ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মুরাদনগরে বছরে ৯৫ হেক্টর কৃষিজমি নষ্ট করছে অবৈধ ড্রেজার

* সরে যাচ্ছে মাটির স্তর * স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
মুরাদনগরে বছরে ৯৫ হেক্টর কৃষিজমি নষ্ট করছে অবৈধ ড্রেজার

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ২২ ইউনিয়নে অবৈধ ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে দীর্ঘকাল ধরে মাটি উত্তোলন চলছে। এই বেপরোয়া কার্যক্রমে ধ্বংস হচ্ছে স্থানীয়দের উর্বর তিন ফসলি জমি, সরে যাচ্ছে মাটির স্তর এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের ফসলি ভূমি। কৃষি অফিস বলছে, উপজেলায় প্রতি বছর প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ হেক্টর কৃষি জমি ড্রেজারে নষ্ট হচ্ছে, যা সরাসরি ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর ফলে স্থানীয় কৃষকদের জীবন-জীবিকা আজ মারাত্মক হুমকির মুখে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালিত হলেও একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কিছুদিন বিরতি দিয়ে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে মুকসাইর, খুরুইল, ইউসুফনগর, কামাল্লা, আমপাল কোরবানপুর, স্বল্পা, আলীপুরা, বি-চাপিতলা, পেন্নই, রোয়াচালা, ছালিয়াকান্দি, দারোরা, খামারগ্রাম, মুকলিশপুর, সীমানারপাড় ও জুগিরখিলসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে অর্ধশতাধিক প্রতিনিয়ত ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেট প্রশাসনের অভিযানকে সাময়িকভাবে এড়িয়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, এক সময় যে জমিতে ধান, গম ও ডালসহ বিভিন্ন ফসল হতো, এখন সেখানে পানি জমে থাকে এবং চাষাবাদ সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পাভেল খান পাপ্পু জানান, অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে প্রতিবছর আবাদি জমির প্রায় এক থেকে দুই শতাংশ কমে যাচ্ছে। বছরে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ হেক্টর কৃষি জমি আবাদ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, যা সরাসরি ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছর পর কৃষি ফসল ফলানোর জন্য জমি খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়বে। কৃষি জমি রক্ষার্থে এখনই স্থায়ী ভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর শতবার অভিযান পরিচালনা করেছি এবং অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে তিনি স্বীকার করেন, অভিযান শেষে ব্যবসায়ীরা আবার নতুন পাইপ ও ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করে। ড্রেজারগুলো বিলের মাঝখানে থাকায় অপরাধীদের ধরা কঠিন। তিনি আরও বলেন, অবৈধ ড্রেজার স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য ড্রেজিংয়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকটেও প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। মোবাইল কোর্টের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তদের শতভাগ প্রতিকার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে বলা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত