
রাতে ঘরের শোয়ার চৌকি, দিনে কোন এক গাছে প্রতিদিন বেঁধে রাখতে হয় মানসিক ভারসাম্যহীন শিশুটি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামের শান্তর কথা। কয়েকজন চিকিৎসার জন্য হাত বাড়ালেও পরে আবার চলে যান অনেক দূরে। কুষ্টিয়ার মিরপুরে পায়ে শিকলবন্দি প্রতিবন্ধী শান্ত (১৪) নামে এক শিশুর চিকিৎসার ভার নেওয়ার আশ্বাস দিলেন নবাগত জেলা প্রশাসক মো. ইকবাল হোসেন। গতকাল বুধবার দুপুরের দিকে মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান শিশুটির বাড়িতে পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। শিকলবন্দি প্রতিবন্ধী শিশুটি ওই গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে শান্ত। তার বাবা জসিম উদ্দিন বলেন শান্ত জন্ম গ্রহণ করেন ২০১১ সালে। শান্তর বয়স যখন সাড়ে ৩ বছর তখন তিনি জমিতে চাষ শেষে বাড়িতে এসে দেখেন শান্ত গরুর গোবর, কলাগাছের বাইগো, কাঁচা ফুলকপি, নিজের মলত্যাগের পর মলত্যাগ, সাবান, হুইল পাউডার, ইত্যাদিসহ ছিল এগুলোর তার মূল খাবার। তার মাথায় সমস্যা দেখা দিলে বিষয়টি দেখে তিনি রাজশাহীর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডা. পারভেজের কাছে নিয়ে যান। তিনি ওই শিশুটিকে পাঁচ বছর ধরে তার কাছে চিকিৎসা করার পরামর্শ দেন। এরপর কিছুদিন শিশুটি সুস্থ হলে তিনি পরের জমিতে চাষাবাদে দিনমজুরী হওয়ায় তার একার পক্ষে ঔষুধ কেনার মতো টাকা ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে শিশুটির নিয়মিত ঔষুধ দেওয়া বন্ধ করে দেন। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে পুনরায় শিশু আবারও আগের মতো চলাফেরা করতে শুরু করলে ২০১৮ সালে পুনরায় আবারও তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। ঐ চিকিৎসক আগের চিকিৎসকের মত পরামর্শ দেন এবং স্থায়ীভাবে পাঁচ বছর ধরে ঔষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন মহামারী করোনার মধ্যে কিছু গণমাধ্যমকর্মীরা তার ছেলের ফুটেজ ধারন করেন। পরে সেটি ভাইরাল হলে সাবেক পুলিশ সুপার তানভির আরাফাতের নজরে আসে। এরপর তিনি নিজ দায়িত্বে শিশুটির খরচ চালাতে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি বরিশাল জেলায় বদলী হলে তার ছেলে চিকিৎসা ২০২০ সাল থেকে আবারও বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর প্রশাসনিক কর্মকর্তার মাধ্যমে তার ছেলেকে একটি প্রতিবন্ধি ভাতার ব্যবস্থা করেন দেন। যা প্রতি ৩ মাস পর পর ২ হাজার ৬০০ টাকা পেয়ে থাকেন। কিন্তু সে টাকা ছেলের জামা কাপড়সহ সেবা যত্নে ব্যয় হয়ে যায়। পরে তার চিকিৎসা আর হয় না। তার প্রতিদিন ওষুধ খরচ ১০০ থেকে ২০০ টাকার বেশি। বর্তমানে তার পরিবারের সংখ্যা পাঁচজন। আয়ের একমাত্র ভরসা হল তিনি। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি আরও বলেন তার শিশু সন্তান একমাত্র টাকার অভাবে দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে। তাই শিশুটির পাশে থেকে সহযোগিতা করার আবেদন জানান।
এ বিষয়ে মিরপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, শিশুটি বহুদিন ধরে মাথায় সমস্যা থাকার কারণে অসুস্থ অবস্থায় পরিবারের স্বজনেরা তাকে শিকল দিয়ে গাছে বেঁধে রেখেছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক মো. ইকবাল হোসেনের নজরে আসলে তিনি শিশুটি দেখতে বাড়িতে যান। তিনি যতটুকু পারেন ঐ শিশুটির চিকিৎসার খরচ দিবেন বলে জানান।