ঢাকা শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

‘আমরা সবাই হাদি হব’

* সারাদেশে বিক্ষোভ, গায়েবানা জানাজা, মসজিদে দোয়া * শাহবাগে বিক্ষোভ, শিক্ষার্থী-জনতার ঢল * মসজিদে মসজিদে দোয়া * শাহবাগ মোড়কে ‘হাদি চত্বর’ ঘোষণা ডাকসু ভিপির * ঢাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল * ঢাবিতে ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধী মিছিল * বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ
‘আমরা সবাই হাদি হব’

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকেই শাহবাগ এলাকায় মানুষ জড়ো হয়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতি বাড়ে। শুক্রবার দুপুরে শাহবাগ মোড়ে শিক্ষার্থী-জনতার ঢল নামে।

বিক্ষোভের মধ্যেই শাহবাগ মোড়ে জুমার নামাজ আদায় করা হয়। নামাজ শেষে মোড়ের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ওসমান হাদি চত্বর’ ঘোষণা করা হয়। আন্দোলনের কারণে শাহবাগ মোড়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েমের ঘোষণায় শাহবাগে শুরু হয় আধিপত্যবাদবিরোধী সমাবেশ। মৎস্য ভবনমুখী সড়কে ডাকসু সদস্যরা একটি ট্রাকের ওপর অবস্থান নিয়ে নানা প্রতিবাদী স্লোগান দেন। পাশাপাশি জুলাই ভাস্কর্যের পাদদেশে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের সদস্যদেরও বিশাল অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এসময় আন্দোলনকারীদের ‘আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি ঘরে ঘরে’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি লড়াই করে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ অংশ নিয়েছেন। তারা হাদি হত্যার বিচার এবং ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান হয়।

বিক্ষোভকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে- হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ। এসময় ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা আমাদের ভাই হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়ব না। আমাদের এ অবরোধ কর্মসূচি চলমান থাকবে।’ তিনি হাদির হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন। ডাকসু নেতা এবি জুবায়ের বলেন, শহীদ শরিফ ওসমান হাদি কোনো সহিংসতার পথে বিশ্বাসী ছিলেন না। মেধা, মনন ও জ্ঞানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম গড়ে তোলাই ছিল তার আদর্শ। জুবায়ের আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের উসকানি বা সহিংসতায় না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণ ও সংগঠিতভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

হাদির আত্মার মাগফেরাত কামনায় মসজিদে মসজিদে দোয়া : ওসমান হাদির আত্মার মাগফেরাত কামনায় শুক্রবার মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের মোনাজাতে বিশেষ দোয়া করা হয়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর মসজিদগুলোতে দোয়া করা হয়। জুমার নামাজ শেষে মোনাজাতে মহান আল্লাহর কাছে ওসমান হাদির আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন খতিব ও ইমামরা। একই সঙ্গে আল্লাহ যাতে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণের শক্তি দেন- মোনাজাতে এই দোয়া করা হয়। রাজধানীর মাতুয়াইল দক্ষিণ পাড়াল চাঁনবানু (বাইতুল আমান) জামে মসজিদের ইমাম আজিজুর রহমান কাসেমী জুমার নামাজ শেষে মোনাজাতে বলেন, আল্লাহ যাতে ওসমান হাদির স্ত্রী, পিতা-মাতাসহ পরিবারের সদস্যদের এ শোক সইবার শক্তি দেন। সারাদেশে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা আয়োজনের অনুরোধ জানিয়েছিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

হাদি হত্যার বিচার দাবিতে ঢাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল : ওসমান হাদি হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঢাবি ছাত্রদল। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টা ৫০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি টিএসসি থেকে ভিসি চত্বর, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রধান ফটক এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ এলাকা প্রদক্ষিণ করে রোকেয়া হল সংলগ্ন বাস স্টপেজে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস এবং সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন। বক্তারা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় হত্যাকাণ্ডের পর সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারে ব্যর্থ হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে ছাত্রদল নেতারা বলেন, অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তারা দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।

শাহবাগ চত্বরে জুমার নামাজ, হাদির জন্য বিশেষ দোয়া : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীরা সেখানে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে ওসমান হাদিসহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। শুক্রবার শাহবাগ চত্বরে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে মোনাজাতে ইমাম বলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি আমাদের ওসমান হাদি ভাইকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। তার জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তিগুলো মাফ করে দিন। তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।’ এ সময় আবরার ফাহাদ, মুগ্ধ, আবু সাঈদসহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত সবার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। পাশাপাশি, আন্দোলনে আহত হয়ে যারা মানবেতর জীবন যাপন করছে, তাদের আরোগ্য কামনা করা হয়। মোনাজাতে বলা হয়, ‘হে আল্লাহ, তুমি দেখিয়ে দিলে, ফেরাউনদের তুমি ছাড় দাও কিন্তু ছেড়ে দাও না। তরুণদের মধ্যে তুমি এমন শক্তি দিয়েছ যে, তারা কোনো অন্যায়কে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দিতে প্রস্তুত নয়। এই তরুণরাই আগামীতে ইসলামের পতাকা সমুন্নত রাখবে।’

হাদির পথ ধরে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে- আবদুস সালাম : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেছেন, আমাদের ভাই হাদি রক্ত দিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু আপস করেননি। আমাদের সবাইকে হাদীর পথ ধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, আন্দোলন শেষ হয়ে যায়নি। বিপ্লব শেষ হয়ে যায়নি। চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আমাদের দেশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে হবে। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। আবদুস সালাম বলেন, আমাদের সংগ্রাম ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আধিপত্যবাদের পক্ষে যারাই কথা বলবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। এছাড়া দেশকে রক্ষা করতে পারব না। দেশকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, আজকে আমাদের যারা অন্য দৃষ্টিতে দেখছেন, তাদের বলব- বাংলাদেশকে হজম করতে যাইয়েন না। বাংলাদেশকে হজম করা এতো সহজ না। আমরা রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। রক্ত দিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদ তাড়িয়েছি। প্রয়োজনে এই সংগ্রাম আরও দীর্ঘায়িত করতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই আপসের ফর্মুলায় যাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, হাদিকে কারা হত্যা করেছে, এটা পরিষ্কার। কিন্তু আমি ধিক্কার জানাই এই সরকার ও পুলিশকে। একটা চিহ্নিত খুনি, যাদের আপনারা চেনেন এবং তার অতীত রেকর্ড আছে, তারপরও কেন এই খুনিকে গ্রেপ্তার করতে পারলেন না। এই ব্যর্থতা কার? হাদির খুনিকে গ্রেপ্তার করতে পারলেন না, এটা কি মেনে নেয়া যায়? ফ্যাসিবাদের দোসরা এখনো বিভিন্ন জায়গায় বসে থাকবে, এটা কখনো হতে পারে না। বিএনপির এ নেতা বলেন, ওসমান হাদি আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে একটি বিপ্লবের কথা চিন্তা করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ বারবার সংগ্রাম করেছে এবং জয়লাভ করেছে। কিন্তু জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি হয়তো পূরণ হয়নি। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আশার দিক এটাই যে- কেউ কখনও আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি।

সরকারের উদ্দেশে সালাম বলেন, আমরা বারবার বলেছি ৫ আগস্টের পরে, আপনারা স্বৈরাচারের ‘ভূতকে’ প্রশাসনে, সমাজের বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বে রেখে সফলভাবে দেশ পরিচালনা করবেন, সফলভাবে একটি নির্বাচন করবেন, তারা কখনোই সেটা হতে দেবে না। এখন তো উপদেষ্টারা কিছুটা বুঝতে পারছে। বিএনপি চেয়াপারসনের এ উপদেষ্টা বলেন, এই লড়াই কোনো সাধারণ লড়াই নয়। এই লড়াই আধিপত্যবাদের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার লড়াই। এখানে তাদেরও (আওয়ামী লীগ) স্বার্থ আছে। যেসব বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক বলছেন, আওয়ামী লীগের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে, তাদের কেন নির্বাচনে সুযোগ দেওয়া হবে না- তাদের আগে হাদির হত্যার জবাব দিতে হবে।

হাদি হত্যার দ্রুত বিচারের দাবি আখতার হোসেনের : জুলাই যোদ্ধা হাদি হত্যার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। হাদি হত্যার প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার রাতে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বেইলি ব্রিজ বাজার এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান। শরিফ ওসমান হাদি হত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জাতীয় নাগরিক কমিটির কাউনিয়া উপজেলা শাখা এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে আখতার হোসেন বলেন, শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বিচার নিশ্চিত না হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি অঙ্গীকার করেন যে জাতীয় নাগরিক পার্টি শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে থাকবে এবং বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

হাদি হত্যার প্রতিবাদে ঢাবিতে ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধী মিছিল : শহিদ শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধী মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে জাতীয় আজাদী আন্দোলন ব্যানারে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান। তিনি বলেন, হাদি কথা রেখেছে। হাদি শহীদী মৃত্যুকে বরণ করেছে। তিনি জুলাইকে বিক্রি হতে দেননি। ভারতীয় আধিপত্যবাদের কাছে তিনি মাথা নত করেননি। হাদির আদর্শ ধারণ করে আমাদের মাথা উঁচু করে চলতে হবে তাতেই তার আত্মা শান্তি পাবে। তিনি আরও বলেন, জুলাই ঐক্যের ব্যানারে আমরা ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও করতে গিয়েছিলাম, যাতে খুনি হাসিনাকে তারা ফেরত দেয়। হাদির ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তারা ভারতের আশ্রয়ে রয়েছে। তাদের ফেরত দিতে হবে। কিন্তু ভারতীয় সরকার বলেছে দূতাবাস ঘেরাও করতে আসা লোকজন চরমপন্থি। রাশেদ প্রধান আরও বলেন, হাদি একজন হতে পারে, কিন্তু আজ লাখো হাদি ঘরে ঘরে জন্ম নিয়েছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ আর মেনে নেওয়া হবে না। আমাদের লড়াই আজাদীর লড়াই।

এসময় সমাবেশে ‘ইনকিলাব ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’, ‘ফেলানী থেকে হাদি- আজাদী, আজাদী’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।

হাদি হত্যার প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদের বিক্ষোভ : হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণঅধিকার পরিষদ। বিক্ষোভ চলাকালে তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। শুক্রবার সংগঠনটির নেতাকর্মীরা পল্টন মোড়ে জড়ো হয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা শাহবাগ অভিমুখে যান। বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। সমাবেশে বক্তারা বলেন, হাদি ছিলেন স্পষ্টভাষী। জুলাইয়ের পর হাদি তার কণ্ঠস্বর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জারি রেখে ছিলেন। অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেনি ওসমান হাদি। তাকে হত্যার সঙ্গে জড়িত সব আসামিকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।

হাদি হত্যার প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ : ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করে বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস। বিক্ষোভের শুরুতে স্লোগান দিতে থাকেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। স্লোগানে বলেন, ‘আমি কে তুমি হাদি হাদি’ ‘আমার সোনার বাংলায় খুনি লীগের ঠাঁই নাই’, ‘ফ্যাসিবাদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’ ‘আমরা সবাই হাদি হবো যুগে যুগে লড়ে যাব’।

ওসমান হাদি হত্যার প্রতিবাদে জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বিক্ষোভ মিছিল ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসব কর্মসূচি পালন করেন। এসময় তারা ফ্যাসিবাদ ও বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে ১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিল চলাকালে শিক্ষার্থীরা হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি ও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা বলেন, রাজনৈতিক পুনর্বাসনের নামে কোন সহিংসতা ও দমন-পীড়ন ছাত্রসমাজ আর মেনে নেবে না। এই লড়াই বহুমাত্রিক। তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসনিক প্রভাব ও প্রক্সি রাজনীতির মাধ্যমে অন্যায়কে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। নেতারা আরও বলেন, গত ১৫ বছর ধরে বিদেশি মদদপুষ্ট রাজনৈতিক নিপীড়নের মাধ্যমে অনেক তরুণকে প্রাণ দিতে হয়েছে। শরীফ ওসমান হাদি ও অন্য শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের ঐক্য অটুট থাকা পর্যন্ত শরিফ ওসমান হাদির আদর্শ ও উদ্দেশ্য এই আন্দোলনকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাবে। জাকসু’র সাহিত্য সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বাপ্পির সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক (ছাত্রী) আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা এবং জাবি ছাত্র শক্তির সভাপতি জিয়া উদ্দিন আয়ানসহ অন্যান্য নেতারা।

প্রসঙ্গত, গতকাল জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদ হাদির রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে শাহবাগে এসে সমাবেশে যোগ দেন। গত ১২ ডিসেম্বর রিকশা আরোহী হাদি মোটরসাইকেলে থাকা দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ওই দিন রাতেই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা দোয়া ও বিক্ষোভ করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত