ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কুয়াকাটায় রাসমেলার প্রস্তুতি

* পর্যটন শহর কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে প্রস্তুতির ব্যস্ততা। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা ও মা লক্ষ্মীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব উদযাপিত হয়, যা এখন কুয়াকাটার অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় ও পর্যটন উৎসবে পরিণত হয়েছে
কুয়াকাটায় রাসমেলার প্রস্তুতি

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে আগামী ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব রাসমেলা ও রাসপূর্ণিমা উৎসব। এ উপলক্ষে এরই মধ্যে পর্যটন শহর কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে প্রস্তুতির ব্যস্ততা। হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা ও মা লক্ষ্মীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব উদযাপিত হয়, যা এখন কুয়াকাটার অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় ও পর্যটন উৎসবে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি কুয়াকাটা শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজল বরন দাস জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব আয়োজন করছি। আগামী ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে রাসমেলা। গঙ্গাস্নান, পূজা-অর্চনা, ধর্মীয় আলোচনা এবং নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকবে এ উৎসবে। তিনি আরও বলেন, এই উৎসব কুয়াকাটার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক। দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত, সাধু-সন্ন্যাসী ও দর্শনার্থী এই সময়ে কুয়াকাটায় সমবেত হন।

তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নিহার রঞ্জন মন্ডল বলেন, রাসমেলা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয় এটি এখন একটি পূর্ণাঙ্গ উৎসবে রূপ নিয়েছে। এখানে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ সমানভাবে অংশ নেয়। ব্যবসা-বাণিজ্যও জমে ওঠে, পর্যটকের আগমনে কুয়াকাটা হয়ে ওঠে উৎসবমুখর। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য আমরা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করছি। এদিকে, কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান জানান, রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে কুয়াকাটায় পর্যটকের চাপ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। থানা পুলিশ, নৌপুলিশ, উপজেলা প্রশাসন এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের যৌথ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। পর্যটক রুবেল হোসেন, যিনি প্রতিবছর পরিবার নিয়ে রাসমেলা দেখতে আসেন, বলেন, রাসমেলায় কুয়াকাটা যেন অন্যরকম রূপ নেয়। ঢেউয়ের সঙ্গে বাজনা, প্রদীপের আলো আর মানুষের আনন্দ সব মিলিয়ে এক অপূর্ব পরিবেশ। তাই এই সময়টা মিস করা চলে না। স্থানীয় দোকানি আবদুর রহমান বলেন, রাসমেলার সময় আমাদের ব্যবসা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

মেলা মানেই আমাদের জন্য উৎসব, বেচাকেনা, মানুষের ভিড়, আনন্দ সবই থাকে। কুয়াকাটার নীল সমুদ্রের তীরে রাসমেলার মূল আকর্ষণ হলো গঙ্গাস্নান। এই দিনে ভোরে হাজারো ভক্ত ও সাধু সাগরের জলে পুণ্যস্নান করেন। তারপর দিনভর চলে পূজা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদীপ প্রজ্বালন ও নানা ধর্মীয় আচার। উৎসবটিকে ঘিরে পুরো কুয়াকাটা জুড়ে এখন সাজসাজ রব। সৈকতপাড়ে তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী দোকান, প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা ও মেলার মাঠ। পর্যটন এলাকাগুলোতেও চলছে হোটেল-মোটেল বুকিংয়ের ধুম।

স্থানীয়রা বলছেন, রাসমেলা কুয়াকাটার ঐতিহ্যের প্রাণ এটি শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও উৎসবের মিলনমেলাও বটে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত