ঢাকা সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সিরামিকশিল্পে সংকট

ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিন
সিরামিকশিল্পে সংকট

বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্বমানের সিরামিকপণ্য তৈরি হচ্ছে। চাহিদা এত বেড়েছে যে, শহরের গণ্ডি পেরিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বিশ্বের ৫০টি দেশে সিরামিকপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করেই বিক্রি ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে গেছে। অনেক কোম্পানি প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গ্যাসসংকট নিরসনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিক্রেতারা বলছেন, তাদের বিক্রি কমে গেছে। সরকার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে সরকারি কাজও কমেছে। ডেভেলপার কোম্পানির কাজে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের সিরামিকশিল্পে। বিক্রি কমলেও কারখানার খরচ, গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল কমেনি। এ ছাড়া ডলারের ঊর্ধ্বগতির ফলে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, টাইলসের ৮৫ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে বর্তমান সরকারকে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

গত ১০ বছরে সিরামিকশিল্পের উৎপাদন ও বিনিয়োগ বেড়েছে ১৫০ শতাংশ। সিরামিকশিল্পের মন্দাভাব কাটানোর জন্য আগামী ২৭ নভেম্বর চার দিনব্যাপী সিরামিক এক্সপোর আয়োজন করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা বলেন, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে সিরামিকপণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ানো হবে। এতে রপ্তানিও বাড়বে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিরামিকপণ্য প্রসারের মাধ্যমে রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দেশে ৩৩টি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা আন্তর্জাতিক মানের টাইলস উৎপাদন করছে। আরও অনেক প্রতিষ্ঠান পাইপলাইনে আছে। বাংলাদেশ সিরামিকপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সিরামিকের মধ্যে টেবিলওয়্যার, টাইলস, স্যানিটারিওয়্যার এবং অন্য সিরামিকপণ্য খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে দেশে এবং বিদেশে চাহিদাও মেটাচ্ছে।

বর্তমানে সিরামিক কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪-এ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাইলসের কোম্পানি ৩১টি। এসব কোম্পানির বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। এ খাতে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছেন ৫২ হাজার ৪৯০ জন। এ ছাড়া পরোক্ষভাবে আরও সাড়ে ৪ লাখ লোক কাজ করছেন। সিরামিকপণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালিসহ ৫০টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এসব দেশে গত বছর প্রায় ৫৯২ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। সরকারকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্বও দিয়েছে।

গ্যাস, বিদ্যুৎ ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সিরামিক খাতের ব্যবসা অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। গত কয়েক বছরে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে প্রায় ১৭০ শতাংশের বেশি, যা এ শিল্পের বিকাশে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযুক্তি হালনাগাদ ও পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে। সিরামিকশিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে ব্যাংকঋণের সুদ কমানো জরুরি। সেই সঙ্গে আমদানি প্রক্রিয়ায় ডলার যাতে আরও সহজলভ্য হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। আশা করছি, সরকার সিরামিকশিল্পের সংকট দূরীকরণে এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সক্ষম হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত