ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ফের রাজপথে সক্রিয় হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

এবার বিভাগীয় সমাবেশ ও আসনভিত্তিক পদযাত্রা

এবার বিভাগীয় সমাবেশ ও আসনভিত্তিক পদযাত্রা

ফের রাজপথে সক্রিয় হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে তিন মাসব্যাপী ধারাবাহিক কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে দলটি। দ্রুত সংস্কার, লন্ডন বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন, যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন ও সেজন্য দ্রুত তফসিল ঘোষণা এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদসহ নানা দাবিতে দলটি আবারও রাজপথে সক্রিয় হবে। এ লক্ষ্যে রোডমার্চ, বিভাগীয় সমাবেশ, আসনভিত্তিক পদযাত্রার মতো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংগঠনিক সভায় এই কর্মসূচির রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে নেতারা উসকানিমূলক বা আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক বক্তব্যগুলোকে আমলে না নেওয়ার পরামর্শও দেন।

সূত্রমতে, সাংগঠনিক সভায় আগামী দিনে করণীয় এবং কীভাবে আগামী তিন মাস মাঠে কর্মকাণ্ড রাখা যায় তা নিয়ে নেতারা মতামত দেন। বেশির ভাগ নেতাই মত দেন-পদযাত্রা, রোডমার্চ, বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়েও সমাবেশ করার জন্যও কেউ কেউ বলেছেন। নেতাদের মতে, এসব কর্মসূচির লক্ষ্য হবে জনগণকে নির্বাচনমুখী করা। জনগণকে সম্পৃক্ত করে কেন নির্বাচন দরকার সে বিষয়ে বোঝানো। তবে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের কর্মসূচিকেও ব্যাপকভাবে মাঠপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও মত দেন কয়েকজন। এছাড়া ৩১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব জনগণের মাঝে আরও ব্যাপকভাবে তুলে ধরার বিষয়েও সভায় নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে।

সভায় নেতারা বলেন, বিএনপির মূল টার্গেট হচ্ছে যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন এবং সেজন্য দ্রুত তফসিল। লন্ডন বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন চায় বিএনপি। সভায় কর্মসূচির রূপরেখার বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়, প্রতিটি আসনে একাধিক নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে যেন কোনো দ্বন্দ্ব বা গ্রুপিং না হয়। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ঐক্যবদ্ধভাবে একই প্ল্যাটফর্ম থেকে দলের কর্মসূচি সফল করবেন। তা না হলে কারও বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই সভায় বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৈঠকে উপস্থিত একজন নেতা বলেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাদের মতামত শোনেন। সাধারণ মানুষ কী মনে করছে, নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা কী এবং এখন বিএনপির করণীয় কী-এসব বিষয়ে তারেক রহমানের জিজ্ঞাসার জবাব ও সুপারিশ তুলে ধরেন নেতারা। বেশির ভাগ নেতা মনে করেন, নির্বাচন নিয়ে তাদের সুস্পষ্ট কর্মসূচি থাকা উচিত। কারণ জনগণের মাঝে এত দিন নির্বাচন নিয়ে দোলাচল থাকলেও এখন সবাই অনুধাবন করছেন, অনির্বাচিত সরকার সঠিকভাবে দেশ চালাতে পারছে না।

সভায় নেতারা বলেন, একটি আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও যেন দলে কোনো গ্রুপিং বা দ্বন্দ্ব না তৈরি হয়। দলীয় কর্মসূচি সফল করতে সবাইকে একই প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। নেতাদের ভাষ্য, সংগঠনের ভেতরে যদি কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন বা কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন, তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সভার একাধিক নেতা জানান, বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। কিছু গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত। এ বিষয়ে সরকারও কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে এই পরিস্থিতি রুখতে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বড় দল হিসাবে একেকটি আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা রয়েছেন। কিছু কিছু এলাকায় এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বও আছে। এ বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এতে বলা হয়, আসনভিত্তিক পদযাত্রা কর্মসূচিসহ সামনের দিনে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হবে তা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সফল করবে। সেক্ষেত্রে দলে কোনো গ্রুপিং নেই-এই প্রত্যয়ে একসঙ্গে কাজ করবে। প্রস্তাবগুলো নিয়ে আবারও সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বৈঠক করার কথা রয়েছে। সেই বৈঠকে কর্মসূচিকে সুনির্দিষ্ট করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেওয়া হবে। পরে তা দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দিতে চায় না বিএনপি। এজন্যই সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে, সামনেও করবে। কিন্তু দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে অবনতি হচ্ছে। এ সুযোগে কেউ কেউ দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। সেক্ষেত্রে সরকারের কোনো কার্যকর ভূমিকাও দেখা যাচ্ছেন না। বিএনপি একটি দায়িত্বশীল দল হিসাবে তা হতে দিতে পারে না। এজন্য তিন মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, কোনো ধরনের সংঘাতের রাজনীতি চায় না বিএনপি। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করতে চায় তাদের বিষয়ে সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থক যথেষ্ট সজাগ। ভোটের দাবিতে আমরা দীর্ঘ ১৬ বছর রাজপথে আন্দোলন করে আসছি, এখনও আন্দোলনে আছি। এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকব। দল ও সংগঠন শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সবকিছু মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থে বিএনপি যা যা করার দরকার তাই-ই করবে।

বিভাগীয় সমাবেশ,আসনভিত্তিক পদযাত্রা,বিএনপি,সংস্কার,অন্তর্বর্তী সরকার
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত