ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় ছায়াশূন্য হয়ে পড়ল নিহত কালামের পরিবার

মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় ছায়াশূন্য হয়ে পড়ল নিহত কালামের পরিবার

রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খসে পড়ে দুর্ঘটনায় নিহত আবুল কালামের গ্রামের বাড়িতে শোকের রোল পড়ে গেছে। গতকাল সোমবার রাত ২টার দিকে লাশবাহী গাড়ি গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ইশ্বরকাঠি গ্রামে এসে পৌঁছায়। কালামের লাশ সকাল ৯টায় পূর্ব পোড়াগাছা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে সকাল ১০টায় নড়িয়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হয়।

এই দুর্ঘটনা কেবল আবুল কালাম আজাদের প্রাণই কেড়ে নেয়নি দুই শিশু সন্তানসহ দশ ভাই-বোনের পরিবারের মাথার উপরের ছায়াও শূন্যে মিলিয়ে গেল। স্ত্রী, ভাই-বোন, এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক মহল এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার জন্য পরিবারসহ সবাই রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিকেই দায়ী করছেন।

ক্ষতিপূরণসহ দায়ীদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সবাই। এছাড়াও দুই শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব সরকারেকে নেওয়ার দাবি জানান স্বজনরা। পরিবারিক সূত্র জানিয়েছে দশ ভাই-বোনের মেধাবী কালাম ছিল পরিবারের কর্ণধার। গত কয়েক বছর থেকে কালাম স্ত্রী সন্তান নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায় বসবাস করতেন। সে ঢাকার একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি করত।

পনের বছর আগে প্রথমে মা ও পরের বছর তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন। তার পর থেকেই পরিবার প্রধান হয়ে ওঠেন কালাম। বাকি ভাই-বোন তার গাইডলাইন মতো চলতেন। ভাইয়ের এমন মৃত্যু পুরো পরিবারটিকে প্রবল ভাঙনের মুখে ঠেলে দিল। কালামের নাবালক শিশু পুত্র ৪ বছরের আব্দুল্লাহ আবরার ও মেয়ে ৩ বছরের পারিছা মারিয়াম সুরা। তারা এখনও বুঝতেই পারেনি বাবা আর কখনও বাসায় ফিরবে না।

স্ত্রী আইরিন আক্তার প্রিয়া অবুঝ শিশুদের আগামী দেখছেন কেবলই অন্ধকারাচ্ছন্ন। এই অস্বাভাবিক মৃত্যু একটি দরিদ্র কৃষক পরিবারকে যেমন অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিল, তেমনি দুটি ফুটফুটে নাবালক শিশুকেও নিমজ্জিত করল অনিশ্চয়তার অতলে।

কালামের ভাই খোকন চোকদার বলেন, সে শুধু আমার ছোট ভাই ছিল না, ছিল আমাদের পরিবারের প্রধান। ওর পরামর্শ ও সহযোগিতা ছাড়া আমরা কোনো কাজই করতাম না। এখন এই দায়িত্ব কে নেবে? তার ছোট্ট দুইটি শিশু এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? যাদের অবহেলার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

স্ত্রী আইরিন আক্তার প্রিয়া কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার এই বাবা ভক্ত দুইটি অবুঝ শিশু এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। কে পূরণ করবে বাবার আবদার। সন্তানরা বাবাকে ছাড়া কিছুই বুঝত না। আমরা মধ্যবিত্ত হলেও ছেলে মেয়ের কোনো আবদারই অপূর্ণ রাখত না। এখন আমি এদেরকে কেমন করে বাবার স্বপ্নের মানুষ বানাব। আমার সন্তানদেরকে মানুষ করতে সরকার দায়িত্ব নিবে এটাই একমাত্র দাবি।

আর মেট্রোরেল যারা তৈরি করেছে তারা কেন দুর্নীতি করে এমন ঘটনা ঘটালো তার সুষ্ঠ বিচার চাই। নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ রয়েল মাঝি বলেন, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়।

মেট্রোরেল নির্মাণ কাজে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার ও তাদের সহযোগীদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই এমন অনাকিক্সিক্ষত ঘটনা। এটা কোনো দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ে না। পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যাতে করে আগামীতে কেউ এমন অনিয়ম করার সাহস না করে। আর কালামের দুই শিশু সন্তানের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইমরুল হাসান বলেন, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য জেলা প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। প্রাথমিকভাবে দাফন ও আনুসাঙ্গিক ব্যয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহন করছি। এছাড়াও মাননীয় উপদেষ্টা মহোদয়ের নির্দেশক্রমে আমরা সার্বিকভাবে নিহত আবুল কালামের পরিবারের পাশে থাকব। যাতে পরিবারটি কোনো সংকটে না পড়ে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত