেখে নিতে হবে।

এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের উপরের অংশে এ বি সি ও ডি অক্ষরের সামনে সাল দেওয়া থাকে। ‘এ’ জানুয়ারি-মার্চ, ‘বি’ এপ্রিল-জুন, ‘সি’ জুলাই-সেপ্টেম্বর এবং ‘ডি’ অক্টোবর-ডিসেম্বর। সিলিন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ হিসেবে লেখা থাকবে ‘এ’-২০২৫ অর্থাৎ এটির মেয়াদ শেষ ২০২৫ সালের মার্চ মাসে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএমএন জামিউল হিকমা বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানির বিক্রির বিষয়টি অবগত হলাম। অতি শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ভোক্তার সহজ লভ্যতার কারণে স্থানীয় দোকানগুলোতে বিক্রির জন্য অনুমোদন লাগে না। তবে যে কোনো দোকানে ১২ লিটারের ৮-১০টির বেশি সিলিন্ডার রাখতে পারবে না। ১২ লিটারের বেশি ওজনের হলে ৩-৪টি রেখে বিক্রি করতে পারবে। অতিরিক্ত মজুদ করলে অবশ্যই বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স লাগবে। রাস্তার ওপর রেখে বিক্রি করতে পারবে না। ঠান্ডা জায়গায় সিলিন্ডার রাখতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত