
সাগরবেষ্টিত সন্দ্বীপের উত্তর-পশ্চিম অংশের এক সময়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া কাটগড় বাটাজোড়া, হুদ্রাখালী ও চর রহিম ইউনিয়ন নতুন চর জেগে ধীরে ধীরে চাষাবাদের উপযোগী হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সাগরের লোনা পানিতে ডুবে থাকা নতুন চরগুলোতে এবার কৃষকরা ধান চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করে সফলতার মুখে দেখেছে। সন্দ্বীপের চারদিকে নির্মাণাধীন ব্লক বেড়িবাঁধের বাহিরের অংশে নতুন চরগুলো বর্ষার মৌসুমে লোনা পানিতে ডুবে থাকা নতুন চরে এমন ফলন হবে তাহা কিন্তু কৃষকদের ধারণাই ছিল না। সাবেক কাটগড় বাটাজোড়া, হুদ্রাখালী ও চর রহিম ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটার মহোৎসব। সোনালি ধানে স্বপ্ন বুনছে কৃষক, বাড়ির আঙিনায় নতুন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত দিন পার করছে কৃষাণ-কৃষাণিরা। কৃষকদের মতে এবারের আমন ধানের ফলন তাদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে।
একদিকে ধান কাটা, আর অন্যদিকে ধান মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত তারা। আবহমানকাল থেকেই বছরের এই সময় অগ্রহায়ণ মাস এলেই নতুন ধান ঘরে তুলে বাংলার কৃষকেরা, আর সেই সঙ্গে শুরু হয় ঘরে ঘরে নবান্নের হাওয়া, নতুন সুগন্ধি ধান দিয়ে মেতে ওঠে পিঠে পায়েসের উৎসবে। তারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে সন্দ্বীপের হরিশপুর, কালাপানিয়া, সবুজ চর ও দীর্ঘাপাড় ইউনিয়নগুলোতে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে নেওয়া তথ্য মতে, আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ নিয়ে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছে শ্রমিক ও কৃষকেরা। খেতে কেউ ধান কাটছে আবার কেউবা ধানের আঁটি বাঁধছে। আবার কেউ ধানের আঁটি মাথায় নিয়ে উঠোনে তুলছে। ধান মাড়াই করে শুকিয়ে নিচ্ছেন কৃষাণিরা কিন্তু তাদের চোখে মনে নেই কোন ক্লান্তি, সবার চোখে মুখেই প্রশান্তির ছবি স্পষ্ট ফুটে উঠেছে, যেন নতুন ধানে নতুন স্বপ্ন হাতছানি দিচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মারুফ হোসেন জানান জানান যে, চলতি বছরে সন্দ্বীপ উপজেলায় পৌরসভাসহ ১৫টি ইউনিয়নে আমন ও রাজাশাইল চাষের লক্ষমাত্র ছিল প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর যদিও বাস্তবে প্রায় ২৩৫৩০ হেক্টরের বেশি জমিতে চাষ হয়েছে যার প্রতি হেক্টরে প্রায় ২.৫০ টন ফলন পাওয়া যাবে আশা করা যাচ্ছে। যা গত বছরগুলোর তুলনায় বেশি। এ ছাড়া স্বর্ণদ্বীপের জাহাইজ্জা চরে তরমুজ, মরিচ, বাদামসহ বিভিন্ন রবি ফসলের চাষও শুরু হয়েছে। ধান কাটার পর এসব জমিতে কৃষি অফিসের উদ্যোগে কৃষি প্রণোদনা ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির আওতায় ডাল ও সরিষাসহ বিভিন্ন রবি ফসল রোপণের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।
এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। ভালো ফলনে কৃষকের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটেছে। হাটে-বাজারে আমন ধানের দাম ভালো হওয়ায়, হিসাব কষে এবার লাভের কথাই ভাবছে এলাকার চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিসার আরও জানান যে, উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারের আমন ধান সংগ্রহে এ বছর ৩৩ টাকা প্রতি কেজি ধান কেনার জন্য প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। খাদ্য অফিস থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেলে কৃষি অফিসের মাধ্যমে প্রত্যেক কৃষকদের জানিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি সরকারকে জানাব, যেন এই উপজেলায় ধান ক্রয় বৃদ্ধ করা হয় এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকেও আমরা অনুরোধ জানাব যেন কৃষকরা যেন বাজারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে যেন ধানের ন্যায্য মূল্য পায়।