
বরগুনা-তালতলী-পাথরঘাটা উপকূলীয় অঞ্চলে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড, নদী দখল-দূষণ এবং জলজসম্পদ নষ্টের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত হয়েছে জনসমাবেশ।
গতকাল শনিবার লতাকাটা ফুটবল মাঠ প্রাঙ্গণে ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’ বরগুনা শাখা, কৃষক সমন্বয় পরিষদ, লতাকাটা জেলে সমিতি এবং একতা ক্লাবের আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন ধরা বরগুনা শাখার আহ্বায়ক ড. আজমেরী বেগম। প্রধান অতিথি ছিলেন, ধরা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব শরীফ জামিল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বরগুনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হুমায়ূন হাসান শাহিন, জামায়াতে ইসলামী বরগুনা জেলা শাখার সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান আল মামুন, ইসলামী আন্দোলন বরগুনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুশ শাকুর, ধরা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফয়সাল আহমেদ ও নুর আলম শেখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ধরা বরগুনা শাখার সদস্য সচিব মুশফিক আরিফ। সমাবেশে বক্তারা বলেন- পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর ও আন্ধারমান নদী দখল, দূষণ এবং খনন কার্যক্রম অবহেলার কারণে দ্রুত নষ্ট হচ্ছে উপকূলীয় পরিবেশ। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় জেলেদের নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, মাছের প্রজনন বিঘ্নিত হয়ে কমে যাচ্ছে ইলিশসহ নানা দেশীয় প্রজাতি। বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানার বর্জ্যে নদী দূষিত হচ্ছে, মরছে জলজ প্রাণী, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক।
বক্তারা অভিযোগ করেন, সমুদ্র উপকূলের জেলেদের একটি বড় অংশ এখনও জেলে কার্ড পাননি। এতে তারা সরকারি সহায়তা ও সামাজিক সুরক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। কোথাও কোথাও দেখা যায় পকেট জাল, বেহুন্দি জাল, খুঁটা জালসহ অনিয়ন্ত্রিত জাল ব্যবহার; যা মাছের বংশবৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে। এ অবস্থায় তারা জাল নিষিদ্ধকরণ, নদী পুনরুদ্ধার, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানান। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘উন্নয়ন মানুষের জীবন ও প্রকৃতিকে ধ্বংস করে হতে পারে না। যে উন্নয়নে কৃষকের জমি নষ্ট হয়, মাছ মরে, নদী ভরাট হয়, সেই উন্নয়ন কখনও টেকসই নয়।’ তারা উপকূলীয় অঞ্চলের প্যারাবন রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ, নদীতে যেখানে-সেখানে জাহাজ নোঙর বন্ধ এবং সব সহযোগিতা ন্যায্যভাবে বণ্টনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন।
সমাবেশে আরও বলা হয়, জেলে ও প্রান্তিক কৃষকের ন্যায্য দাবি মেনে চললে উন্নয়ন সত্যিকার অর্থেই সুষম হবে। পরিবেশ রক্ষা মানে উপকূলের মানুষের জীবন রক্ষা- এই সত্যকে ভিত্তি করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। জনসমাবেশ শেষে একই মঞ্চে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।