
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর বাজার ও কোরাইশমুন্সী বাজার এলাকার বাসিন্দাদের টানাহেঁচড়ার কারণে স্থান নির্ধারণ জটিলতায় সরকারি বরাদ্দ পেয়েও দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করা যাচ্ছে না। এতে করে ভাড়া ঘরে চলছে নাগরিক সেবা প্রদানসহ ইউপি কার্যক্রম। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ইউনিয়নবাসীর। ১৭টি গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত রাজাপুর ইউনিয়নের বর্তমান জনসংখ্যা ৬১ হাজার ৩৬২। স্থায়ী ভবন না থাকায় ভাড়া ভবনে পরিষদের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ইউনিয়নে ‘যখন যিনি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তখন তিনি তার পছন্দের জায়গায় অস্থায়ী কার্যালয় বসিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৬৫ সালে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল হায়দার চৌধুরী রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি একতলা পাকাণ্ডভবন নির্মাণ করেন। সেখানেই চলত পরিষদের কার্যক্রম। ১৯৭২ সালের পর সেই ভবনটি আর ব্যবহার করা হয়নি। বর্তমানে ভবনটি পরিত্যক্ত ও ব্যবহারের অনুপযোগী। ভবনের দরজা-জানালা ও এমনকি ছাদও নষ্ট হয়ে গেছে। সংস্কারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ভবনটি। তাছাড়া যে স্থানে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে, সেটি ওয়াকফ সম্পত্তি বলে একটি পক্ষ দাবি করেন। তারা জানান বর্তমানে ওই সম্পত্তি নিয়ে একাধিক মামলা চলছে। সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে রাজাপুর বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে একটি ভবনের দোতলায় পাঁচটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে পরিষদের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতি কক্ষের ভাড়া ৫০০ টাকা করে। ইউপির ভাড়া ভবনে সরকারি বরাদ্দকৃত ভিজিডি ও ভিজিএফসহ কোনো ধরনের সহায়তার মালামাল ‘রাখার গুদাম নেই।
ইউপির একাধিক বাসিন্দা জানান, ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী নির্দিষ্ট কোনো কার্যালয় না থাকায় এলাকার লোকজনকে নাগরিক সেবা গ্রহণে চরম কষ্ট পেতে হয়। ভিজিডি বা ভিজিএফের চালের জন্য পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম ঢেউলিয়া এবং সেনবাগের সীমান্তবর্তী গ্রাম মেহেদীপুর ও সমাসপুর থেকে যেতে হয় ৮ কিলোমিটার দূরের রাজাপুর বাজারে। এতে লোকজনকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বর্তমান ভাড়া করা কার্যালয়ে পল্লী আদালত পরিচালনার জন্য স্থান সংকুলান হয় না। সরকারি নীতি অনুযায়ী ইউপি ভবনের জন্য ২৫ শতক জমি দরকার। ওই ২৫ শতক জমি এলাকাবাসীকে দান করতে হবে। কোরাইশমুন্সি বাজার সংলগ্ন আশপাশের এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান, অলি আহম্মদ চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম কানন, কৌব্বাত হোসেন খোকনসহ একাধিক ব্যাক্তি জানান কৌরশমুন্সি বাজার সংলগ্ন ২৬ শতক ভূমি ইউনিয়ন বোর্ড অফিস নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে দলিল রেজিস্ট্রি ও জমাখারিজ খতিয়ান সৃজন করা আছে। যাহা দাগনভূঞা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ১২/০১/২০২১ইং তারিখের ১৬১নং ছাপকবলা দলিল ও যাহার জমাখারিজ খতিয়ান নং : ১৫৭০।
তাদের দাবি, ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইউনিয়ন অস্থায়ী বোর্ড অফিস কোরাইশমুন্সী বাজারে ছিল এবং উক্ত অফিস থেকে ইউনিয়নের সব অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালিত হত। বিগত সময়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বেশির ভাগই কোরাইশমুন্সী বাজারে ইউপি অস্থায়ী কার্যালয়ে বসে নাগরিক সেবা প্রদান করত। এছাড়াও কৃষি ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য ছোট বড় সরকারি-বেসরকারি অফিস কোরাইশমুন্সি বাজারে রয়েছে। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১-৬নং ওয়ার্ড এর জনগণ কোরাইশমুন্সী বাজারমুখী তথা উক্ত বাজার থেকে তাহাদের দৈনন্দিন বাজার সদাইসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় কার্য নির্বাহ করিয়া থাকেন। ইউনিয়নের ৭০ শতাংশ জনগণ কোরাইশমুন্সি বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত।
এছাড়া ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পুলিশ ফাঁড়ি, পল্লী বিদ্যুৎ এর সাব-স্টেশন কোরাইশমুন্সী বাজার কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে। ২০২৪ এর ভয়াবহ বন্যাকালীন সময় কোরাইশমুন্সী বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকা বন্যা মুক্ত ছিল।
তাই রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী কার্যালয় কোরাইশমুন্সী বাজারের আশপাশে হলে ইউনিয়নের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকদের সুবিধা হবে। এছাড়াও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় নাগরিকদের জন্য সুবিধা হবে।
ইউনিয়নের প্রবীণ বাসিন্দা আবুল হাশেম ও রফিকুল ইসলামসহ আরও অনেকে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে রাজাপুর ইউনিয়নের স্থায়ী কার্যালয় না থাকায় ভাড়া ঘরে কার্যক্রম চলছে। এতে নাগরিকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুততম সময়ে রাজাপুর ইউনিয়নের স্থায়ী কার্যালয় নির্মিত হউক।