ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মার্কিন শুল্কে টালমাটাল বিশ্ব

মার্কিন শুল্কে টালমাটাল বিশ্ব

সপ্তাহ খানেক আগে বিশ্বের প্রায় সব দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য প্রবেশের ওপর আরোপ করা সেই শুল্ক এরইমধ্যে কার্যকর হয়েছে। ফলে দেশটির আমদানি করা সব পণ্যের ওপর বাড়তি অর্থ আদায় শুরু করেছে মার্কিন প্রশাসন। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশে দেশে পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। রাতারাতি কোটি কোটি ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা। ট্রাম্প যেসব দেশের ওপর পাল্টা ‘সম্পূরক শুল্ক’ চাপিয়েছেন তার মধ্যে চীনের পণ্যে দেয়া ৩৪ শতাংশ শুল্কের বদলায় বেইজিংও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যে একই হারে শুল্ক বসিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়া দেশটির ওপর নতুন করে আরও ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। জবাবে চীন মার্কিন পণ্যে আরও ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ১০ এপ্রিল থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ১০৪ শতাংশ শুল্ককে নিপীড়ণমূলক আখ্যা দিয়ে তারা এই শুল্ক আরোপ করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতির দেশের পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপে অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই শুল্কনীতির জেরে ২০২৫ সালে বিশ্ববাণিজ্য প্রায় ১ শতাংশ কমতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে বাণিজ্যযুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়ছে। এরই মধ্যে শেয়ারবাজার, মুদ্রাবাজার ও স্বর্ণবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বাণিজ্য বিশ্লেষকরা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন।

এর জেরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমেছে। জ্বালানির তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম নেমে এসেছে ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে। অর্থাৎ তেলের দাম এখন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর সর্বনিম্ন। বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ চীন। ফলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৪ শতাংশের বেশি কমেছে- ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার্সের দাম ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল ৬০ দশমিক ৩৬ ডলারে নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে প্রতি ব্যারেল ৫৬ দশমিক ৯৬ ডলারে নেমে এসেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্কঝড়ে নীতি সুদহার কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক বাস্তবায়িত হওয়ার দিন থেকেই রেপো বা নীতি সুদহার কমাল রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। আজ সকালে রেপো হার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমানোর কথা ঘোষণা দিয়েছেন আরবিআইয়ের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা। ফলে রেপো হার ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াল ৬ শতাংশ।

এর আগে ৭ ফেব্রুয়ারি রেপো হার কমিয়েছিল আরবিআই। যে সুদের হারে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংককে আরবিআই ঋণ দেয়, সেটাই রেপো হার; এই রেপো হার কমলে এর সঙ্গে যুক্ত সব ঋণের সুদের হার কমে। ফলে ব্যাংক ঋণ নেয়া গ্রাহকরা স্বস্তি পায়। ঋণের মাসিক কিস্তির অঙ্ক কমে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া। এদের ওপর পাল্টা শুল্কের হার যথাক্রমে ১০৪ শতাংশ, ৪৬ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ। বৈশ্বিক ব্র্যান্ড অ্যাপল তাদের বেশিরভাগ হার্ডওয়্যার চীনে তৈরি করে। কিছু উৎপাদিত হয় ভারতে। বিখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএমও তাদের অধিকাংশ পোশাক চীন ও বাংলাদেশে তৈরি করে।

ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেং লুর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ব্র্যান্ড গ্যাপের পরিচালনায় থাকা ওল্ড নেভি, ব্যানানা রিপাবলিক ও অ্যাথলেটার প্রায় ২১ শতাংশ পোশাক ভিয়েতনাম থেকে রপ্তানি হয়। নাইকির প্রায় অর্ধেক ও অ্যাডিডাসের ৩৯ শতাংশ জুতা ভিয়েতনামে তৈরি হয়। এছাড়া বিখ্যাত ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ড স্যামসাংয়েরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পণ্য ভিয়েতনামে উৎপাদিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক ব্র্যান্ড নাইকি ও অ্যাপলের মতো অনেক ব্র্যান্ড নিজেদের পণ্য বিদেশে উৎপাদন করে। পাল্টা শুল্কের ফলে গত কয়েক দিনে তাদের শেয়ার মূল্য অনেকটা কমেছে। ফলে ব্র্যান্ডগুলো ভবিষ্যতে আরও ক্ষতির মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক চীন। দেশটি মঙ্গলবার বাণিজ্যবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে তারা বলেছে, চীন সব সময়ই চেষ্টা করেছে, মার্কিন-চীন বাণিজ্য যেন সব সময় উভয়ের জন্য লাভজনক হয়। শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পাল্টা শুল্কের বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে।

ট্রাম্পের এই শুল্ক বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। গত মঙ্গলবার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। প্রবৃদ্ধির এই হিসাব ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের আগে করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এডিবি। তবে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ের অর্থনীতিবিদ চন্দন সাপকোটা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক পুরোপুরি আরোপিত হলে প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর গড় মূল্যস্ফীতি হতে পারে ১০ দশমিক ২ শতাংশ।

এশিয়ার শেয়ার বাজারেও পতন হয়েছে। জাপানের নিক্কি এশিয়া সূচকের পতন হয়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যদিও গতকাল বুধবার এই সূচকের ৬ শতাংশ উত্থান হয়। তাইওয়ানের মূল্য সূচক টিডব্লিউআইআইয়ের পতন হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে চীনের ব্লু চিপস সূচকের পতন হয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ আর হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচকের পতন হয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ।

এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের সুদহার কিছুটা বেড়েছে। মূলত বিনিয়োগকারীরা অন্যান্য খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দীর্ঘমেয়াদি বন্ড বিক্রি করে দিচ্ছেন। সে কারণে বন্ডের সুদহার এভাবে বাড়ছে। সেই সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি বন্ডের সুদহারও বেড়েছে। শিগগিরই ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাবে- এই আশাবাদ থেকে বাজারে স্বল্পমেয়াদি বন্ডের সুদহার বেড়েছে।

ডলারের দরও পড়ে গেছে। এশিয়ার মুদ্রাবাজারে ইয়েন ও সুইস ফ্রাঁর মতো নিরাপদ মুদ্রাগুলোর দর ডলারের বিপরীতে বেড়েছে। ইয়েনের বিপরীতে ডলারের দরপতন হয়েছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ এবং সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। ওদিকে রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউজিল্যান্ড নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট হ্রাস করায় কিউই মুদ্রার দর ডলারের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। যদিও বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার দেশটির বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মার্কিন ডলার অবশ্য ভারতীয় মুদ্রার বিপরীতে শক্তিশালী হয়েছে। ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রার দর উঠেছে ৮৬ দশমিক ৫৬ রুপি। সোমবার যা ছিল ৮৫ দশমিক ৮৪ টাকা। ২০ মার্চের পর এই প্রথম ভারতীয় মুদ্রার দর ৮৬ রুপির ওপরে উঠল। গত দুই অধিবেশনে ভারতীয় মুদ্রার দর ডলারের তুলনায় ১.৩২ শতাংশীয় পয়েন্ট পড়েছে। চীনের মুদ্রা দুর্বল হওয়ার কারণেও ভারতীয় মুদ্রার ওপর প্রভাব পড়েছে।

বিশ্ববাজারে সকালে স্বর্ণের দাম বেড়েছে। এই ঘোর অনিশ্চয়তার সময় স্বর্ণের দাম বাড়বে, সেটাই স্বাভাবিক, যদিও ২ এপ্রিলের পর স্বর্ণের দামও পড়ে গিয়েছিল। গতকাল আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম আবার ৩ হাজার ডলার পেরিয়ে গেছে। আউন্সপ্রতি দাম বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৬৯ ডলার বা ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

কার্যকর হওয়া ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের আওতার বাইরে কিছু খাত রয়ে গেছে, যেমন ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টর। তবে তারাও বেশি দিন আওতার বাইরে থাকতে পারবে না। ভারতের এনডিটিভির সংবাদে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প শিগগিরই ওষুধ খাতে বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করতে পারেন। সেই শুল্কবাণে রীতিমতো ক্ষতবিক্ষত হতে পারে ভারতের ওষুধ শিল্প। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর সঙ্গে বিশ্বে যেন আবারও ফিরে এসেছে বাণিজ্যযুদ্ধ। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই বিভিন্ন পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্কারোপের ঘোষণা বিশ্বকে কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছে। এমন অবস্থায় শুল্ক নিয়ে ফের নতুন ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, শিগগিরই ওষুধ আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকা শিগগিরই ওষুধ আমদানির ওপর ‘বড়’ শুল্ক ঘোষণা করবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ন্যাশনাল রিপাবলিকান কংগ্রেসনাল কমিটির এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, এই শুল্ক ওষুধ কোম্পানিগুলোকে তাদের কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করতে উৎসাহিত করবে। অবশ্য ইতোপূর্বে ওষুধ এবং সেমিকন্ডাক্টরগুলোকে পারস্পরিক শুল্ক নীতির আওতা থেকে দূরে রেখেছিল ট্রাম্প প্রশাসন।

এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করায় বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিকই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, নতুন এই শুল্কনীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে পারে। রয়টার্স/ইপসোসের করা নতুন এক নতুন জরিপ থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। ওই জরিপে ১ হাজার ২৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিক অংশ নিয়েছেন।

তিন দিন ধরে চলা ওই জরিপটি গত রোববার শেষ হয়েছে। এতে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ বলেছেন, তারা মনে করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি কার্যকর হওয়ার পর আগামী ছয় মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। মাত্র ৪ শতাংশ বলছেন, তারা মনে করেন দাম কমবে। জরিপে অংশগ্রহণকারী অন্যদের কেউ কেউ মনে করেন কোনো ধরনের পরিবর্তন হবে না আবার কেউ কেউ প্রশ্নের উত্তর দেননি। গত সপ্তাহে ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক দশকের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড় ধরনের শুল্ক আরোপের ঘটনা। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই পদক্ষেপের কারণে দাম বেড়ে যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্বেই মন্দা দেখা দিতে পারে।

