
হেমন্তের শিশির ভেজা মাঠে এখন সবুজের সমারোহ। দিগন্তজোড়া মুলাখেতে বাম্পার ফলন দেখে হাসি ফুটেছে চান্দিনা পৌর ব্লকের তুলাতলী গ্রামের কৃষক রমজান আলীর মুখে। কঠোর পরিশ্রম আর আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের সমন্বয়ে তিনি মুলা চাষে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, তা স্থানীয় কৃষির চিত্র পাল্টে দেওয়ার ইঙ্গিত বহন করে।
রমজান আলী একসময় গতানুগতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতেন। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহায়তা তাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। চান্দিনা পৌর ব্লকের কৃষি অফিসের সহযোগিতায় তিনি তার ৫৪ শতক জমিতে মুলা চাষের উদ্যোগ নেন।
উন্নত জাতের বীজ নির্বাচন, বিজ্ঞানসম্মত সার ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনা এবং নিয়মিত মাঠ পরিদর্শনের মাধ্যমে কৃষি কর্মকর্তারা তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা প্রদান করেন।
রমজান আলী জানান, মুলা একটি স্বল্পমেয়াদি ফসল হওয়ায় এর ঝুঁকিও কম। সঠিক সময়ে জমি প্রস্তুত করা, প্রয়োজনীয় জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ এবং নিবিড় পরিচর্যার ওপর এর ফলন নির্ভর করে। তিনি তার ৫৪ শতক জমিতে মুলা চাষের জন্য মোট চল্লিশ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। এই খরচের মধ্যে ছিল জমি তৈরি, বীজ কেনা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, সেচ এবং শ্রমিকদের মজুরি। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করায় ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ ছিল তুলনামূলকভাবে কম, যা উৎপাদন খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। বীজ বপনের পর থেকেই রমজান আলী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিটি ধাপ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অনুসরণ করেন। তার ফলন আসতে শুরু করে মাত্র ৪৫ দিনের মাথায়। ৪৫ দিনের মাথায় যখন মুলা তোলার সময় হয়, তখন দেখা যায় প্রতিটি মুলা লম্বায় ও ওজনে বেশ ভালো হয়েছে। মাঠের পর মাঠ মুলা দেখে স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা বেড়ে যায়।
ফলন তোলার পর তিনি স্থানীয় পাইকারদের কাছে মুলা বিক্রি শুরু করেন। মাত্র দেড় মাসের মধ্যে তার উৎপাদিত মুলা বিক্রি করে তিনি মোট ৯০ হাজার টাকা আয় করেন। অর্থাৎ, মোট খরচ ৪০ হাজার টাকা বাদ দিয়ে রমজান আলীর নিট মুনাফা দাঁড়ায় পঞ্চাশ হাজার টাকা। স্বল্প সময়ে এত বড় অঙ্কের মুনাফা অর্জন করে তিনি এখন এলাকার সফল কৃষক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে চান্দিনা পৌর ব্লকের কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রমজান আলীর মুলা চাষের এই মডেলটি অন্য কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সবসময় কৃষকদের পাশে রয়েছে এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর চাষাবাদে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। তারা মনে করেন, সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা পেলে অন্যান্য কৃষকরাও অল্প জমিতে স্বল্প সময়ে লাভজনক ফসল উৎপাদন করে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারবেন।
কৃষক রমজান আলীর এই সাফল্য শুধু তার ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক উন্নতিই ঘটায়নি, বরং প্রমাণ করেছে যে, সরকারি কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও কৃষকের সঠিক উদ্যোগের সমন্বয় ঘটলে কৃষিখাতে যেকোনো লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। তুলাতলী গ্রামের এই মুলা চাষের বাম্পার ফলন এখন চান্দিনার কৃষিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।