রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে ৪৩ হাজার পৃষ্ঠার আবেদন করেও প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি নিবন্ধনের জন্য ৪৩ হাজার ৩১৬ পাতার ডকুমেন্টস জমা দিয়েছিল, তার পরও ইসির বাছায়ে ফেল করে দলটি। এনসিপি ছাড়াও ইসির বাছাইয়ে ক্রটির কারণে ১৪৪টি দলকে সংশোধনের সুযোগ দিচ্ছে ইসি। এসব দলকে ১৫ দিনের সময় দিয়ে চিঠি দিতে যাচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল মঙ্গলবার ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রথম ধাপে ৬২টি দলকে চিঠি দেওয়া হবে। পরবর্তী ধাপে অন্যান্য দলগুলোকেও চিঠি দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে ১৫ দিন সময়ের মধ্যে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, তা পূরণ করতে হবে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রাথমিক বাছাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) নিবন্ধন চাওয়া নতুন ১৪৪টি দলের কাগজপত্রে ত্রুটি রয়েছে। তবে দলগুলোর অসম্পূর্ণ কাগজপত্র পূরণ করে ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে, নিবন্ধন শর্ত পূরণ করতে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন, ট্রাকে করে সেগুলো নির্বাচন ভবনে জমা দিয়েছিল এনসিপি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি দলটি। ফলে এনসিপিসহ বাকি দলগুলোকে ১৫ দিন সময় দিয়ে ঘাটতি পূরণে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে যে শর্ত পূরণ করতে হয়, তার জন্য যত কাগজপত্র প্রয়োজন তা ট্রাকে করে নিয়ে এসে ইসিতে জমা দিয়েছি। আমাদের প্রতিনিধি দল ভেতরে গিয়ে আবেদনের মূল কাগজপত্র জমা দিয়েছে।
নতুন দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ইসির শর্তগুলো হলো- ১. দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে।
২. কার্যকর কমিটি থাকতে হবে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায়। ৩. সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা কিংবা মেট্রোপলিটন থানার কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনের নথি দেখাতে হবে। ৪. দলীয় প্যাডে দরখাস্তের সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনি ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো ও দলীয় পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের নামের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সর্বশেষ স্থিতি জমা দিতে হবে।
আবেদন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন তা যাচাই-বাছাই শুরু করবে। নিবন্ধন শর্ত পূরণ করতে পারলে দলীয় প্রতীকসহ নিবন্ধন সনদ দেওয়া হবে। বর্তমানে বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি।
জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনপ্রত্যাশী দলগুলোকে আবেদন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বেশকিছু দল আবেদন করলে ২২ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ায় সংস্থাটি। ওই সময় পর্যন্ত ১৪৪টি দল ১৪৭টি আবেদন করে।
ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দলগুলোর মধ্যে কোনোটিই প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তাই প্রথম ধাপে ৬২টি দলকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আর এনসিপিসহ ৮২টি দলকে দ্বিতীয় ধাপে চিঠি দেওয়া হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচ দেশে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে ইসি। গতকাল মঙ্গলবার ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এস এম হুমায়ুন কবীর এই তথ্য জানান। হুমায়ুন কবীর বলেন, নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচ দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার জন্য আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সম্মতি পেয়েছি। সম্মতি পাওয়ার পর ওই দেশগুলোয় এই কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রাথমিক যে পদক্ষেপগুলো রয়েছে, সেগুলো এরই মধ্যে আমরা শুরু করেছি। এ জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে। আমাদের জনবল ও প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া আমাদের প্রয়োজনীয় জনবল নির্ধারণ করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এই কাজগুলো এখন আমরা পর্যায়ক্রমে শুরু করছি।
হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, আমরা আগে আপনাদের জানিয়েছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে শুধু লস অ্যাঞ্জেলেসের অনুমতি পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্কসহ আমাদের যেখানে অফিস আছে, সেখানে আমরা ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি পেয়েছি। এতে নিউইয়র্কবাসীদের (প্রবাসী) সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল। সেখানেই সবচেয়ে বেশি বাঙালি বসবাস করেন।
হুমায়ুন কবীর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আমরা ওমান, মালদ্বীপ, জর্ডান ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি পেয়েছি।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের ডিজি জানান, এখন পর্যন্ত ৯টি দেশে মোট ৪৮ হাজার ৮০ প্রবাসী ভোটারের আবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মিশন অফিস ২৯ হাজার ৬৪৬ জনের বায়োমেট্রিক গ্রহণ করেছে এবং ১৭ হাজার ৩৬৭ জনকে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রসহ পাঁচ দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতি পায় ইসি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শাকেরা আহমেদ স্বাক্ষরিত ইসিকে দেওয়া সম্মতি প্রদানসংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, এ বিষয়ে পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র (লস অ্যাঞ্জেলেস), মালদ্বীপ, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওমানে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম চালু করার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।