রয়টার্স/ইপসোসের জরিপে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৫৭ শতাংশ বলেছেন, তারা নতুন শুল্কের বিরোধিতা করছেন। এর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ উত্তরদাতাই ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক। প্রায় সব দেশের ওপরই শুল্ক আরোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রায় ৩৯ শতাংশ উত্তরদাতা নতুন শুল্ককে সমর্থন জানিয়েছেন। এর মধ্যে ৫২ শতাংশ বলেছেন, তারা ট্রাম্প প্রশাসনের এই যুক্তির সঙ্গে একমত যে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অন্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধা নিচ্ছে। ট্রাম্প প্রায়ই এই দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্য দেশের জন্য নতুন বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরির কারণ হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। তার মতে, অন্য দেশের জন্য বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতে প্রসার ঘটবে। ৪৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি নিয়ে মার্কিনিরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। উত্তরদাতাদের অর্ধেক বলছেন, তারা এই বিবৃতির সঙ্গে একমত যে দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তিশালী করার জন্য যে কোনো স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক সংকট মেনে নেয়া যায়। এই ৫০ শতাংশ উত্তরদাতার প্রায় সবাই রিপাবলিকান। বাকি অর্ধেক উত্তরদাতা (যারা সবাই ডেমোক্র্যাট) বলেছেন, তারা এই ধারনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখন অনেকটা উদীয়মান বাজারের মতো আচরণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপের শেয়ারবাজার পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউরোনেক্সট-এর প্রধান নির্বাহী স্টিফেন বৌজনাহ। গতকাল মঙ্গলবার ফ্রান্স ইন্টার রেডিওতে স্টিফেন বলেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের প্রভাবে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমেই উন্নত দেশের পরিবর্তে উদীয়মান বাজারে পরিণত হচ্ছে। স্টিফেন আরও বলেন, ‘চারিদিকে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে এখন চিনতেই কষ্ট হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে যেন শোক পালন করা হচ্ছে। আমরা যে যুক্তরাষ্ট্রকে চিনি একটি প্রভাবশালী জাতি হিসেবে, তাকে আজ চেনাই যাচ্ছে না। যে দেশ ইউরোপীয় মূল্যবোধ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, তারা এখন অনেকটা উদীয়মান বাজারের মতো হয়ে যাচ্ছে।’ গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন বলে মনে করেন ইউরোনেক্সট প্রধান। তিনি বলেন, ‘এই অস্থির সময়ে মানুষ কি সিদ্ধান্ত নেবে বুঝতে পারছে না। তাদের এই দুশ্চিন্তা অমূলক নয়। যে অস্থির ও উদ্বেগের পরিবেশ বিরাজ করছে তা পুরো বিশ্ববাজার ব্যবস্থায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আগানো কঠিন হয়ে পড়েছে। স্টিফেন আরও বলেন, বিশ্ববাজারে বিনিয়োগকারীরা এখন তাদের সম্পদ পুনর্বিন্যাস করছে এবং তারা এমন এক যুক্তরাষ্ট্রকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে যেটি তাদের অচেনা। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর বিশ্বব্যাপী শুল্ক ঘোষণার পর থেকে এমন অবস্থায় পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা এই শুল্ককে স্বীকৃতি দিতে চান না।’

যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর অন্তত ১০ শতাংশ এবং কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দেশের শিল্প ভিত্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করা যাবে বলে মনে করেন ট্রাম্প। তার দাবি, কয়েক দশকের বাণিজ্য উদারনীতির কারণে ধ্বংসের পথে গেছে মার্কিন শিল্প ভিত্তি। উদীয়মান বাজারগুলো প্রায়ই নিজস্ব শিল্প খাতকে সুরক্ষা দিতে শুল্ক খাতকে ব্যবহার করে, যতক্ষণ না তারা নিজেদের উৎপাদন ও প্রযুক্তি শক্তিশালী করতে পারে। স্টিফেন বলেন, তবে এর কিছু ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে। বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমেছে। কমেছে দীর্ঘমেয়াদি সুদের হারও। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে টাকা বেরিয়ে ইউরোপে পুনরায় বিনিয়োগ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের প্রস্তাব দিয়েছিল ইউরোপীয় কমিশন। এর একদিন পর গতকাল মঙ্গলবার দিনের শুরুতে ইউরোপীয় শেয়ারবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে দেখা যায়। গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বনিন্মে যাওয়ার পর টানা চার দিন ব্যাপক বিক্রির ধাক্কা সামলাতে সক্ষম হয় বাজার। তবে বিনিয়োগকারীরা এখনও শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে ভীত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত